বিগত দুই দশক ধরে তুরস্ক শাসন করছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। আসছে ১৪ মে দেশটির পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। সম্প্রতি নিজেই নির্বাচনের এ তারিখ ঘোষণা করেছেন ৬৮ বছর বয়সি এই নেতা। যদিও সংবিধান অনুযায়ী দেশটির নির্বাচন হওয়ার কথা ১৮ জুন। গত ৬ ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড হয়েছে দেশটি। স্বাভাবিক কারণেই নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে তুরস্কের গণমাধ্যম খবর দিয়েছে যে, পূর্বে নির্ধারিত তারিখেই অর্থাৎ ১৪ মে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনড় প্রেসিডেন্ট এরদোগান। বুধবার ক্ষমতাসীন দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে পার্টি) বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডেইলি সাবাহ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে গত দুই সপ্তাহ ধরে নির্বাচন ইস্যুতে কথা বলেননি প্রেসিডেন্ট এরদোগান। তবে বুধবার একে পার্টির সিনিয়র সদস্যরা দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার বৈঠক করেছেন। যেখানে প্রেসিডেন্ট এরদোগান উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে দলের নেতারা পূর্ব ঘোষিত তারিখেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। একে পার্টির ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে— সাম্প্রতিক ভয়াবহ ভূমিকম্পে ১১ প্রদেশ বিধ্বস্ত এবং ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেলেও পূর্বে ঘোষিত নির্বাচনি সময়সূচি মেনে চলার পরিকল্পনা করছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। গত ৬ ফেব্রুয়ারি দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ওই ভূমিকম্প। এতে ভেঙে পড়েছে ৮৪ হাজারের বেশি ভবন। সব মিলিয়ে এক কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বসতি হারিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে দিন কাটছে অসংখ্য মানুষের। এমন পরিস্থিতিতেও নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর ক্ষমতাসীন দল। এখন প্রশ্ন হলো— কেন তুর্কি নেতা ১৪ মে নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড়? কেনইবা তিনি নির্ধারিত সময়ের এক মাস (৩৪ দিন) আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেন? এমনকি ভয়াবহ ভূমিকম্পে যখন বিধ্বস্ত দেশ, তখনো কেন নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড় একে পার্টি? নির্বাচন আগানোর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে ডেইলি সাবাহ জানিয়েছে, দেশটিতে স্কুল সেমিস্টারের শেষ, হজের জন্য এক লাখ মানুষের দেশত্যাগ, হাইস্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা এবং সেই সঙ্গে কুরবান বায়রাম বা কুরবানির ঈদ তথা ঈদুল আজহাসহ অন্য আরও কিছু কারণে নির্বাচন মাসখানেক এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে মিডেল ইস্ট আইয়ের তথ্য বলছে ভিন্নকথা। এক প্রতিবেদনে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, এরদোগান তার ২০ বছরের শাসনামলে এবারের নির্বাচনেই সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। নানামুখী চ্যালেঞ্জ উতরে এ নির্বাচনেই ইতিহাস সৃষ্টি করতে চান তুর্কি নেতা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ১৯৫০ সালের ১৪ মে তুরস্কে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে রিপাবলিকান পিপলস পার্টি তথা সিএইচপির বিরুদ্ধে ভূমিধস বিজয় লাভ করে তৎকালীন ডিপি তথা ডেমোক্রেটিক পার্টি। সিএইচপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আধুনিক তুরস্কের জনকখ্যাত মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক। ১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৫০ সালের নির্বাচনে হারার পূর্ব পর্যন্ত টানা তুরস্ক শাসন করেছে দলটি। দীর্ঘ সময় ধরে একদলীয় অপশাসনের অবসান ঘটাতে তাই ডেমোক্র্যাট পার্টিকে বিজয়ী করেছিল তুরস্কের জনগণ। আজকে তুরস্কের যে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি বা একে পার্টি, তার শিকড় লুকিয়ে আছে সেই ডেমোক্র্যাট পার্টিতে। এমনকি দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোগানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শুরুও সেখানেই। আসন্ন নির্বাচনে এরদোগানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছেন সেই সিএইচপির নেতা কামাল কিলিচদারোগ্লু। এরদোগানকে হটাতে তাকে সামনে রেখে টেবিল অব সিক্স বা ন্যাশনাল অ্যালয়েন্স নামে ৬ দলের একটি জোট গঠন করেছে বিরোধীরা। এদিকে চলতি বছরই (২০২৩) আধুনিক তুরস্ক প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঐতিহাসিক এ মুহূর্তে সিএইচপি-কে আরেকবার পরাজিত করার মাধ্যমে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চান এরদোগান।