প্রেমের নবী প্রেমিক স্বামী মুহাম্মাদ সা.

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪ | ৫:৫৯ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

‘তোমাদের ভেতর সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে তার স্ত্রীর কাছে শ্রেষ্ঠ। আর আমি আমার স্ত্রীদের কাছে তোমাদের থেকেও শ্রেষ্ঠ।’- ইবনে মাজা। আদিতে আহাদ, আর অন্তেও আহমাদ। আদি আহাদ প্রেমের কারণেই সৃষ্টি করলেন মানুষসহ কুল মাখলুকাত। আর আহাদ অন্তে আহমাদ হয়ে প্রেম খেলায় মেতে উঠলেন দীর্ঘ তেষট্টি বছর। আবার সেই আহমাদের প্রেমে পড়লেন আহাদ। তখন আহমাদ হয়ে গেলেন- মুহাম্মাদ সা.। তাই আহমাদ গুহায় নির্জনতায়, যুদ্ধে সন্ধিতে, অর্থনীতি-রাজনীতিতে ও নবুয়ত-রিসালাতে হয়ে উঠেন প্রেমিক মুহাম্মাদ সা.। তিনি ঘর-সংসার ও দাম্পত্য জীবনেও প্রেমের কারণেই হয়ে গেলেন প্রেমিক স্বামী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.। ইউসুফ-জুলেখা, লাইলী-মজুন ও শিরি-ফরহাদের প্রেম। কাহিনী পৃথিবীতে খ্যাতি অর্জন করেছে। অথচ এরা সবাই কোন না কোনভাবে প্রেমে ব্যর্থ হয়েছে। অন্য দিকে মুহাম্মাদ সা. খাদিজার প্রেম কাহিনী সিরাত গ্রন্থগুলোতে চাপা পড়ায় অবহেলিত হয়ে আছে। অথচ তারা ছিলেন সফল প্রেম জুটি। খাদিজার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক থেকেই তাদের প্রেমের শুরু। অবশ্য খাদিজাই প্রথম মুহাম্মাদের সা. প্রেমে পড়েছিলেন। তখন মুহাম্মাদ সা. পঁচিশ বছরের টগবগে যুবক, আর হযরত খাদিজা চলি­শের ঘরে। পঁচিশ ও চল্লিশ বছরের প্রেম জুটির বিজয় হল, শুরু হল তাঁদের সুখের দাম্পত্য জীবন। দীর্ঘ তেইশ বছরের দাম্পত্য জীবনে কোনদিনও তাঁদের মুখ কালো হয়নি। দু’জনই ছিলেন প্রেম ডিঙ্গির প্রেমের মাঝি। আর যে বছর হযরত খাদিজা রা. ইন্তেকাল করেন সেই বছরকে মুহাম্মাদ সা. ‘শোক বছর’ ঘোষণা করলেন। শুধু তাই নয়, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি হযরত খাদিজাকে ভুলতে পারেননি। ভুলতে পারেননি হযরত খাদিজার ভালোবাসা। মুহাম্মাদ সা. ও হযরত খাদিজা রা. ছিলেন প্রেমের এক জোড়া শালিক। এ প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসটি উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, ‘আমি হযরত খাদিজা রা. কে ঈর্ষা করতাম, অন্য কোন স্ত্রীর প্রতি তেমনটি করতাম না। কিন্তু নবী করিম সা. তাঁকেই বেশি স্মরণ করতেন এবং তাঁর বিষয়ে অধিক আলোচনা করতেন। রাসূল সা. কখনো কখনো খাদিজার স্মরণে বকরি জবাই করে পুরো মাংস তার বান্ধবীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিতেন। তাই কখনো আমি কটাক্ষ করে বলতাম ‘মনে হয় যেন পৃথিবীতে খাদিজা ছাড়া আর কোন নারী জন্ম নেয়নি?’ উত্তরে রাসূল সা. আবার হযরত খাদিজার রা. প্রশংসা আরম্ভ করতেন। তিনি বলতেন- ‘খাদিজা এমন ছিল, তেমন ছিল। তাঁর থেকে আমার সন্তান-সন্ততি জন্ম নিয়েছিল।’- বুখারী শরীফ। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর সা. বয়স তখন তিপ্পান্ন। তাঁর ঘর হয়ে গেল খাদিজা রা. শূন্য। পরবর্তী দশ বছরে অন্য স্ত্রীদের বিয়ে করেন- ইসলাম রক্ষা ও মানবিক কারণে। হযরত আয়েশা, উম্মে সালামা, হাফসা প্রমুখ নারী যখন ঘরনী হয়ে রাসূল সা. কাছে আসলেন, তখনও প্রেমিক মুহাম্মাদের সা. প্রেমে একটুও ভাটা পড়েনি। শাসন বা কঠোরতায় নয় প্রেম দিয়েই জয় করলেন তাদের প্রেমিক হৃদয়। বাসর ঘর থেকেই খুলে বসলেন তিনি প্রেমের মেলা। সালাম দেয়া কে মুহাম্মাদ সা. করে নিলেন প্রেমের প্রথম সোপান। হযরত উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসটিতে তার প্রমাণ মেলে। তিনি বলেন, ‘নবী করিম সা. তাঁকে বিয়ে করার পর বাসর রাতে ঘরে প্রবেশ করেই সালাম বিনিময় করেছিলেন।’- আখলাকুন নবী সা.। পরশ পাথরের ছোঁয়ায় যেমন সোনা হয় তেমনি খোদার এক রহস্য নারীর পরশে মন বাগানে ফুটে উঠে প্রেমের ফুল। পুরুষ ফিরে পায় তার সতেজতা। তাই রাসূল সা. ‘কুরআন’ নামক প্রেম পত্রটিও প্রেম রিহালে হেলান দিয়ে কখনো কখনো পাঠ করতেন। আর সেই প্রেম রিহাল ছিল স্ত্রীর উরু। এ প্রসঙ্গে মাদারিজুন নবুয়ত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে- ‘রাসূল সা. অনেক সময় হযরত আয়েশার রা. উরুতে হেলান দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করতেন।’ আর আহাদের মিলনে আহমাদ আরো এক ধাপ এগিয়ে। আহাদ আহমাদের মিলন সেতু হচ্ছে সালাত। তাই প্রেমিক মুহাম্মাদ যখন সালাতে যেতেন, তার আগে হতেন প্রেমিক স্বামী। এ প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত ‘নবী করিম সা. তাঁর স্ত্রীদের কোন একজনকে চুমু খেলেন। তারপর নামাজ পড়তে গেলেন কিন্তু অজু করেননি। উরওয়া বলেন, আমি হযরত আয়েশাকে রা. জিজ্ঞেস করলাম, সেই স্ত্রী আপনি ছাড়া আর কে?’ তখন তিনি হেসে ফেললেন- সুনানে আবু দাউদ। মান অভিমানে প্রেম ভাঙে না, প্রেম বন্ধনকে শক্তিশালী করে আরো। প্রেমিক স্বামী মুহাম্মাদের দাম্পত্য জীবনেও ছিল মান-অভিমান। একজন প্রেমিক স্বামীকে হতে হয় একজন শ্রেষ্ঠ মনোবিজ্ঞানী। প্রিয়তমার অভিমান জীবন ভর বুঝতে হয় স্বামীকে। স্ত্রীদের মান-অভিমানকে রাসূল সা. কত সহজভাবে নিতেন, তার দৃষ্টান্ত মেলে এ হাদিসটিতে। হযরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, ‘একবার রাসূল সা. আমাকে বললেন- কোন সময় তুমি আমার প্রতি উৎফুল্ল থাক, আবার কখনো ভারাক্রান্ত আর তা আমি বুঝতে পারি। জিজ্ঞেস করলাম- আপনি কি করে বুঝেন? রাসূল সা. উত্তর করলেন, উৎফুল্ল অবস্থায় কথা বলার সময় তুমি শপথ করে বলে থাক- ‘মুহাম্মাদের সা. প্রভুর শপথ।’ আর ভারাক্রান্ত অবস্থায় বলে থাক- ইব্রাহিমের (আ.) প্রভুর শপথ।’ আমি বিনীত হয়ে বললাম এ কথা সত্য। তবে হে আল্লাহর রাসূল সা.। আল্লাহর শপথ, অভিমান করেই শপথে আপনার নাম বাদ দিয়ে থাকি।’-বুখারী শরীফ প্রেমিক স্বামী মুহাম্মাদের সা. জীবন সঙ্গিনীদেরও প্রেম ছিল পবিত্রতায় ভরা। হযরত সাওদা রা. বর্ণিত হাদিসে প্রেমিক স্বামী মুহাম্মাদের সা. প্রেমিক পত্মীর সন্ধান মেলে। হযরত সাওদা রা. মাঝে মাঝে এমন রসিকতা করতেন যে, রাসূল সা. না হেসে পারতেন না। একবার হযরত সাওদা রা. রাসূল সা. কে বললেন, ‘কাল রাতে আমি আপনার সঙ্গে নামাজ পড়ছিলাম। আপনি রুকুতে এত দেরি করছিলেন যে, মনে হচ্ছিল আমার নাক ফেটে রক্ত ঝরবে। তাই আমি অনেক সময় পর্যন্ত নাক টিপে ধরে রেখেছিলাম- তাবাকাত ই ইবনে সায়াদ। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর সা. একাধিক স্ত্রী ছিল সত্য, কিন্তু স্বামী মুহাম্মাদ স্ত্রীদের ভেতর প্রেম বণ্টনে কখনো বৈষম্য করেননি। সবাইকে তিনি সমান চোখে দেখতেন। একেক স্ত্রীর কাছে তাঁর প্রেম বিনিময়ের পদ্ধতি ছিল একেক রকম। প্রেমের বহির্প্রকাশ ছিল ভিন্ন ভিন্ন প্রেম শিল্পরূপে। বৈষম্যহীন প্রেমিক স্বামী মুহাম্মাদের চরিত্র ফুটে উঠে এই হাদিসটিতে। প্রতিদিন আসরের নামাজের পর নবী করিম সা. পর্যায়ক্রমে সকল স্ত্রীর ঘরে যেতেন। তিনি তাদের খোঁজ খবর নিতেন- বুখারী শরীফ। তাই সুখী দাম্পত্যের জন্য প্রয়োজন প্রেমের নবী প্রেমিক স্বামী মুহাম্মাদ সা.-এর অনুসরণ। পরিশেষে রাসূল সা. এ হাদিসটি উল্লেখ করা যেতে পারে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, ‘কোন মুমিন যেন স্ত্রীর প্রতি বিদ্বেষ না রাখে। কারণ, স্ত্রীর একটি আচরণ অসন্তোষজনক হলেও অন্যটি হবে সন্তোষজনক’- মুসলিম শরীফ। সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহি তাঁর এবং তাঁর বংশোধরের প্রতি বর্ষিত হোক সালাম