গুলি ছোড়েন ইয়াবা কারবারি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪ | ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের দক্ষিণ বিশিল এলাকায় নিজের ছয় তলা বাড়িতে থাকেন নূরে আলম ওরফে তুহিন মাহমুদ। চলাফেরা করেন দামি প্রাইভেটকারে। কখনও আবার মোটরসাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান। সবাই তাঁকে চেনেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা হিসেবে। এই পরিচয়ের আড়ালে তিনি বছরের পর বছর চালিয়ে আসছিলেন ইয়াবার কারবার। অবৈধ অস্ত্রও সঙ্গে রাখতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তিনি ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছুড়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সম্প্রতি তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। ডিএনসি মিরপুর সার্কেলের পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ভূঁঞা বলেন, গোপন খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর মাদক কারবারি তুহিন মাহমুদ ও তাঁর সহযোগী মো. রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছে ৩০০ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে মিলেছে পাঁচ রাউন্ড পিস্তলের গুলি। তবে অস্ত্রটির সন্ধান মেলেনি। এ ঘটনায় দারুস সালাম থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দক্ষিণ বিশিলের সাত নম্বর সড়কের ১৬৭ নম্বর বাড়ির ষষ্ঠ তলায় থাকেন তুহিন। প্রায় সাত বছর ধরে তিনি ইয়াবা কারবারে যুক্ত। তবে এ বিষয়ে তিনি বেশ সাবধানী। নিজে ইয়াবা আনতে কক্সবাজারে যান না। কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের একটি মাদক কারবারি চক্রের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। সেই চক্রের সদস্যরা এসে তাঁকে চালান পৌঁছে দিয়ে যান। তারা সাধারণত এক বা দুই সপ্তাহ পর পর ১০ থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে আসেন। তুহিন তাঁর নির্ধারিত ক্রেতাদের কাছে এসব ইয়াবা বিক্রি করতেন। ক্রেতারা সবাই শাহ আলী, দারুস সালাম, গুদারাঘাট ও বিশিলসহ মিরপুরের বিভিন্ন এলাকার। ফলে নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে তাঁর এই কর্মকাণ্ডের কথা কেউ তেমন জানতেন না। সবাই জানতেন, তিনি ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করেন। তাই কেউ কিছু জানলেও সাহস করে বলতেন না। যদিও দলে তাঁর কোনো পদ ছিল বলে জানা যায়নি। অভিযান-সংশ্লিষ্টরা জানান, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান নিখিলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তুহিন। অভিযানের সময় তেমন বেশকিছু ছবিসহ আলামত দেখা গেছে। দলের নাম-স্লোগান লেখা শতাধিক গেঞ্জিও মিলেছে তাঁর বাড়িতে। তাঁর স্টিলের আলমারিতে রাখা প্লাস্টিকের ছোট কৌটার ভেতর পাওয়া গেছে ৭.৬৫ পিস্তলের গুলি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি অবৈধ অস্ত্রটি আগেই কোথাও লুকিয়ে রাখেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অস্ত্রের বিষয়ে মুখ খোলেননি। অস্ত্র না থাকলে গুলি দিয়ে তিনি কী করেন? সেই প্রশ্নেরও কোনো উত্তর মেলেনি। অভিযোগ রয়েছে, এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও নির্বিঘ্নে মাদক কারবার চালানোর সুবিধার্থে তিনি অবৈধ অস্ত্র সঙ্গে রাখতেন। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে স্থানীয় নেতাদের নির্দেশে এ নেতা ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে মাঠে নেমেছিলেন। অবৈধ অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখানোর পাশাপাশি গুলিও ছুড়েছিলেন তিনি। ডিএনসির এক কর্মকর্তা জানান, গুলি উদ্ধারের ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ তদন্ত করবে। তাদের তদন্তে অস্ত্রের খোঁজ মিলতে পারে। সেই সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনে গুলি ছোড়ার বিষয়েও প্রমাণ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাদক উদ্ধারের মামলাটি ডিএনসি তদন্ত করছে।