রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া ব্যাংক খাত সংস্কার সম্ভব নয়

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪ | ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসাবে ব্যবহার করে অনিয়মের মাধ্যমে লাখ লাখ কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন হাতেগোনা কয়েকজন দুষ্ট ব্যবসায়ী। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাত সংস্কারে গভর্নরের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। জবাবে গভর্নর জানিয়েছেন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া ব্যাংক খাত সংস্কার সম্ভব নয়। রোববার সন্ধ্যায় উচ্চপর্যায়ের একটি মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান এ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধিদলের অন্যরা হলেন-সহকারী মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ, উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌর এবং মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের পরিচালক জেরোড ম্যাসন। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদল দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা জানতে চেয়েছে। কিভাবে এটার উন্নতি করা হবে এবং অর্থনীতির অবস্থা আর খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চান তারা। পাশাপাশি দেশের আর্থিক খাত সংস্কারে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় জবাবে গভর্নর বলেছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদি থাকে তাহলে ব্যাংক খাত সংস্কার সম্ভব। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে যদি হস্তক্ষেপ করা হয় তাহলে এই অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে সংস্কারের সময় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সূত্র জানায়, ব্যাংক খাত সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স কিভাবে কাজ করবে সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। পাশাপাশি এই টাস্কফোর্স থেকে কি ধরনের কাজ আশা করছেন গভর্নর। আর এই টাস্কফোর্স কি সব ব্যাংক নিয়ে কাজ করবে? নাকি ১০টি ব্যাংক নিয়ে কাজ করবে সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন তারা। একইসঙ্গে টাস্কফোর্স ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) সংস্কারে কাজ করবে কিনা সে বিষয়েও জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। জবাবে গভর্নর জানান, দেশের আর্থিক খাতে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অ্যাসেট মাত্র ৪ শতাংশ। বেশিরভাগ অর্থই ব্যাংকগুলোতে। এজন্য ব্যাংক খাত নিয়েই আগে কাজ করা হবে। আপাতত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করতে কাজ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর ফরেনসিক অডিট করা হবে। এরপর সম্পদ ও দায়ের কি পরিমাণ গরমিল থাকে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ সম্পদ পাওয়া যায় তার বাইরে মূলধন জোগান দিতে হবে। এসব ব্যাংকের অবস্থার উন্নতির পর অন্যান্য ব্যাংক নিয়ে কাজ করা হবে। এছাড়া অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন ও তা কার্যকর করতে দেশের কত সময় লাগতে পারে সে বিষয়েও মার্কিন প্রতিনিধিরা জানতে চেয়েছেন বলে জানিয়েছে সূত্রটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হুসনে আরা শিখা বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ঋণের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কারণ তারা যে ঋণ দেবেন সে বিষয়ে ইআরডির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা শুধু সামষ্টিক অর্থনীতির বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। কিভাবে এটার উন্নতি করা হবে। আবার খারাপ হওয়ার কোনো আশঙ্কা আছে কিনা। সেক্ষেত্রে গভর্নর স্যার বিষয়গুলোর উত্তর দিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর প্রতিনিধিদলকে দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা রক্ষায় সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত নানা ধরনের পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। আর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন, টাকার সরবরাহ হ্রাস, সুদের হার দফায় দফায় বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারভিত্তিক করা এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং ক্রলিং পদ্ধতিতে ডলারের দর নির্ধারণের বিষয়গুলো জানানো হয়েছে। অপর একটি সূত্র জানায়, রিজার্ভ সংরক্ষণে বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) ব্যয়যোগে রিজার্ভের (এনআইআর) তথ্য প্রদানের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক খাতের সংস্কার, সময়সীমা বেঁধে দিয়ে খেলাপি ঋণ আদায়ের মাধ্যমে তারল্য ঘাটতি দূর করা, পরিদর্শনের মাধ্যমে অনিয়ম উদ্ঘাটন এবং আর্থিক খাতের সুশাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রণীত রূপরেখা তুলে ধরেন গভর্নর। এদিকে ঢাকায় সফররত বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) উচ্চ প্রতিনিধিদল ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংকের পলিসিভিত্তিক ঋণ (পিবিএল) ৭৫০ মিলিয়ন ডলার এবং ইনভেস্টমেন্ট লোন ও গ্যারান্টি ফ্যাসিলিটি হিসাবে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা দেওয়া হবে। এডিবির ইনভেস্টমেন্ট ঋণ ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি ডলারের একটি অর্থ সহায়তা দিয়েছে। এজন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তিও সই করেছে।