বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে ‘আলো আসবেই’ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন আওয়ামীপন্থি শিল্পীরা। তারা শুরু থেকেই আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। এসব শিল্পীর মধ্যে অন্যতম ছিলেন অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গোপন এই গ্রুপের বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠে। এরপর ‘আলো আসবেই’ গ্রুপ নিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন অনেক শিল্পী। তবে সবাই তোপের মুখে পড়েন। গ্রুপে থাকার কথা স্বীকার করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন জ্যোতিও। সেই সমালোচনার রেশ না কাটতেই মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে ফের তোপের মুখে পড়েন আওয়ামীপন্থি শিল্পী জ্যোতি। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া এই অভিনেত্রী দুপুর ১২টার দিকে অফিসে প্রবেশ করেন। সেখানে নতুন মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি। এরপর রুম থেকে বের হতেই সহকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন জ্যোতি। একপর্যায়ে শিল্পকলা একাডেমি ত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। ঘটনার পর ফেসবুক লাইভে আসেন জ্যোতি। শিল্পকলা একাডেমিতে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে শিল্পকলা একাডেমিতে পরিচালক হিসেবে কাজ করছিলাম। এখনো আমার মেয়াদ শেষ হয়নি এবং নিয়োগ বাতিলেরও কোনো প্রক্রিয়া এখনো হয়নি। সুতরাং আমার চাকরিটা আছে। গত দুই মাস ধরে দেশে যা চলছে, তারপর থেকে শিল্পকলা একাডেমির অফিসের কাজ মোটামুটি বন্ধই বলা যায়। সপ্তাহখানেক হয়েছে নতুন ডিজি এসেছেন, তাই আমার মনে হয়েছে আমার অফিসে যাওয়া উচিত। যদিও সচিব স্যারের, পরামর্শ ছিল- আমি যাতে এখন শিল্পকলায় না যাই। কিন্তু আমার চাকরি এখনো আছে। আমারও ভালো লাগছিল না, তাই গিয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘শিল্পকলায় যাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে অনেক সাংবাদিক ফোন করে জানতে চাচ্ছিলেন, আমার অবস্থা সম্পর্কে। কারণ তারা জানতে পেরেছেন, আমাকে নাকি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু আমি তখনো বিষয়টি জানি না। আমার আরেক সহকর্মী ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, চলো বেরিয়ে যাই। আমি তাকে বলি, আমার চাকরি তো শেষ হয় নাই, তাহলে আমি কেন যাব? প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিয়োগ বাতিল হলে অবশ্যই আমি আর আসব না।’ শিল্পকলা একাডেমির ডিজির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা জানিয়ে জ্যোতি বলেন, ‘আমি যখন শিল্পকলায় যাই তখন ডিজি স্যার একটা মিটিংয়ে ছিলেন। এরপর উনি যখন বের হন, তখন আমি ওনার সঙ্গে দেখা করার জন্য বের হই। বেরিয়ে দেখি শিল্পকলায় অনেক লোকজন। অনেকে চেচামেচি করছে। আমি ডিজি স্যারের সঙ্গে দেখা করলাম। স্যার বললেন, দেখেন এই অবস্থা। এর মধ্যে অফিসে কেন এসেছেন? আপনারা বরং চলে যান, পরিস্থিতি সামলাতে দেন। পরে এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয় সে মোতাবেক কাজ করবেন।’ ‘ডিজি স্যারের সঙ্গে কথা বলে লবিতে ফিরে উপস্থিত অন্যদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু উনারা কোনো কথা বলবেন না। শুনতে পেলাম, আরও লোকজন খবর দেওয়া হয়েছে। আমাদের আটকে রাখবে বা কিছু করবে। আমার খুব অবিশ্বাস্য লাগছিল, সবার মুখ অপরিচিত লাগছিল। কারণ এরাই আমার সহকর্মী ছিলেন!’ অফিসে জ্যোতিকা জ্যোতির ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ছিল। চলে আসার সময়ে সেসব জিনিস নিয়ে আসেন। কিন্তু উপস্থিত সহকর্মীদের সেসব জিনিসপত্র দেখিয়ে তারপর শিল্পকলা একাডেমি থেকে বের হন জ্যোতি। লাইভের একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই অভিনেত্রী। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘এতবছর ধরে আমি অভিনয় করছি। কখনো দেশ ছেড়ে বাইরে চলে যাওয়ার কথাও চিন্তা করিনি। তবুও এই অপমান কি আমার প্রাপ্য ছিল? কোনো দলের সমর্থক ছিলাম বলে কি দেশটা আমার নয়? আমি তাহলে কোথায় যাব? এই প্রশ্ন আপনাদের কাছে রেখে গেলাম। জ্যোতি আরও বলেন ‘আমাকে নিয়ে অনেকে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন, আমি ঠিক আছি কিনা, তা জানতে চাইছেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আমি ঠিক আছি। তবে মানসিকভাবে কবে ঠিক হবো জানি না। আমার সঙ্গে যা হয়েছে এই চাপ আমি কীভাবে সামলাব জানি না। আমার এই চাকরিটা থাকছে না। তাহলে আমি কোথায় যাব?’