‘দেশকে বাসযোগ্য আবাসস্থল হিসেবে রেখে যেতে চাই’

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪ | ৬:৪৭ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

এদেশের সাধারণ মানুষ দুই বেলা দুই মুঠো ভাত খেয়ে জীবন ধারণ করতে চায়। এই দেশে দীর্ঘকাল ধরে চলা বৈষম্য দূর করতে হলে আমাদের মানসিকতাকে পরিবর্তন করতে হবে। এই মাটি বাতাসে আমরা বড় হয়েছি, এদেশকে একটি বাসযোগ্য দেশ হিসেবে রূপান্তর করতে চাই। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত নতুন বাংলাদেশ মানে একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক, কল্যাণ রাষ্ট্র শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন হোয়াইট হাউস ও জাতিসংঘের স্থায়ী সংবাদদাতা, মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক, অনলাইন পোর্টাল জাস্ট নিউজের সম্পাদক সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর। তার সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য সভার আয়োজন করে নাগরিক আকাঙ্ক্ষা নামে একটি সামাজিক সংগঠন। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন জিএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাষানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ক্বারী হাসান হাসানাত কাইয়ুম, গণসংগতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি প্রমুখ। মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, যে বাংলাদেশের প্রত্যাশার কথা বলা হচ্ছে, সবাই সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চান। নাগরিক আকাঙ্ক্ষা এটি খুব সিম্পল। মানুষের আকাঙ্ক্ষা সাধারণভাবে জীবন যাপন করতে চাই। দুই বেলা দুই মুঠো খেয়ে তারা শান্তিতে বসবাস করতে চায়। এটি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা। বৈষম্যমুক্ত মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে বৈষম্য দীর্ঘকাল ধরে প্রতিষ্ঠিত, সেই বৈষম্য দূর করতে হলে আমাদের কিছু কালচারের পরিবর্তন করাতে হবে। তিনি আরও বলেন, কিছু মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। যতদিন সেটি না করতে পারি, তাহলে কোন সরকার করে দিতে পারবে না। এই দেশ আমার। এদেশের আলো বাতাসে আমি বড় হয়েছি। এই দেশে একটি বাসযোগ্য আবাসস্থল হিসেবে রেখে যেতে চাই। নাগরিক মাত্রই সবাই সমান। এই জিনিসটা আমাদের ভাবতে হবে। যে সচিব, যে পুলিশ কর্মকর্তা, ভিআইপি ভাবছেন, অথচ এদেশের সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় তাদের বেতন হচ্ছে। আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডে আপনি গেলে তারা আপনাকে স্যার বলে সম্মান করবে এবং বলবে, আপনার কিভাবে সাহায্য করতে পারি। অথচ বাংলাদেশে তার সম্পূর্ণ বিপরীত। অনেকে মনে করতে পারেন, যেমন ভারত মনে করতে পারেন এই রেজিমকে সরানোর জন্য আমেরিকা ছিল। কিন্তু সেটি নয়। এ রেজিমকে দূর করার জন্য বাংলাদেশের ছাত্র-জনতাই যথেষ্ট ছিল। কোন দেশ কত বড়, তাদের কত বড় গোয়েন্দা সংস্থা আছে, সেই চিন্তা করে আমাদের কলম থেমে থাকবে না। তিনি বলেন, আমাদের স্পিড চলবেই তাদের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র সুরক্ষার জন্য কাজ করে যাব। যেখানে গণতন্ত্র হুমকির মুখে, সেখানে সেই গণতন্ত্রে যারা ছাত্র সমাজ সেই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করে তাদেরকে বিদায় করেছে এবং সেই সংগ্রামে যারা রক্ত দিয়েছে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তাদেরকে কখনো আপনারা ভুলবেননা। দীর্ঘ দিনের যে আকাঙ্ক্ষা সেই আকাঙ্ক্ষা ডিপ ফ্রিজে ঢুকালে চলবে না। ইনস্টিটিউশনকে রিফর্ম করতে হবে এবং নির্বাচন রোড ম্যাপ এর জন্য অগ্রসর হতে হবে। এদেশের মানুষ কিন্তু অন্তবর্তী কালীন সরকারের ক্ষমা করবে না। রক্তের বদলা তারা নিবেই। অপরাধীদেরকে কিভাবে তাদের জবাবদিহিতার মাধ্যমে এবং শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে এনে তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং যারা শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছে, তাদের বিন্দু মাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে তিনি বলেন, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মানবাধিকার লংঘন করা যাবে না। এই মানবাধিকারের জন্য আমরা ১৭টি বছর লড়াই করছি এটি সফল করার জন্য একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পূর্ণ নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস এদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তাকে আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাপোর্ট দিয়েছেন। আপনারা ব্যক্তিগতভাবে প্রধান উপদেষ্টার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে একটি সেল তৈরি করে সেখানে রাজনৈতিক নেতাদের কথা বলার জন্য একটি সেল তৈরি করতে হবে। এটা সরকার কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবেন। মুশফিকুল ফজল বলেন, আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছি, আমরা কথা বলতে পারছি, এটি সবচেয়ে বড় অর্জন। এই মুক্তমত প্রকাশ করার জন্য রাষ্ট্র যেন কোনদিন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। সে অধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই আমাদের নাগরিক আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। পৃথিবীর কোথাও যদি বিচারহীনতা সমস্যা থাকে, তাহলে সেই দেশের সমস্যা নয়। এই সমস্যার সকলের জন্য। এই কারণে সারা দুনিয়া এই বাংলাদেশের এই সমস্যাকে অ্যাড্রেস করেছে। বাংলাদেশের যখন শেখ হাসিনা একতরফা নির্বাচন করল তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সকলেই ভালোবাসা তলা নিতে নেমে আসলো। আমেরিকা দেখতে চেয়েছিলেন জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হোক। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশকে যিনি তুলে ধরেছেন তিনি হলেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। আমাদের এক কোটির বেশি মানুষ বিদেশে বাস করেন। তারাও আমাদের এই স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলনে বিভিন্নভাবে অংশগ্রহণ করেছেন তাদেরকে তিনি ধন্যবাদ জানান। আমাদের এই বিজয় এবং অর্জনকে যারা বিভিন্নভাবে নশ্চাত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে মোকাবেলা করবো এবং যাবতীয় দুর্যোগকে মোকাবেলা করে অন্তবর্তিকালীন সরকার সিরাতুল মুস্তাকীনা এর দিকে হাঁটবে নানা উস্কানি এবং নানা ধরনের চক্রান্ত মোকাবেলা করা হবে। সভাপতির বক্তৃতায় মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেড় মাস আগে মুশফিকুল ফজল আনসারী ভাবতেও পারেনি যে বাংলাদেশে তিনি আসতে পারবেন এবং বাংলাদেশের এই পরিবর্তন ঘটবে। যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন তাদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। নতুন করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এই দেশ হবে বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে। দেশের মানুষ এমন একটি বাংলাদেশ পাবে যে, দেশের মানুষ নিশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারবে এবং ভোট দিতে পারবে। নিশ্চিন্তে তার কথা বলতে পারবে। এখন যাতে দেশের মানুষ নিরাপদে ভোট দিতে পারে কিনা, তাহলে এমন হবে সেটি ঠিক করবে দেশের রাজনৈতিক নেতারা। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি মানুষ আন্তরিক। সংস্কার মানে আপনার নিজের কলব সংস্কার করতে হবে। আপনার ঈমান ঠিক করতে হবে।