বিডিআর বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতায় আঘাত করা হয়েছে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিতঃ ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০২৩ | ৫:২০ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাকে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, \'অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এদেশের বিরুদ্ধে, জাতির স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ভয়াবহ একটি চক্রান্ত, একটি ষড়যন্ত্র অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা রক্ষা ব্যবস্থা, সার্বভৌমত্ব, আমাদের স্বাধীনতা প্রচণ্ডভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল।\' আজ শনিবার সকালে রাজধানীর বনানীর সামরিক কবরস্থানে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, \'আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এত সেনা কর্মকর্তাকে হারাতে হয়নি। এদের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের গর্ব সেনাবাহিনীর মনোবলকে ভেঙে দেওয়া। আমাদের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য যারা তাদের প্রাণ উৎসর্গ করে শপথ নিয়েছেন তাদের নৃশংসভাবে, অন্যায়ভাবে, বেআইনিভাবে, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। এর পেছনে যারা রয়েছেন তাদের বের করে নিয়ে আসার জন্য যে তদন্ত প্রক্রিয়া হওয়া উচিত ছিল, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি হয়নি। তিনি বলেন, \'২৫ ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত দুঃখজনক ও কলঙ্কজনক একটি দিন। এই দিনে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাদের পরিবার পরিজনসহ হত্যা করা হয়েছে। একটি ভয়াবহ নৃশংস ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়। এসব সেনা কর্মকর্তা আমাদের দেশের সম্পদ ছিলেন। আজকের দিনে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া চাইছি- তিনি যেন তাদের সবাইকে বেহেশত নসিব করেন। এছাড়া অন্যান্য সেনা কর্মকর্তা, বিডিআর কর্মকর্তা যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতিও আমরা গভীর শ্রদ্ধা এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।\' মির্জা ফখরুল বলেন, \'আমরা মনে করি, এই ঘটনায় যেভাবে তদন্ত হওয়ার দরকার ছিলো সেটি হয়নি। পত্রপত্রিকায় দেখেছি, সেনাবাহিনী একটা তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিল, সেটার পূর্ণাঙ্গ যে চেহারা তা পাল্টিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে যে বিচারের ব্যবস্থা হয়েছে সেখানে আমরা দেখেছি হত্যা ও বিস্ফোরণের বিচার হয়েছে। কিছু মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আবার কিছু মানুষকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, \'প্রায় সাত হাজারের মতো সৈনিক যারা অনেকেই সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ দাবি করেন, এখন পর্যন্ত তাদের মামলার শুনানি শেষ করা হয়নি। কারাগারে তারা ১৩/১৪ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের পরিবার এবং সমস্ত ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি আজকে দাবি করবো- তাদের বিরুদ্ধে যে জুডিশিয়াল সমস্যাগুলো রয়েছে তা অতি দ্রুত সম্পাদন করে এদের একটা ব্যবস্থা করা উচিত, তাদের মুক্তি হওয়া উচিত। তাদের পরিবারগুলোকে একটি স্বাভাবিক জীবনযাপন করার ব্যবস্থা করবেন।\' তিনি বলেন, \'স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এজন্য যেটা প্রয়োজন তা হচ্ছে সমগ্র জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়া। যে গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছে, অসংখ্য মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছে, সেই গণতন্ত্র আমরা ফিরে পেতে চাই। সমস্ত কিছুর মূলে রয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।\' \'বিডিআর বিদ্রোহে দিন খালেদা জিয়ার গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল\'- আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবউল আলম হানিফের এমন বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘এটা দায়িত্বহীন একটি কমেন্ট। বড় একটি ঘটনা যেখানে সমস্ত জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে যার সম্বন্ধে বলা হচ্ছে তিনি দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তিনি এদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের জন্য সারাটি জীবন কাজ করছেন। এখনও গণতন্ত্রের জন্য অন্তরীণ রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের স্ত্রী ছিলেন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। এগুলো একেবারে ডাইভারশন করা। উনারা (আওয়ামী লীগ) মূল সমস্যায় না গিয়ে অন্যদিকে যেতে চান।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীক, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) ফখরুল আজম, , ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জহুরুল আলম, লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামান, মেজর (অব.) মো. হানিফ, মেজর (অব.) মিজানুর রহমান, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) কোহিনূর আলম নূর প্রমুখ।