প্রভাবশালীদের দখলে কালিদাসখালী-আড়পাড়া খাল

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪ | ৫:২৩ অপরাহ্ণ
মোঃ সাইফুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান, মাগুরা

দীর্ঘ বিশ বছরের বেশি সময় ধরে কালিদাসখালী-আড়পাড়া খালের দুই পার্শ্বে অবৈধভাবে বাঁধ স্থাপনা করে মাছ শিকার করছেন মাগুরা\'র সদর উপজেলার কুঁচিয়ামোড়া ইউনিয়নের মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা। কোনো বন্দোবস্ত বা ইজারা ছাড়াই বছরের পর মাছ ধরছেন তারা। মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার বরইচারা - কুঁচিয়ামোড়া গ্রামের মধ্যবর্তী এই মুক্ত জলাশয়ে মাগুরা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষের মাছ ধরার অধিকার থাকলেও তা করতে দেন না ঐ প্রভাবশালী চক্র। অভিযোগ রয়েছে,‌শ্রীহট্ট,পুকুরিয়া,কুমারকোটা ও আনন্দনগরসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রাম থেকে মাছ শিকার করতে আসলে অনেকের কাছ থেকে জাল,বড়শি,গাজে (মাছ রাখার পাত্র) সহ বিভিন্ন মাছ ধরার ও রাখার সরঞ্জাম কেড়ে নেন প্রভাবশালী ঐ সমিতির সদস্যরা। শুধু তাই নয় কুঁচিয়ামোড়ার পাশ্ববর্তী গ্রাম হাটবাড়িয়া গ্রাম থেকে উশৃঙ্খল ছেলেদের ভাড়া করে এনে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মাছ শিকারীদের মারধরও করেন তারা। আড়পাড়া ইউনিয়নের কুমারকোটা গ্রাম থেকে মাছ শিকার করতে আসা মোতালেব নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান,আমি এইখানে মাছ শিকার করতে আসলে কুঁচিয়ামোড়ার কিছু লোকজন আমাকে মারধর করে এবং আমার কাছ থেকে জাল কেড়ে ও গাজে কেড়ে নেয়। একই ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের কিতাবুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমাদেরকে এই খাল থেকে মাছ ধরতে দেয় না, আমরা মাছ শিকার করতে আসলে আমাদের মাছ মারার সরঞ্জাম কেড়ে নেয়,আমাদেরকে মারধর করে এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে মাস্তান ভাড়া করে এনে আমাদেরকে হুমকি দেয়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,বরইচারা-কুঁচিয়ামোড়ার বেড়িবাঁধের উপর নির্মিত স্থানীয়ভাবে দোসীমানার খাল নামে পরিচিত কালিদাসখালী-আড়পাড়া নামে এক খালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক একটি সুইচগেইট নির্মাণ করা হয়েছে যার পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে ফটকী নদী এবং দক্ষিণ পার্শ্বে রয়েছে বড় বিল। সুইচ গেটের দুই পার্শ্বের অন্তত দেড় কিলোমিটার জায়গাজুড়ে চাঁন বেড় ও বড় বড় বাশ দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। যেখানো একটি লাল পতাকাও টানানো হয়েছে। কয়েকটি টং ঘর তৈরি করে রাত দিন মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত কুঁচিয়ামোড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা। খালের পাশ্ববর্তী ফটকী নদীর কিছু জায়গাতেও বাঁধ নির্মাণ করে মাছ শিকার করছেন তারা। প্রতি মৌসুমে দুই পাশের পুরো খাল সেচে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ শিকার করেন কুঁচিয়ামোড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা। মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণ করে মাছ শিকার করা নিষেধ থাকলেও তা মানছেন না তারা। খালের উপর নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুইচগেটের দায়িত্বে থাকা লালমিয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন,কুঁচিয়ামোড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা যে জায়গা থেকে মাছ শিকার করছে সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা। এই জায়গাটি আমাদের দপ্তর থেকে কখনোই ইজারা দেয়া হয় না। সম্প্রতি দোখলদারদের কিছু লোক তাকে ভয় ভীতি দেখিয়েছে বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাগুরা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সুইসগেটের নিম্নগামী যে খালটা সেটা সম্পূর্ণই পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায়, এটি আমরা কখনই ইজারা দেয় না এখান থেকে সকলেই মাছ শিকার করতে পারবে। কোন একক ব্যক্তি বা গুষ্টি এককভাবে মাছ শিকার করতে পারবে না। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কুচিয়ামোড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি সুজন বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানান, আমরা মাগুরা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ডিসিআর কেটে এই জায়গা থেকে মাছ শিকার করে আসছি দীর্ঘ দিন ধরে তবে ডিসিআর বা ইজারার কোন বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি। দেখতে চাইলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে দেখে আসতে বলেন তিনি। কচিয়ামোড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকান্ত বিশ্বাসের নিকট অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই আপনারা অফিসে চলে যান, আমরা অফিসে গিয়ে আপনাদের সাথে যোগাযোগ করব। মুক্ত জলাশয় থেকে সবাইকে উন্মুক্তভাবে মাছ শিকার করার সুযোগ করে দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়মের মধ্য দিয়ে মুক্ত জলাশয়ের মাছ শিকারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।