ইরানের অস্ত্রাগারে কী পরিমাণ অস্ত্র আছে?

প্রকাশিতঃ অক্টোবর ৩, ২০২৪ | ৫:২৩ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ হত্যাসহ বেশ কিছু বিষয়ের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ মঙ্গলবার ইসরাইলকে লক্ষ্য করে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলা চালিয়েছে ইরান। হামলায় ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। যার বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র ও জর্ডান দ্বারা নিযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী প্রতিরক্ষার সাহায্যে বাধা দিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম ভেদ করেও বেশকিছু ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষবস্তুতে আঘাত হেনেছে। যাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে ইসরাইল। এমন হামলার পর তাই প্রশ্ন উঠেছে ইরানের অস্ত্রাগারে আরও কি কি ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। সে সব ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবেলা করতে সক্ষম তো ইসরাইল? ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস)-এর মিসাইল থ্রেট প্রজেক্টের ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, তেহরানের হাজার হাজার ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। যা বিভিন্ন রেঞ্জ কভার করতে সক্ষম। প্রতিটি ধরণের ক্ষেপণাস্ত্রের সঠিক সংখ্যা অজানা। তবে ইউএস এয়ার ফোর্স জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি ২০২৩ সালে কংগ্রেসকে বলেছিলেন, ইরানের ৩ হাজারেরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ট্র্যাজেক্টোরিগুলি সেগুলিকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সীমার বাইরে নিয়ে যায় এবং ওয়ারহেড পেলোড রকেট থেকে আলাদা হওয়ার পর তা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে। সম্প্রতি ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সেগুলোর ভিডিও বিশ্লেষণ করে অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা সংবাদ মাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, ইসরাইলের উপর সর্বশেষ হামলায় শাহাব-৩ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের রূপগুলো ব্যবহার করেছে ইরান। যা মাঝারি-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। মিসাইল থ্রেট প্রজেক্ট বলছে, শাহাব-৩; ২০০৩ সালে ইরানের পরিষেবাতে প্রবেশ করেছিল। যা ৭৬০ থেকে ১২০০ কিলোগ্রাম ওয়ারহেড বহন করতে পারে। মোবাইল লঞ্চার এবং সাইলো থেকেও এটি নিক্ষেপ করা যেতে পারে। এই ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ইরান ওয়াচ বলেছে, শাহাব-৩ এর নতুন রূপ এটি। গদর এবং এমাদ ক্ষেপণাস্ত্র, যা তাদের লক্ষ্যবস্তুর প্রায় ৩০০ মিটার নির্ভুলতা রয়েছে। এদিকে ইরানি গণমাধ্যম জানিয়েছে, হামলায় তেহরান একটি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ফাত্তাহ-১ ব্যবহার করেছে। যা একটি ‘হাইপারসনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র। যার অর্থ এটি মাক-৫, বা শব্দের গতির পাঁচগুণ গতিতে আঘাত হানতে সক্ষম। ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক সিনিয়র বিস্ফোরক অস্ত্র প্রযুক্তিবিদ ট্রেভর বল বলেছেন, ‘এটি তাদের নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মধ্যে একটি। এটি ব্যবহার করার ফলে তাদের অনেক কিছু হারাতে হবে। ইসরাইল তার সামর্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাবে এটি ব্যবহার করার ফলে।’ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এখন প্রশ্ন ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। ইসরাইলের কি সেই সক্ষমতা রয়েছে। ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরাইল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে ট্র্যাজেক্টোরিজসহ সমস্ত কিছু থেকে আক্রমণকে আটকাতে বিভিন্ন সিস্টেম পরিচালনা করছে। যা তাদের বায়ুমণ্ডল থেকে কম উড়ন্ত ক্রুজ মিসাইল এবং রকেট আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। তাদের আয়রন ডোম সিস্টেম রকেট ও আর্টিলারি অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। কিন্তু আয়রন ডোম হল ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার নীচের স্তর এবং দেশটির মিসাইল ডিফেন্স অর্গানাইজেশন (IMDO) অনুসারে মঙ্গলবার রাতে উৎক্ষেপিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এটি কার্যকর ব্যবস্থা নয়। তবে মিসাইল থ্রেট প্রজেক্ট অনুসারে, ইসরাইলের RAFAEL অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে। যা ইউএস ডিফেন্স জায়ান্ট রেথিয়নের একটি যৌথ প্রজেক্ট। যেটি কিনা ১৮৬ মাইল দূরে লক্ষ্যবস্তু বের করে কাইনেটিক হিট-টু-কিল ইন্টারসেপ্টর ব্যবহার করে। এদিকে মঙ্গলবার রাতের হামলা নিয়ে মার্কিন সামরিক বাহিনী বলেছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলির বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১২টি ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী যুদ্ধাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে তারা। যা পূর্ব ভূমধ্যসাগরে কর্মরত নৌবাহিনীর নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী ইউএসএস কোল এবং ইউএসএস বুল্কেলি থেকে পরিচালনা করা হয়েছে।