অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে কী ঘটতে পারে বাংলাদেশে?

প্রকাশিতঃ অক্টোবর ৪, ২০২৪ | ৬:৩১ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

চলতি বছরের জুলাই মাসের এক উত্তাল সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে, যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে উৎখাত হন। আন্দোলনটি মূলত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য চাকরিতে কোটা পুনঃপ্রবর্তনের প্রতিবাদ থেকে শুরু হয়। তবে এটি দ্রুত বিক্ষুব্ধ জনতার ব্যাপক আন্দোলনে রূপ নেয়। যেখানে বৈষম্য, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং দীর্ঘ দিনের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশিত হয়। আন্দোলনের সূত্রপাত হওয়ার পর শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় একটি পারিবারিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কোটা নিয়ে আলোচনা করেন এবং কোটা কমিয়ে ৫% করার প্রস্তাব দেন। যদিও তা পরিস্থিতি সামল দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না। কারণ আন্দোলন তখন পুরোপুরি গোটা দেশের ব্যাপক রাজনৈতিক সমস্যার প্রতিফলন হয়ে দাঁড়ায়। আন্দোলনের মূল কেন্দ্র ছিল সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনঅসন্তোষ। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেই আন্দোলন সহিংসভাবে দমন করার ফলে আরও ফুঁসে উঠলে দেশজুড়ে প্রায় এক হাজার ছাত্র-জনতা নিহত হয়। যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন শেখ হাসিনাকে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে দেশ থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। তিনি ভারতে নির্বাসিত অবস্থায় চলে যান, যেখানে তিনি এখনো অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনার বিদায় এবং রাজনৈতিক শূন্যতা: শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক শূন্যতার মুখোমুখি হয়। তার ১৫ বছরের শাসন শেষে দেখা যায়, দেশের প্রায় প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের মাধ্যমে রাজনৈতিকীকরণ হয়েছে। সেনাবাহিনী, বিচার ব্যবস্থা, সিভিল সার্ভিস এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি মানুষের বিশ্বাস কমে গিয়েছিল। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী এবং নতুন প্রজন্মের ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়, যার নেতৃত্ব নেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ড. ইউনূস নতুন সরকারের মূল দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তার প্রথম পদক্ষেপ ছিল একটি ছয় দফা সংস্কার পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার মধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসনিক কাঠামো এবং জাতীয় সংবিধানের সংস্কার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ড. ইউনূসের মতে, এ সংস্কারগুলো দেশকে দুর্নীতি, লুটপাট এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করবে। তবে নতুন সরকারের সামনে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে এবং সাম্প্রতিক বন্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অনেকটাই কমে গেছে। শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা: শেখ হাসিনার ক্ষমতা হারানোর পর দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে এক নতুন ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যদিও তিনি এখন ভারতে নির্বাসিত। অনেকেই মনে করছেন, তার একটি সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের সুযোগ রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদি ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হয় এবং জনগণের মধ্যে আবার হতাশা তৈরি হয়, তাহলেই জনগণ শেখ হাসিনার শাসনামলকে আরও ইতিবাচকভাবে দেখতে শুরু করতে পারে। শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ ছিল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। যদিও সে সময় বৈষম্য ও রাজনৈতিক নিপীড়ন ব্যাপক আকারে ছিল। তা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জিত হয়। রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ: অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, শেখ হাসিনা বা তার আওয়ামী লীগ পুনরায় রাজনীতিতে একটি বড় ভূমিকা নিতে পারে। বিশেষ করে যদি বর্তমান সরকার সংস্কার প্রক্রিয়ায় ধীরগতিতে এগোয় এবং দেশের জনগণ দ্রুত পরিবর্তন না দেখে। কেননা, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে পরিবারভিত্তিক রাজনীতির উদাহরণ রয়েছে এবং শেখ হাসিনার পরিবারও এর ব্যতিক্রম নয়। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও এক পর্যায়ে রাজনীতিতে আসতে পারেন। যদিও তিনি এখনও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। কিন্তু শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভর করবে বর্তমান সরকারের কার্যক্রমের ওপর। যদি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা উন্নয়ন করে, তবে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। আর যদি বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ড জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে শেখ হাসিনা ও তার দল পুনরায় রাজনৈতিক প্রভাব ফিরে পেতে পারে। যাইহোক না কেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা ও তার দলের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। তবে দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে তাদের ভূমিকা কখনই অবহেলা করা যায় না। সবমিলিয়ে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে। সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন