বিদ্যুতের খোরশেদনামা

প্রকাশিতঃ অক্টোবর ৯, ২০২৪ | ১১:৫১ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতের মাফিয়া। ২০০৯ সাল থেকে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে, তার নিয়ন্ত্রণ করেছেন একক হাতে। ৭২ বছর বয়সেও একই সঙ্গে পালন করেছেন তিনটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ। নিজের ইচ্ছামতো বেতন স্কেল তৈরি করে পকেট ভারী করেছেন। স্বজনদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে দিয়েছেন শত শত কোটি টাকার কাজ। নিজ এলাকা এবং বিভিন্ন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের স্বজনদের দিয়েছেন পরীক্ষা ছাড়াই উচ্চ বেতনে চাকরি। কেবল পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি ক্যান্টিন নির্মাণে খরচ দেখিয়েছেন ৩৫ কোটি টাকা। ভিভিআইপিদের মনোরঞ্জনের জন্য ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন বাংলো। অর্থ পাচারে আবিষ্কার করেছেন অভিনব পদ্ধতি। দেশি জনবলের বিপরীতে উচ্চ বেতন দেখিয়ে ডলারে পরিশোধ করতেন। তবে কর্মচারীরা পেতেন সামান্য টাকা। ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারের প্রকৌশলীকে প্লান্টের ম্যানেজার পদে বসিয়ে সুগম করেছেন দুর্নীতির পথ। এমনকি বিতর্কিত সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরীর প্রতিষ্ঠান লাম এন্টারপ্রাইজের নামে দিয়েছেন শত শত কোটি টাকার কাজ। পায়রার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে অতিথি করে নিয়ে আসতেন এই এমডি। পায়রার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে পরিচিত দুর্নীতির বরপুত্র নামে। তাকে বলা হয় পায়রার সৌভাগ্যের পায়রা। আলোচিত এই কর্মকর্তার নাম এ এম খোরশেদুল আলম। নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি হলো বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি। নর্থওয়েস্টের অধীনে একক মালিকানায় রয়েছে ৬টি এবং যৌথ মালিকানায় রয়েছে আরও ৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি এবং সিএমসি মিলে যৌথ উদ্যোগে বিসিপিসিএল নামক কোম্পানি গঠন করে। এ কোম্পানির অধীনেই প্রতিষ্ঠা করা হয় পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর বাইরে বিসিআরসিএল নামে আরেকটি কোম্পানি রয়েছে। এটিও নর্থওয়েস্ট এবং চায়না সিএমসির যৌথ মালিকানাধীন। তবে নতুন কোম্পানি গঠন করলেও তার সব ক্ষমতা নর্থওয়েস্টের কাছেই। তথ্য বলছে, খোরশেদুল আলম ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের ৬ মে পর্যন্ত কখনো এমডি, কখনো সিইও পদ তৈরি করে নর্থওয়েস্টে ছিলেন। তখন নর্থওয়েস্টের পাশাপাশি বিসিপিসিএল এবং বিসিআরসিএল নামে বাকি দুটি কোম্পানির এমডিও ছিলেন এই খোরশেদুল। দীর্ঘ ১৫ বছর নিয়ম লঙ্ঘন করে একই সঙ্গে তিনটি কোম্পানির এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তবে ২০২৩ সালের ৭ মে নর্থওয়েস্ট থেকে সরে এলেও বিসিপিসিএল এবং বিসিআরসিএল নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের এমডি আছেন। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় নেওয়া ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রই নির্মাণ হয়েছে খোরশেদের শাসনামলে। নর্থওয়েস্ট ছাড়লেও এখন ৭২ বছর বয়সেও বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রতিষ্ঠানের এমডির পদ আঁকড়ে রেখেছেন তিনি। জানা যায়, সিরাজগঞ্জে নর্থওয়েস্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। আর এমডি হিসেবে পুরো প্রকল্প দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করেন খোরশেদ। ওই সময়েই পরিচয় হয় জান্নাত আরা হেনরীর সঙ্গে। স্কুলমাস্টার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া আওয়ামী লীগের এই এমপিকে ঠিকাদারির পথ দেখান খোরশেদ। প্রতিষ্ঠা করা হয় লাম এন্টারপ্রাইজ। যার মালিক হিসেবে নাম রয়েছে হেনরীর স্বামী লাবু তালুকদারের। এ প্রতিষ্ঠানের নামে ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপুল পরিমাণ উন্নয়নকাজ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিশেষ করে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে একচেটিয়া কাজ করত লাম এন্টারপ্রাইজ। নিজের বেতন নিজের মতো করেই বাড়িয়ে নিয়েছেন খোরশেদুল। মাদার কোম্পানি নর্থওয়েস্টের এমডির বেতন স্কেল ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সেখানে বিসিপিসিএলের এমডি হিসেবে খোরশেদ বেতন নেন গ্রেড-২ অনুসারে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া বিসিআরইসিএলের এমডি হিসেবেও বেতন নেন প্রায় ৭ লাখ টাকা। অথচ একই মানের অন্য কোম্পানিগুলোর বেতন স্কেল ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। কেবল নিজেরই নয়, ঊর্ধ্বতন বাকি তিনটি পদ, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা, প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা এবং প্লান্ট ম্যানেজার পদেও বিশেষায়িত বেসিক তৈরি করে নিয়েছেন। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র (বিসিপিসিএল)-এর সমমনা সব কোম্পানির যেমন—আশুগঞ্জ, আরপিসিএল, বিআর পাওয়ার জোন প্রভৃতি কোম্পানির বেতন স্কেল এর চেয়ে অনেক কম। জানা যায়, লাম এন্টারপ্রাইজের পাশাপাশি রাশ অ্যাসোসিয়েটস, ইরা কনস্ট্রাকশন, সালাম এন্টারপ্রাইজ, সুরাইয়া এন্টারপ্রাইজের নামেও দরপত্রহীন বিপুল পরিমাণ কাজ দেন খোরশেদ। তথ্য বলছে, উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লাম এন্টারপ্রাইজের মালিক জান্নাত আরা হেনরী। বাকি কোম্পানিগুলো হেনরী তাদের নিকটাত্মীয় এবং অনুগতদের নামে নিবন্ধন নিয়েছেন। ফলে পায়রাসহ নর্থওয়েস্টের নিয়ন্ত্রিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সব সাব-কন্ট্রাক্টের কাজ করেন মূলত হেনরী। বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিওতে দেখা যায়, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন হেনরী। সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পায়রার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, এমডি খোরশেদুলের আস্থাভাজন হওয়ায় হেনরী ছিলেন সমালোচনার ঊর্ধ্বে। অনেকটা নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মতো ব্যবহার ছিল পায়রায়। তারা বলছেন, পায়রার সব অনুষ্ঠানে নিয়মিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ ছিল হেনরীর। অথচ একজন ঠিকাদার হিসেবে এটি নিয়ম লঙ্ঘন। অপারেশন এবং মেইনটেনেন্স বিভাগে বিদেশি শ্রমিকের পাশাপাশি দুই শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন। যাদের সরবরাহ করেছে লাম এন্টারপ্রাইজ। জান্নাত আরা হেনরীর স্বামী লাবু তালুকদার এসব দেখভাল করেন। তথ্য বলছে, এসব শ্রমিকের বেতন দেওয়া হয় টাকায়। তবে নথি অনুসারে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয় ডলারে। কর্মকর্তারা বলছেন, বছরের পর বছর শ্রমিকদের বেতন ডলারে দেখানো হচ্ছে। তারা প্রশ্ন রাখেন, শ্রমিকদের বিপরীতে ডলারে বেতন দেখানো হলেও সেই ডলার বিদেশে পাচারের মতো ঘটনা থাকতে পারে। নথি বলছে, সিরাজগঞ্জ, ভেড়ামারা, খুলনা এবং পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পূর্ত কাজে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পায় ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স (এনডিই)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আশরাফুল ইসলাম খোরশেদুল আলমের নিকটাত্মীয়। এনডিইতে প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করতেন শাহ মাওলা। পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই শাহ মাওলাকে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্লান্ট ম্যানেজার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। যদিও পায়রায় এনডিইয়ের বিপুল পরিমাণ ঠিকাদারি কাজ বিদ্যমান। অনিয়ম কেবল এখানেই থেমে নেই। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই খোরশেদের আমলে নর্থওয়েস্টের বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৩শ-এর বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রেও পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে। তথ্য বলছে, এসব নিয়োগের বেশিরভাগই সিরাজগঞ্জ এবং জামালপুরের বাসিন্দা। কারণ খোরশেদ-ঘনিষ্ঠ হেনরী সিরাজগঞ্জের এমপি ছিলেন। আর খোরশেদের গ্রামের বাড়ি জামালপুরে। এ ছাড়া সাবেক মুখ্য এবং বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদের বাড়িও জামালপুর। নিয়োগ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগ দেওয়াদের ক্ষেত্রে মানা হয়নি চাকরি বিধিমালা। শিক্ষাগত যোগ্যতা, আওয়ামী মতাদর্শ, ভুয়া সার্টিফিকেট, বয়স চুরি, এনআইডি কার্ডের ভুল তথ্য, ১৮ বছরের কম এবং ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক প্রার্থীদেরও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নর্থওয়েস্ট এবং পায়রার জিএম মামুনুর রহমান মণ্ডলের ভাগিনা আতাউর, ভাই রকিবুল, আনোয়ার মণ্ডলকে চাকরি দেওয়া হয়েছে নিয়োগবিধি উপেক্ষা করে। তার আরও কয়েকজন স্বজন নর্থওয়েস্টের আওতাধীন বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরিরত। ডিজিএম এনামুলের ভাতিজা নাহিদ, সাবেক ইডির (প্রকৌশল) মেয়ের জামাতা রবিউল, রবিউলের বোন জামাতা, এনডব্লিউপিজিসিএলের ইডির (পিঅ্যান্ডডি) শ্যালক, সিরাজগঞ্জ ২২৫ মেগাওয়াটের সাবেক পিডি জাহাঙ্গীরের দুই ভাই, হলমার্কের হেনরীর মেয়ের জামাতা, কাজের লোকের ছেলে, ঠিকাদার ইরা কনস্ট্রাকশনের মালিক তুহিনের মেয়ে, সাবেক বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ারের ছেলে, পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে, দুদকের সাবেক কমিশনার আমিনুল ইসলামের ছেলে, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (এনডব্লিউপিজিসিএল) মিজানুর রহমানের ছেলে, সিরাজগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাবেক পিডি জাহাঙ্গীরের ছেলে, নির্বাহী পরিচালক অর্থ (এনডব্লিউপিজিসিএল) আখতারের ছেলে, নির্বাহী পরিচালক মাসুদুল আলমের ভাগিনা, বিআরইবি বোর্ড মেম্বারের মেয়ের জামাতা, সাবেক দুদক সচিবের ভাতিজা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার আত্মীয়স্বজন, এনডব্লিউপিজিসিএলের বোর্ড মেম্বার সাদরুলের ছেলে, এমডির নিজ এলাকার কয়েকজনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সহকারী প্রকৌশলী পদে মাহফুজ কিরণ, এমডির মামাতো ভাই এনামুল কবির, সাব-ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার ইনজামাম, মোতাসিম বিল্লাহসহ অনেককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ম্যানেজমেন্ট পদের নিয়োগেও হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম, প্রকল্প পরিচালকের ভাই শাহ আবদুল হাসিবকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে, নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক নুরকে চাকরি দেওয়া হয়েছে আরইবি বোর্ড মেম্বারের সুপারিশে, ঠিকাদার এনডিইয়ের প্রকৌশলী রেজওয়ান ইকবাল খানকে চাকরি দেওয়া হয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে। পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্পে গাছ লাগানো, ঘাস পরিষ্কার করা, ফুলের বাগান করা, ফলের বাগান করা, বিভিন্ন ধরনের বিউটিফিকেশনের নামে এমডির বিশ্বস্ত সিরাজগঞ্জের ২২৫ মেগাওয়াট-এর সাবেক পিডি জাহাঙ্গীরকে কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হয়েছে, এসডব্লিউপিজিসিএলের সাবেক অর্থ কর্মকর্তা, ৬০ বছর বয়সে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর বিশেষায়িত স্কেলে (৪.৫ লাখ বেসিক) প্রধান অর্থ কর্মকর্তা পদে নতুন করে বিসিপিসিএলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এনডব্লিউপিজিসিএলের জিএম মামুনুর রহমান মণ্ডলসহ ১৫ থেকে ২০ জন ব্যক্তি একসঙ্গে তিনটি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেন (এনডব্লিউপিজিসিএল, বিসিপিসিএল, বিসিআরইসিএল), অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে সরকারি বিধি না মেনে তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন, বোনাস, এপিএ বোনাস, প্রফিট, ইনসেনটিভসহ ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা বছরে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অতিরিক্ত আদায় করে নেন, যা আইনি সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন। পায়রা তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালনা পর্ষদের দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান পদে ছিলেন সাবেক সরকারের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। বিদ্যুৎ সচিবের পদাধিকার বলে ২০১৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন, বিদ্যুৎ সচিব পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পরও তিনি চেয়ারম্যান পদ দখল করে রেখেছিলেন। ২০২০ সালে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে যায়, ২০২০-২০২১, ২০২১-২০২২, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে কোম্পানি প্রফিট অর্জন করে; কিন্তু ওই সময়ে ২০২১ সালে ড. আহমদ কায়কাউসের একক নির্দেশে সরকারের শ্রম আইন লঙ্ঘন করে পায়রা বিদ্যুৎ প্রশাসন ডব্লিউপিপিএফ স্থগিত করা হয়। ফলে এই ফান্ডের প্রায় ২০৭ কোটি টাকা আটকে যায়। যার এখন হদিস নেই বলে জানান পায়রা তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের কর্মকর্তারা। নথি বলছে, চুক্তির বাইরেও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের খুশি করতে কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিলাসবহুল ক্যান্টিন। প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে এই ক্যান্টিন নির্মাণে। এ ছাড়া পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে রয়েছে এক্সিকিউটিভ রেস্ট হাউস ও ভিআইপি রেস্ট হাউস। তবে এর বাইরেও প্রায় ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্যে নির্মাণ করা হয়েছে ভিভিআইপি রেস্ট হাউস। তথ্য বলছে, অস্বাভাবিক ব্যয়ে নির্মিত এই দুটি স্থাপনা নির্মাণ করেছে বিতর্কিত সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরীর লাম এন্টারপ্রাইজ। তবে স্থাপনা দুটির অস্বাভাবিক ব্যয় দেখে ব্যয়ভার বহন করতে শুরুতে অপারগতা প্রকাশ করেছিল পিডিবি। এ ছাড়া চুক্তিতে তিনটি কয়লা সংরক্ষণাগার তৈরির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখানেও নির্মাণে নেওয়া হয়েছে চতুরতার আশ্রয়। নির্মাণ করা হয়েছে চারটি কয়লা সংরক্ষণাগার। এসব বিষয়ে জানতে আলোচিত কর্মকর্তা এ এম খোরশেদুল আলমকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে প্রশ্ন লিখে মেসেজ পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।