‘অনেক চেষ্টা করেও অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারলাম না’

প্রকাশিতঃ অক্টোবর ৯, ২০২৪ | ১০:১৫ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

‘খুব সম্ভবত এই পৃথিবীতে আজকে আমার শেষ দিন। সবকিছু কেমন যেন অসহনীয় হয়ে উঠছে। মনে হয় কোনো কিছুর অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে আছি। অনেক চেষ্টা করেও অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারলাম না।’ সুইসাইড নোটে এমনই কথা লিখে আত্মহত্যা করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার নিজ গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে গলায় রশি প্যাঁচিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার বাবা ইসমাইল হোসেন। ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জের ইসমাইল হোসেনের পুত্র আদনান ফেরদৌস বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আদনান প্রথমে ভর্তি হন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে। পরে দ্বিতীয়বার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন; কিন্তু প্রথম বর্ষে ইয়ার ড্রপ করলে আদনান ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে নিয়মিত ক্লাস করেন। সর্বশেষ তিনি ওই বর্ষে পরীক্ষার ফরমও পূরণ করেন। তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় বিভাগে পড়াশোনা স্থগিত করে দেশের বাহিরে পড়াশোনা করতে যাওয়ার কথা ভেবে ৪-৫ মাস আগ থেকে তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করেছেন। পরে মঙ্গলবার রাতে একটি সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেন তিনি। সুইসাইড নোটে আদনান লেখেন- খুব সম্ভবত এই পৃথিবীতে আজকে আমার শেষ দিন। সবকিছু কেমন যেন অসহনীয় হয়ে উঠছে। মনে হয় কোনো কিছুর অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে আছি। অনেক চেষ্টা করেও অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারলাম না। ছোটবেলা থেকেই নিজেকে কখনই গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারি নাই। আজকেও হয়তো গুছিয়ে কিছু লিখতে পারব না। শুধু দিনশেষে এইটুকুই উপলব্ধি করতে পারলাম মানুষ হিসেবে আমি ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার কারণ খুজঁতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি অতল এক গহ্বরে। আমি নিজে মানুষ হিসেবে কেমন তা জানি না। হয়তো অনেক খারাপ নয়তো ভালো। তবে একটা বিষয় একেবারে শিউর যে আমি আমার আশপাশের সবার জন্য একটা বোঝা। অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখছিলাম, কিন্তু কিসের জন্য যেন সবকিছু খাপছাড়া লাগে। কিসের অভিশাপে যে অভিশপ্ত এর উত্তর হয়তো কখনই জানা হবে না। আমি হাত দিয়ে যা ছুঁই তাই দুঃখ হয়ে যায়- এই লাইনটা বোধহয় আমার জন্যই। সবশেষে এইটাই উপলব্ধি করতে পারলাম যে কারও সমস্যার কারণ বা সবার বোঝা হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো। জানি না মৃত্যু আমাকে সাদরে গ্রহণ করবে কিনা, তবুও আমি আশাবাদী। এই ছোট্ট জীবনে যদি আমার আচরণে বা ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে নিজগুণে ক্ষমা করবেন আশা করি। সবাই ভালো থাকবেন। ওহ সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কথা আমার মৃত্যুর জন্য আমি নিজেই দায়ী। এই বাস্তবতা আমার দরকার নাই। এই বাস্তবতা থেকে আমি মুক্তি চাই। বাস্তবতার বেড়াজালে আর আটকে থাকতে চাই না। আমার লাশ পোস্টমর্টেম না করার জন্য অনুরোধ রইল- ইতি আদনান। এ বিষয়ে আদনানের বাবা ইসমাইল হোসেন বলেন, আদনান দীর্ঘদিন যাবত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। তার চিকিৎসাও চলছিল; কিন্তু গতকাল হঠাৎ সে দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছে। এ সময় তিনি সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া কামনা করেন। এদিকে আদনানের অকালমৃত্যুতে বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, আদনান অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তার বাবার অনুরোধে আমি তাকে কাউন্সিল করতাম। আজ হঠাৎ তার মৃত্যু সংবাদে আমরা ট্যুরিজম পরিবার খুবই মর্মাহত। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।