নির্বাচন কমিশনের ডেটা সেন্টারের (এনআইডি) ১১ কোটিরও বেশি নাগরিকের ৪৬ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্যের মিরর কপি তৈরি করে দেশি-বিদেশি ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের অভিযোগ উঠেছে। চুরির এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি হচ্ছেন ডাটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ। বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর কাফরুলের উত্তর কাজীপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এদিকে এনআইডির তথ্য বিক্রির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ আরও ১৯ জনের মঙ্গলবার রাতে কাফরুল থানায় মামলা করেছেন এনামুল হক নামের এক ব্যক্তি। বুধবার বিকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। গত ৪ সেপ্টেম্বর ‘রাষ্ট্রীয় সহায়তায় নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তালেবুর রহমান বলেন, ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর এনআইডি যাচাই সেবা গ্রহণ বিষয়ে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের মধ্যে চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল নির্বাচন কমিশনের তথ্যউপাত্ত অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবে না। চুক্তি অনুযায়ী ১১ কোটিরও বেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের মিরর কপি করে ২০১৯ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলকে প্রদান করা হয়। কিন্তু চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের মিরর কপি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিস লিমিটেড নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটিকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য প্রদান করে। ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি নাগরিকদের ব্যক্তিগত এই তথ্যসমূহ ‘পরিচয়’ নামে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ১৮০ টিরও বেশি দেশি-বিদেশি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে আসছে। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সংরক্ষিত ১১ কোটিরও বেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সংবলিত ডাটা সেন্টারটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসাবে প্রজ্ঞাপন দ্বারা স্বীকৃত। চক্রটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে উপাত্ত ভান্ডারের (ডাটাব্যাজের) অনুলিপি সংগ্রহ করে স্থানান্তর করে এবং ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক প্রতারণা করে। কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, মামলায় জয়, পলকসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হযেছে। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ‘রাষ্ট্রীয় সহায়তায় নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, এনআইডি তথ্যভান্ডার থেকে অন্তত ৫ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপন তথ্য বিক্রি হয়েছে। এসব তথ্য বিক্রি করে আসছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘পরিচয়’। ‘সরকারি ই-সেবা’ দেওয়ার নামে নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডারের ডেডিকেটেড সংযোগ এপিআই (অ্যাপলিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস) নেয় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ওই সংযোগ ব্যবহার করেই জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বিক্রি করে আসছে পরিচয় প্ল্যাটফরম। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিসিসিকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের এপিআই ব্যবহার করে শুরু থেকে এ পর্যন্ত কতজন নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই ও বিক্রি করা হয়েছে, এর সঠিক পরিসংখ্যান ইসির কাছে নেই। এক হিসাবে দেখা যায়, ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর থেকে গত ৩০ জুন পর্যন্ত ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৯৭ হাজার ১৬৮টি তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করেছে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর পর্যন্ত তিন বছর আড়াই মাসে তথ্যভান্ডার থেকে কত সংখ্যক তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করা হয়, এর হিসাব ইসির কাছে নেই।