শরতের এই স্নি গ্ধ সময়ে এসেছে আরাধনার কাল। অশুভ শক্তির বিনাশ সাধন করে পৃথিবীকে শান্তিময় করে তুলতে এবং মানবের কল্যাণে আবিভর্‚ত হয়েছেন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। মহাষষ্ঠীতে ভক্ত-অনুরাগীদের ঢাকঢোল, কাঁসা-শঙ্খের আওয়াজ ও উলুধ্বনিতে মাতৃরূপী দেবীর আবাহন করা হয়েছে সারা দেশে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মন্দিরে, মণ্ডপে তাই এখন উৎসবমুখর আমেজ। দেবীভক্তদের পদচারণায় মুখরিত। বুধবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হলো এবারের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। সকাল ৯টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুর্গামণ্ডপের সামনের বেলত ল্লায় চণ্ডীপাঠ ও চণ্ডীপূজা হয়। এতে ছিল নানা রকম ফল আর ফুলের বাহার। ঘণ্টা, কাঁসর, শঙ্খ, ঢোলের বাদ্যে মুখরিত হয় চারিপাশ। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ষষ্ঠীর সকালে বেলত ল্লায় চণ্ডীপাঠ ও চণ্ডীপূজা হলো। সন্ধ্যায় বেলত ল্লায় দুর্গাদেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। প্রার্থনার পরিপ্রেক্ষিতে দেবী ঘটে এসে অবস্থান নেন। পরে সেই ঘট,বেলপাতা, ডালসহ নবপত্রিকা মূল মন্দিরে স্থাপন করা হয়। এবার সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তরা আসতে শুরু করেন। ভক্তদের বাসনা পৃথিবী থেকে সব অশুভ বিনাশ করে শান্তির বার্তা দিবেন দুর্গতিনাশিনী। ঢাকেশ্বরী দুর্গামণ্ডপ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে খুলে দেওয়া হয়। তার আগে থেকেই ভক্ত ও দর্শনার্থীরা পূজামণ্ডপে আসতে থাকেন। তারা এসে ভক্তিভরে প্রণতি করছেন। আজ বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমী। কাল শুক্রবার মহাষ্টমী ও শনিবার মহানবমী। পঞ্জিকামতে, এবার শনিবার মহানবমী পূজার পরই দশমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। বিজয়া দশমী উদযাপন করা হবে আগামী রোববার। সেদিন বিকালে বিজয়া শোভাযাত্রা বের হবে। সনাতনী শাস্ত্র অনুযায়ী, এ বছর দেবী দুর্গার আগমন হবে দো ল্লায় বা পালকিতে। পালকি বা দো ল্লায় দেবীর আগমন বা গমন হলে এর ফল হয় মড়ক। খাদ্যশস্যে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হবে ও রোগব্যাধি বাড়বে। এ ছাড়া দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। শাস্ত্র মতে, দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফ ল্লাফল হয় ছত্রভঙ্গ। এটা সামাজিক ও রাজনৈতিক এলোমেলো অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। উলেখ্য, গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মাধ্যমে দেবীপক্ষ ও শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্নের শুরু হয়। নির্বিঘেœ দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হবেÑর্যাব ডিজি : র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) একেএম শহিদুর রহমান বলেছেন, দেশের মানুষের সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খ ল্লা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে। অন্যবারের তুলনায় এবার দুর্গাপূজা অত্যন্ত ভালোভাবে উদ্যাপিত হবে। বুধবার বনানী পূজামণ্ডপে র্যাবের নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। র্যাব মহাপরিচালক বলেন, আমরা বাঙালি জাতি বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব অত্যন্ত আনন্দ, উৎসাহ ও উদ্দীপনার মাধ্যমে উদ্যাপন করে থাকি। এবারের পূজাতেও আমরা সবাই মিলে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করব। এবারের পূজা উপলক্ষ্যে ১ অক্টোবর থেকে র্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সাদা পোশাকে থাকা র্যাব সদস্যরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছেন। র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খ ল্লা বাহিনীর ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। এবার নিরাপত্তা বিধানের জন্য আইনশৃঙ্খ ল্লা বাহিনীর সঙ্গে বিশেষভাবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। আশা করছি, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই অত্যন্ত সুন্দরভাবে এবারের পূজা উদ্যাপন হবে। গুলশান-বনানী পূজা ফাউন্ডেশনের সভাপতি জেএল ভৌমিক বলেন, র্যাব মহাপরিচালক যে আশার বাণী শোনালেন, তার আলোকরশ্মি আমরা দেখতে পাচ্ছি। অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে শুধু এখানে নয়, সারা দেশে ৩২ হাজারের বেশি স্থানে পূজা হচ্ছে এবার। প্রতিটি মণ্ডপে র্যাবের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।