ফিলিস্তিনের গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) এ দাবি করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের বিপক্ষে হামলা জোরদার, যোদ্ধা তৈরি, গাজার সীমান্তে অস্থিশীলতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য হামাস প্রধান হওয়ার আগে থেকেই ইয়াহিয়া সিনওয়ার কালো তালিকাভুক্ত ছিলেন। ইসমাইল হানিয়াহ নিহতের পর তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন সিনওয়ার। গত ৩১ জুলাই সকালে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার খবর জানা যায়। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসমাইল হানিয়াহ গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। এরপর গোষ্ঠীটির চরম শোকের মুহূর্তে সিনওয়ার দায়িত্ব নেন। স্থানীয়ভাবে আবু ইব্রাহিম নামেও পরিচিত সিনওয়ার। তিনি ১৯৬২ সালে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে জন্মগ্রহণ করেন। তার বয়স যখন ১৯ তখন ইসলামী আন্দোলনের জন্য প্রথমবার ইসরায়েল তাকে গ্রেপ্তার করে। কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে ২৫ বছর বয়সে ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি হামাসের নিরাপত্তা শাখা আল-মাজদ প্রতিষ্ঠা করেন। এই শাখার সদস্যরা তথাকথিত নৈতিকতা বিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্তদের এবং ইসরায়েলের সাথে সহযোগিতা করার জন্য সন্দেহভাজনদের ওপর দমন-পীড়ন, নির্যাতন চালায়। ১৯৮৮ সালে তাকে ইসরায়েলি বাহিনী আবারও গ্রেপ্তার করে। বিচারে সিনওয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দণ্ডিত হন। কিন্তু ২০১১ সালে গাজায় হামাসের হাতে বন্দী থাকা একজন ইসরায়েলি সৈনিকের বিনিময়ে মুক্তি পান ১ হাজার ২৭ ফিলিস্তিনি বন্দী। তাদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলার পরিকল্পনাকারী ছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার; আইডিএফ এমনটিই বিশ্বাস করে। এর প্রমাণ হিসেবে তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। বলা হয়, তিনিই ছিলেন সেই হামলার মাস্টারমাইন্ড। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ও অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিনবেট যৌথ বিবৃতিতে সিনওয়ার নিহত হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছে। এর আগে তার মরদেহের দাঁত ও ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাপ্ত মরদেহটি সিনওয়ারের বলে নিশ্চিত হওয়ার দাবি করে ইসরায়েল। তবে এখনও হামাস এ ব্যাপারে কোনো বিবৃতি দেয়নি। ইসরায়েলের দাবি অস্বীকারও করেনি। এর আগে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের তিন যোদ্ধার মরদেহ উদ্ধার করে ইসরায়েলি সেনারা। তখনই ধারণা করা হয়, এদের একজন সশস্ত্র গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক শাখার নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার। দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়, এক সম্মুখ যুদ্ধে তারা গাজায় তিন সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে। তার মধ্যে একজন হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মতো দেখতে। কিন্তু তখন তারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিয়ে মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করে ইসরায়েলে পাঠায়। সেই পরীক্ষার ফলাফল হাতে এলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় আইডিএফ।