শুল্ক ফাঁকি দিতে অভিনব কৌশল নিয়েছে র্যাংকন গ্রুপের র্যাংকন মোটরবাইক লিমিটেড। দেশীয় শিল্প বিকাশের স্বার্থে সরকার রাজস্ব সুবিধা দিলেও শর্ত ভঙ্গ করে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা প্রজ্ঞাপনের শর্ত ভঙ্গ করে মোটরসাইকেলে পার্টসের পরিবর্তে সম্পূর্ণ ইঞ্জিন আমদানি করেছে। যার প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি ১৫১ পণ্য চালানে সিপিসি জালিয়াতির কারণে সরকারের প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা করছেন শুল্ক কর্মকর্তারা। এই কারণে প্রতিষ্ঠানটির সিপিসি বা রাজস্ব সুবিধা বাতিল করে পুনঃশুল্কায়নের সুপারিশও করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, র্যাংকন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান র্যাংকন মোটরবাইক লিমিটেড দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনের জন্য পার্টস আমদানিতে সরকার রাজস্ব সুবিধা দিয়ে আসছে। এই সুবিধার অপব্যবহার করে গত ২৬ জুন থেকে তিন মাসে ১২৩টি পণ্য চালান আমদানি করেছে। রাজস্ব সুবিধার শর্ত ভঙ্গ করে কোম্পানিটি পার্টসের পরিবর্তে পুরো ইঞ্জিন আমদানি করেছে। এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে এসব চিত্র উঠে এসেছে। এজন্য র্যাংকন মোটরবাইকের ২৮টি পণ্য চালান আটক করেছে। একই সঙ্গে গত পাঁচ বছরের সিপিসি সুবিধায় আমদানি করা পণ্য চালান অডিটের সুপারিশ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যেসব কর্মকর্তা এই সুবিধা দিয়েছেন, তাদের কাছে ব্যাখ্যা তলবের সুপারিশও করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাংকন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রমো রউফ চৌধুরীর সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে তার মোবাইল ফোনে বিষয়টি উল্লেখ করে খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। সূত্র জানায়, র্যাংকন মোটরবাইকস লিমিটেড মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান-১-এর সুবিধায় পার্টস আমদানি করে মোটরসাইকেল উৎপাদন করে। এই রাজস্ব সুবিধার শর্ত হলো কোম্পানিটি স্থানীয় বাজার থেকে ব্ল্যাংক ক্র্যানক কেস (লেফট বা আপার), ব্ল্যাংক ক্র্যানক (রাইট বা লেফট), ব্ল্যাংক সিলিন্ডার হেড, ব্ল্যাংক সিলিন্ডার ব্লক, কমপ্লিট ক্র্যানক শিফট এবং আদার ইঞ্জিন পার্টস স্থানীয় বাজার থেকে আমদানি বা ক্রয় করতে হবে। কোম্পানিটি শুল্ক ফাঁকি দিতে এসব শর্ত লঙ্ঘন করে কমপ্লিট ইঞ্জিন আমদানি করেছে। সরকারের বড় অঙ্কের শুল্ক ফাঁকি দিতে এই অবৈধ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে র্যাংকন মোটরবাইক লিমিটেড। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি নন-কমপ্লায়েন্স; তাই রাজস্ব সুবিধা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলেও মনে করে শুল্ক গোয়েন্দা। তাই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পাওয়া রাজস্ব সুবিধা বাতিলেও সুপারিশ করা হয়েছে শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে। এনবিআরের এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রজ্ঞাপনের শর্ত ভঙ্গ করার পরও র্যাংকন মোটরবাইক লিমিটেডকে যেসব কর্মকর্তা শুল্কায়ন করেছেন, তাদের তলব করে ব্যাখ্যা চাইতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া এই ধরনের রাজস্ব সুবিধাপ্রাপ্ত যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে প্রজ্ঞাপন লঙ্ঘন করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে কি না, তা জানতে অডিটের মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের সুপারিশ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। মিথ্যা সিপিসি ঘোষণায় পণ্য চালান আমদানি করা কাস্টমস আইন-২০২৩-এর ৩৩ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই কারণে র্যাংকন মোটরবাইক খালাস করা যেসব শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে, তা আদায়ের জন্য আইনি পদক্ষেপ নিতেও সুপারিশ করা হয়েছে শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার জাকির হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে সবেমাত্র আমি জয়েন করেছি; তাই বিষয়টি আমার জানা নেই।’ সংশ্লিষ্ট গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানার পরামর্শ দেন। পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার নুসরাত জাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সিঅ্যান্ডএফ ও সংশ্লিষ্ট গ্রুপের সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন। শুল্ক কর্মকর্তারা বলছেন, র্যাংকন মোটরবাইক লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের সিপিসি জালিয়াতি করে আসছে। শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আর যেসব কর্মকর্তা অসত্য সিপিসি ঘোষণায় শুল্কায়ন করেছে, তাদের সহযোগিতায় এ ধরনের অনিয়ম ঘটে থাকতে পারে বলেও মনে করেন তারা। শুল্ক গোয়েন্দার কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, সংশ্লিষ্ট গ্রুপের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাইলে প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে। মিথ্যা সিপিসির কারণে সরকারের রাজস্ব আদায় করতে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা।