ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আড়িয়ালখাঁ নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন যেন থামছে না। দুইটি প্রভাবশালী চক্র ক্ষমতার দাপটে মাসের পর মাস চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ কর্মকান্ড। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা। বালু উত্তোলনের ফলে নদী তীরবর্তি এলাকার বাড়িঘর হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে, রাস্তা ঘাট ভেঙে যাচ্ছে । এদের ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাউলীবেড়া ইউনিয়নের চরমুকডোবা ও চরদুয়াইড় এলাকায় চলছে অবৈধ বালু ব্যবসা। কোনো মতেই থামানো যাচ্ছেনা তাদের দৌরাত্ম। প্রতিদিন ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের পর ট্রাকে করে বিক্রি করে চলেছে চক্রটি। এতে তারা কামিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা। এ নিয়ে গত ৪দিন আগে স্থানীয় প্রভাবশালী মাইনুল ইসলাম খাঁন রিপনের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষকে ১০ জন আহত করা সহ ড্রেজার ও ট্রলার পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাতে বালু ব্যবসায়ী সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরীর দুই সমর্থককে আটক করে বুধবার দুপুরে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। এর আগে সোমবার রাতে (২১ অক্টোবর) রিপন, কুটি, সরোয়ার তাদের লোকজন নিয়ে শাহজাহান, সুরুজের ট্রলারে হামলা ও অগ্নি-সংযোগ করে। আটক বালু ব্যবসায়ীরা হলো, ভাঙ্গা উপজেলার কাউলীবেড়া ইউনিয়নের চরমুকডোবা গ্রামের মৃত্যু মোফাজ্জেল হোসেন খাঁনের পুত্র মাইনুল ইসলাম খাঁন রিপন (৫২) ও দোয়াইর গ্রামের মৃত্যু শাজাহান তালুকদারের পুত্র খালিদ হোসেন ওরফে কুটি তালুকদার(৪৭)। এলাকাবাসী জানায়, আড়িয়ালখাঁ নদীর চর থেকে অবৈধ ভাবে এলাকার দুইটি শক্তিশালী গ্রুপ বালু উত্তোলন করে আসছে। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় রিপন, কুটি ও সরোয়ার ও অপরটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় নাসিরাবাদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান ও সুরুজ মেম্বার । সবচেয়ে বড় ক্ষমতাশালী সাবেক সংসদ মজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন সমর্থক মাইনুল ইসলাম খান রিপন বালু ব্যবসা করে। রিপনের ভাই একজন পুলিশ অফিসার। তাছাড়া রিপনের কাছে অস্ত্র রয়েছে । সরকারি ভাবেও ২টি অস্ত্র রয়েছে। রিপন তার ভাইকে দিয়ে পুলিশের মামলা দেয়ার ভয় দেখায়। তাই আমরা এলাকাবাসী তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাইনা। ৪/৫ দিন পূর্বে রিপন, কুটি, সরোয়ার সহ তাদের লোকজন নিয়ে শাহজাহান ও সুরুজের ট্রলারের লোকজনের উপর হামলা করে। একটি ট্রলার সহ একটি ড্রেজার মেশিন পুড়িয়ে দেয়। হামলায় ১০/১২ জন লোক আহত হয়। দুইটা গ্রুপ অবৈধ ভাবে আড়িয়ালখাঁ নদীর চর থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার বালু উত্তোলন করে ভাঙ্গা সহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে আসছে। আমাদের এলাকার পাকা রাস্তা বাড়ি ঘর খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । এই দুই গ্রুপের ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এলাকাবাসী এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানান। এখানে সরকার ইজারা দিলে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় আসতো কিন্তু অবৈধভাবে এলাকার ক্ষমতাশালীরা সরকারকে ফাঁকি দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এ বিষয় অভিযুক্ত বালু ব্যবসায়ী মাইনুল ইসলাম খাঁন রিপনের ভাই এস,আই মাসুদ বলেন, আমি ঢাকায় কর্মরত আছি। আমার ভাই রিপন আমাদের জায়গা থেকে বালু কেটে আমাদের জায়গায় বালু রেখে ব্যবসা করে। এছাড়া এলাকার মাসুদ, কুদ্দুস, শাজাহান তারাও বালু ব্যবসা করে। আপনারা শুধু আমাদের দিকে নজর দিলেন কেন আরো তো অনেক লোক আছে। একটা চক্র আমাদের সম্মান ক্ষুন্ন করার জন্য আমাদের পিছে লেগেছে। আরেক অভিযোগ নাছিরাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান খাঁন বলেন, আমি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করি না। রিপন, সরোয়ার ও ফিরোজ, সোহেল বরিশাল থেকে ভাড়ায় এনে বালু উত্তোলন করে । আর শুনেছি ৪/৫ দিন আগে সুরুজ মেম্বারের ট্রলারে হামলা ও মারধর করে। একটি ট্রলার সহ ড্রেজার মেশিনটি পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি মিফকাতুল জান্নাত রাবেয়া বলেন, আজকে আমার কাছে কয়েকটি অভিযোগ আসছে এবং আপনার মাধ্যমে শুনেছি। আমি ঘটনা স্থলে যাচ্ছি। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন কারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মোকসেদুর রহমান জানান, আমি ভাঙ্গা উপজেলার বালিয়াহাটি এলাকায় রিপন, শাহজাহান ও সোহেল গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে আড়িয়ালখাঁ নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে। এঘটনায় আমার নিকট কোন অভিযোগ করে নাই। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।মঙ্গলবার রাতে দুইজনকে আটক করেছি। আটকৃত আসামিরা সাবেক এমপি চৌধুরীর সমর্থক ও আওয়ামীলীগের কর্মী বলে জানা যায়। তাছাড়া আসামিদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ছাত্র বিরোধী আন্দোলনের সময় তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বুধবার দুপুরে আসামীদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তাছাড়া আতকিত আসামের বিরুদ্ধে আরো অনেক মামলা রয়েছে।