রপ্তানিযোগ্য পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার সৃষ্টির কৌশলের অংশ হিসেবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ব্যবস্থাপনায় ও সহযোগিতায় দেশ-বিদেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ করা হয়; কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অবহেলায় বিদেশের এসব বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণের ইপিবির কার্যক্রম ধীর গতিতে চলছে। তবে ব্যুরো কর্তৃপক্ষের দাবি, মন্ত্রণালয়ের ভূতাপেক্ষ (পূর্ববর্তী তারিখ) অনুমোদন সাপেক্ষে মেলা কার্যক্রম চলছে, কিন্তু নতুন সম্ভাবনাময় মেলাগুলোতে অংশগ্রহণ কিছুটা দোদুল্যমান। এতে করে মেলা ক্যালেন্ডার মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত না হওয়ায় বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বিঘ্নিত হতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্থবছরের শুরুতেই বার্ষিক মেলা ক্যালেন্ডার তৈরির অংশ হিসেবে এসব মেলার একটি তালিকা চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ের বোর্ড সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অবহেলায় চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) চার মাস অতিক্রান্ত হলেও ক্যালেন্ডার তৈরির কাজ শেষ হয়নি। ক্যালেন্ডার অনুমোদনের জন্য ইপিবির পক্ষ থেকে মৌখিক তাগাদা ও পত্রের মাধ্যমে অনুরোধ করা হলেও আশাব্যঞ্জক ফলাফল মেলেনি। বরং ভূতাপেক্ষ অনুমোদনে নিয়মিত মেলায় অংশগ্রহণ চালু থাকলেও নতুন সম্ভাবনাময় ও গুরুত্বপূর্ণ মেলাগুলোতে ‘আর্লি বার্ড অফার’ কার্যক্রমের সুবিধা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন প্রাইম লোকেশন প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ইপিবি সূত্র জানায়, সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদেশে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে এসব মেলায় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ। এসব মেলা থেকে তাৎক্ষণিক পণ্যের রপ্তানির আদেশ যেমন পাওয়া যায় তেমনি মেলে রপ্তানির প্রতিশ্রুতিও। এ বিষয়ে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, বার্ষিক ক্যালেন্ডার অনুমোদিত হয়নি। আমরা নিয়মিত মেলাগুলোতে অংশগ্রহণ করছি, তবে ভূতাপেক্ষ অনুমোদন সাপেক্ষে। আশা করছি আসন্ন বোর্ড সভায় ক্যালেন্ডার অনুমোদন হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের খরচ বাঁচাতে মেলাগুলোতে ব্যবসায়িক প্রতিনিধিরা যাচ্ছেন, মেলায় অংশগ্রহণে ব্যুরোর পক্ষ থেকে প্রণোদনাও অব্যাহত আছে। আর্লি বার্ড অফারের বিষয়েও আমরা ইপিবির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। ইপিবির নথি থেকে জানা যায়, গত কয়েক বছরে এসব বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ করে শত শত মিলিয়ন ডলারের তাৎক্ষণিক ও প্রতিশ্রুতি ক্রয়াদেশ পায় বাংলাদেশ। এর মধ্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ২৮টি মেলায় অংশগ্রহণ করে ১৮৮ মিলিয়ন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৪ মেলা থেকে আসে প্রায় ১৬৩ মিলিয়ন ডলার। করোনার কারণে এই ক্রয়াদেশ কিছু কমে আসে। ফলে এ বছর মাত্র ১০টি মেলায় অংশ নিয়ে ৩১ মিলিয়নের সামান্য কিছু বেশি ক্রয়াদেশ পায়। পরের অর্থবছরের এই ক্রয়াদেশ আগের ধারায় ফিরে আসে। ফলে ২০ মেলা থেকে ১৪৮ মিলিয়ন ডলারের ক্রয়াদেশ পায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৫ মেলা থেকে ৩৪১ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সর্বাধিক ৪২ মেলায় অংশ নিয়ে ৩১২ মিলিয়ন ডলারের ক্রয়াদেশ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৮টি মেলার খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হলেও তা অনুমোদিত হয়নি। এ বিষয়ে ইপিবির পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সর্বশেষ গত ১ অক্টোবর ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয়ে ক্যালেন্ডারটি অনুমোদন চেয়ে চিঠি পাঠান। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ইপিবির মেলা ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করার নিয়ম অনুযায়ী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত কমার্শিয়াল কাউন্সিলর, বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিভিন্ন ট্রেড বডি ও লোকাল অর্গানাইজার থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবের আলোকে খসড়া মেলা ক্যালেন্ডার প্রস্তুতপূর্বক ব্যুরোর ১৪৬তম বোর্ড সভায় অনুমোদনের জন্য ব্যুরোর প্রশাসন শাখায় পাঠানো হয়। পরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রণীত খসড়া মেলা ক্যালেন্ডারটি ব্যুরোর বোর্ড সভায় অনুমোদিত হয়নি। খসড়া ক্যালেন্ডারটি অনুমোদিত না হওয়ায় রপ্তানি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণমূলক কার্যক্রম যথাসময়ে সম্পাদন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’ এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, মেলার ক্যালেন্ডার বছরের শুরুতেই অনুমোদিত হয়, কিন্তু এ বছর এখনো বোর্ডের অনুমোদন পায়নি। আশা করছি শিগগিরি বোর্ডের অনুমোদন পাবে। রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে একটার সঙ্গে আরেকটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।