আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য মার্কিন নির্বাচনের পর শীর্ষ পরাশক্তি এবং তথাকথিত ‹বিশ্ব পুলিশ›-এর নেতা হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে বসে প্রেসিডেন্ট এবং তার প্রশাসন দ্বারা যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তা সারা বিশ্বে সঙ্ঘাতের ক্ষেত্রে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। ওয়াশিংটনের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে, গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের যুদ্ধ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সুদানের গৃহযুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লাখ লাখ মানুষ নিহত ও বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই সঙ্ঘাতগুলি আরও খারাপ বা সমাপ্ত হতে পারে কিনা, তা নির্ভর করছে রিপাবলিকান প্রার্থী ও প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মধ্যে ৫ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচনে কে জয়ী হবেন, তার উপর। গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের যুদ্ধ: হ্যারিস এবং ট্রাম্প উভয়েই ইসরায়েলের পক্ষে তাদের সমর্থনে দ্ব্যর্থহীন। অতএব, বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি এবং বৃহত্তর আরব বিশ্ব উভয় প্রার্থীর কারেরার মাধ্যমেই যুদ্ধের সমাপ্তির সম্ভাবনা খুব কম দেখছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের সরকার বিতর্কিত শহর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, যা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। তিনি আব্রাহাম চুক্তির অধীনে ইসরায়েল, বেশ কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে ‘স্বাভাবিককরণ’ চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন এবং ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি প্রত্যাহার করেছিলেন, যার বিরোধিতা ইসরায়েলও করেছিল। ২০২০ সালে ট্রাম্প একটি শান্তি পরিকল্পনা পেশ করেছিলেন যাতে পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনের রাজধানী সহ একটি দ্বি-রাষ্ট্র ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলের পশ্চিম তীরের কিছু অংশ সংযুক্ত করার ঘোষণা দেওয়ার জন্য মুহূর্তটি ব্যবহার করার পর পরিকল্পনাটি শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে যায়। ট্রাম্প পরে মার্কিন প্রকাশনা অ্যাক্সিওসকে বলেন, ‹সেটি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেছিল, আমি প্রচন্ড রাগান্বিত ছিলাম।’ ট্রাম্প সম্প্রতি এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছেন, ‹লেবাননে আপনাদের বন্ধুবান্ধব এবং পরিবাররের তাদের প্রতিবেশীদের সাথে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সম্প্রীতির সাথে বসবাস করা প্রাপ্য এবং এটি কেবল মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার মাধ্যমেই ঘটতে পারে।› এদিকে, কথার ফুলঝুরি সত্ত্বেও কমলা হ্যারিস অবিলম্বে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধ করার কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি। মার্কিন আরব এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই বলছেন, তিনি তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্পষ্ট পদক্ষেপ নেননি, যেমন, ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা কমানো। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: পরাক্রমশালী রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কিয়েভের আরও বেশি সামরিক তহবিল প্রয়োজন। তবে, কিছু বিশ্লেষক বলছেন, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া ইউক্রেনের জন্য বিপর্যয়কর হবে। প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্প রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, এমনকি মাঝে মাঝে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে প্রকাশ্যে প্রশংসা করেছিলেন। কিছু পর্যবেক্ষকের মদে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান আইন প্রণেতা ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহায়তা প্রদানের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে, এমনকি বাইডেন সরকারকে এমন একটি যুদ্ধে অর্থায়নের জন্য দোষারোপ করেছেন, যা তারা যুক্তি দিয়েছের যে মার্কিন স্বার্থের উপকার হয়নি। যদিও হ্যারিস অবিলম্বে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তির পরিকল্পনা করেননি, তবে তিনি কিয়েভের পক্ষে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন এবং পশ্চিমা দেশগুলিকে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সমর্থন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। সুদান যুদ্ধ: ২০২৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতি সঙ্কট সুদান গৃহযুদ্ধে এপর্যন্ত ১কোটি ৪০লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হলে সুদানকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখতে বা অবিলম্বে যুদ্ধ শেষ করার উপায় খুঁজে বের করার জন্য চাপ দিতে আগ্রহী দেখছেন না বিশ্লেষকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যারিসের ক্ষেত্রেও সুদানে যুদ্ধ শেষ করার জন্য তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি।