রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন এলাকায় ভবনের নকশা অনুমোদনসহ যাবতীয় তদারকির দায়িত্ব কোনো কনসালট্যান্ট (পরামর্শক) ফার্ম বা তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা আরও বলেছেন, বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ। ঢাকা শহরে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে একটি ভবনও আর উঠতে দেওয়া যাবে না। রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে \'ভূমিকম্পে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে প্রস্তুতি ও করণীয়\' শীর্ষক সেমিনারে এ অভিমত আসে। এতে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একটি কনসালট্যান্ট ফার্ম নকশার অনুমোদন সংক্রান্ত সব কাগজপত্র, ভবনের যাবতীয় নকশাসহ সবকিছু যাচাই-বাছাই করে মতামত দেবে। পরে রাজউক চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। ভবন নির্মাণের সময় নকশা অনুযায়ী সবকিছু হচ্ছে কিনা ওই ফার্মই দেখভাল করবে। তাহলে মানসম্মত ভবন তৈরি হবে। বড় ধরনের ভূমিকম্পেও তখন ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা হবে অনেক কম। রাজউক ও রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেন, যেসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ আছে সেগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। ঝুঁকির মাত্রা অনুসারে প্রয়োজনে মেরামত করতে হবে। রেট্রোফিটিং করতে হবে। আর যেটা একেবারেই মেরামত করা সম্ভব না, সেগুলোকে অপসারণের কোনো বিকল্প নেই। রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল হুদা প্রয়াত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর বরাত দিয়ে বলেন, তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন ভবনের অনুমোদন সংক্রান্ত সবকিছু একটি ফার্ম যাচাই-বাছাই করবে। ফার্মগুলো হবে রাজউক অনুমোদিত। তৈরির সময় তারাই নির্মাণকাজের তদারকি করবে। এরই অংশ হিসেবে রাজউকে আটটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল। তারপর আর কিছু এগোয়নি। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, এ রকম ফার্মের মাধ্যমে তদারকি করার কারণে পোশাকশিল্পের ভবনগুলোর মান বৃদ্ধি পেয়েছে। পোশাকশিল্পে ৭৫ শতাংশ ভবন এখন মানসম্মতভাবে তৈরি। রিহ্যাবের সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, বর্তমানে একটি নকশা পাসেই এক-দেড় বছর লেগে যায়। এতে বড় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাই কনসালট্যান্টের জবাবদিহি কতটুকু থাকবে তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের মালিকানাধীন ভবনগুলোকেও এ ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবনের চেয়ে ডেভেলপারের তৈরি ভবনগুলোর মান অনেক ভালো বলেও উল্লেখ করেন তিনি। রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, একটি অঞ্চলে কনসালট্যান্ট দিয়ে কাজটি শুরু করা যায়। ফল ভালো পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে তাঁদের অধীনে এই কাজ ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছিউদ্দিন বলেন, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে এই মুহূর্তে জরুরি হচ্ছে পরিত্যক্ত ভবনগুলোর মালিকদের সঙ্গে কথা বলে সেগুলো অপসারণ করা। আর কেউ যেন বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন তুলতে না পারেন সেটা নিশ্চিত করা। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার বলেন, কনসালট্যান্টগুলোর রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে। তারা ভবনের প্লাম্বিং ডিজাইন, আর্কিটেকচারাল ডিজাইন, ফায়ার স্ট্রাকচারার ডিজাইন, ইলেক্ট্রিক্যাল ডিজাইনসহ সব ধরনের কাজ করবে। এসব ডিজাইনে জড়িত সবার স্বাক্ষর থাকবে। সেই ভবনে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তখন তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা যাবে। রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, \'মানসম্পন্ন ভবন হলে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি অনেক এড়ানো যাবে। আমরা চাচ্ছি, ভবনের ডিজাইনগুলো যেন কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা করেন।\'