প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস যখন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক করেন; তখন দেখা যায় তার পেছনে মাথার ওপর লেখা রয়েছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’। কিন্তু সচিবালয়ে অনেক উপদেষ্টার অফিসে এবং হলরুমের দেয়ালে মাথার ওপর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেখা যায়। এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিশেষ করে বঙ্গভবনে দরবার হলে শেখ মুজিবের ছবি দেখে এই বিতর্কের অবতারণা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক আহ্বায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি মাথার ওপর রাখা হয়েছে কেন এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। তবে নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, মূলত হাসিনার অনুগত আমলাদের (সচিব) কেরামতিতে এখনো সচিবালয়ে এবং বিভিন্ন জায়গায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার আইকন শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ঝোলানো রয়ে গেছে। শেখ মুজিবের ছবি এভাবে মাথার ওপর রাখা মানেই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে বাঁচিয়ে রাখা। পিতার ছবি দেখে দলদাস আমলারা মেয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে মনে রাখছেন। মাদার অব মাফিয়া শেখ হাসিনা গণহত্যা করে ভারতে পালিয়েছেন। দিল্লিতে নিরাপদে থেকে নরেন্দ্র মোদির প্রযোজনায় শেখ হাসিনা একের পর এক বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র নাটক পরিচালনা করছেন। শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১৫ বছর দেশ শাসনে হত্যা, গুম, খুন, জুলুম, নির্যাতন, নির্বাচনের নামে সার্কাস, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার কেেছন; প্রতিটি ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘আইকন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে বাবার (শেখ মুজিব) আদর্শ বাস্তবায়ন করেছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা যেমন ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে গেছেন; তেমনি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গোটা জাতিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বন্দুকের মুখে রেখে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সুকৌশলে শেখ মুজিব পুলিশের হাতে ধরা দিয়েছেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের সঙ্গে সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের হাজার হাজার ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সচিবালয়সহ সরকারি অনেক অফিসে এখনো শেখ মুজিবের ছবি টানিয়ে রাখা হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর তিন জন উপদেষ্টা শপথ গ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের শপথবাক্য পাঠের সময় বঙ্গভবনের দরবার হলে পেছনের দেয়ালে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানো দেখা যায়। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায়র সৃষ্টি হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বঙ্গভবনে শেখ মুজিবের ছবি এখনো কেন রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও হাজার হাজার নেটিজেন শেখ হাসিনার ফ্যাসিজমের আইকন শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি কেন বঙ্গভবনসহ সরকারি অফিসে এখনো শোভা পাচ্ছে তা নিয়ে বিতর্ক তোলেন। তারা প্রায় সবাই শেখ মুজিবের ছবি সরিয়ে ফেলার দাবি জানান। একজন সমম্বয়ক বলেন, মুজিবের ছবি সরানো না হলে গণভবনের পরিণতি ভোগ করতে হবে বঙ্গভবনকে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানান, বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হয়েছে। মাহফুজ আলম তার ফেসবুক পোস্টে একটি ছবি যুক্ত করেন। ছবিটি আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তুলেছেন বলে পোস্টে উল্লেখ করা হয়। ছবিতে দেখা যায় বঙ্গভবনের দেয়ালে আগে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছিল, এখন সেটি নেই। অর্থাৎ বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হয়েছে। কিন্তু নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন সচিবালয়ে বৈঠক করছেন, পেছনের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। অনুসন্ধান করে দেখা যায়, সচিবালয়ে আরো কয়েকজন উপদেষ্টার অফিস ও হলরুমে এবং সচিব থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের অফিসের দেয়ালে মাথার উপর শেখ মুজিবের ছবি লাগানো রয়েছে। সরকারি অফিস-আদালত থেকে মুজিবের ছবি এখনো না সরানোর প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, শেখ হাসিনার যে সব দালাল এখনো প্রশাসনের বড় বড় পদে রয়েছেন তারাই মূলত সুকৌশলে মুজিবের ছবি দেয়ালে রেখেছেন। কারণ শেখ মুজিবের ওই ছবি শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখবে। মুজিবের ছবি দেখে শেখ হাসিনাকে স্মরণ করবে। বিদেশিরা যখন সচিবালয়ে আসবেন উপদেষ্টাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে বা কোনো বৈঠকে তখন মুজিরেব ছবি দেখে তাদের শেখ হাসিনার কথা মনে পড়বে। সে জন্য কেরামতি করে হাসিনার অনুগত আমলারা শেখ মুজিবের ছবি সচিবালয়ের দেয়ালে টানিয়ে রাখছেন। একজন লিখেছেন, প্রধান উপদেষ্টা তার অফিস থেকে শেখ মুজিবের ছবি তুলে ফেলে সেখানে কলেমা তৈয়বা লিখেছেন। আর এনজিও মার্কা ও তাবেদার কয়েকজন উপদেষ্টারা নিজেদের অফিসে শেখ মুজিবের ছবি রেখেছেন সংবিধান ও আইনের দোহাই দিয়ে। তবে বেশির ভাগ উপদেষ্টা লিখেছেন সচিবালয়ে মুজিবের ছবি রাখা আমলাদের কেরামতি ছাড়া কিছুই নয়। শেখ হাসিনা তার সর্বশেষ ভাইরাল হওয়া টেলিফোন অডিওতে যে ভাষায় কথা বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে সিভিল প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, র্যাব, বিজিবিসহ সব সেক্টরে তার অনুগত লোকজন এখনো রয়ে গেছেন। তা না হলে হাসিনা এভাবে হুমকি দেয় কিভাবে?