দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব আসছে

প্রকাশিতঃ নভেম্বর ১৬, ২০২৪ | ৯:০৮ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে। একটি হলো জাতীয় পরিষদ (উচ্চকক্ষ) এবং অপরটি হলো জাতীয় সংসদ (নিুকক্ষ)। ‘খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন এবং কেমন সংবিধান চাই’ শিরোনামে আয়োজিত আজ আলোচনা সভায় সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে সংবিধানের খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে যাচ্ছে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ হবে ৩০০ আসনে প্রচলিত ভোটের পদ্ধতিতে। আর জাতীয় পরিষদের সদস্যসংখ্যা হবে ২০০। জাতীয় পরিষদের সদস্যরা জাতীয় সদস্য নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে নির্বাচিত হবেন। এরূপ বণ্টনের ফলে যে রাজনৈতিক দল আনুপাতিক হারে যত আসন পাবে, এর ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে। জাতীয় পরিষদে সংরক্ষিত নারী কোটায় থাকবে ২৫টি আসন। আনুপাতিক হারে দলগুলো সংরক্ষিত নারী আসন পাবে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি ১০ জনকে মনোনয়ন দেবেন। তারা হবেন উপজাতি, অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদে কোনো সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে না। এখানে নারী-পুরুষ সবাইকে সরাসরি নির্বাচন করে আসতে হবে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে ১০ ভাগ নারী সদস্য মনোনয়ন দিতে হবে। সরাসরি নির্বাচন করে তাদের জাতীয় সংসদে আসতে হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটের অর্ধেক প্রয়োগ না হলে নির্বাচন বাতিল বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, আদালতের অনুমতি ব্যতিরেকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দণ্ড হতে পারে এমন অপরাধে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। সকাল ১০টায় সুপ্রিমকোর্ট মিলনায়তনে ‘খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন এবং কেমন সংবিধান চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক ও ল রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি সালেহ উদ্দিন খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবেন। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন। ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেন অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানসহ দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজ্ঞরা আলোচনায় অংশ নেবেন। বৃহস্পতিবার ল রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যকরী কমিটির সভায় ‘সংবিধানের খসড়া প্রস্তাবনা’ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট একটি আইনসভা থাকবে। যার উচ্চকক্ষ ‘জাতীয় পরিষদ’ ও নিুকক্ষ ‘জাতীয় সংসদ’ নামে পরিচিত হবে। জাতীয় সংসদ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ও আইনপ্রণয়ন সভা। সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা আইনসভার ওপর ন্যস্ত হবে। জাতীয় পরিষদ : জাতীয় পরিষদের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এ পরিষদের সদস্যসংখ্যা হবে ২০০। তারা জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসাবে অভিহিত হবেন। তাদের মধ্যে ৬৪ জন নির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ১২ জন নির্বাচিত সিটি করপোরেশনের মেয়র, ২৫ জন সংরক্ষিত মহিলা এবং ১০ জন উপজাতি, অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। ২৫ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ-সদস্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে নির্বাচিত হবেন। অবশিষ্ট ৮৯ জন জাতীয় সদস্য নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে নির্বাচিত হবেন। এরূপ বণ্টনের ফলে যে রাজনৈতিক দল আনুপাতিক হারে যত আসন পাবে, এর ভিত্তিতে তারা মনোনয়ন দেবে। তবে শর্ত থাকে, রাজনৈতিক দলগুলো যত আসন পাবে, এর অর্ধেক সদস্য নিজ দলীয় সদস্যদের মধ্যে থেকে, বাকি অর্ধেক সদস্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নির্বাচিত করবে। তবে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন না। আনুপাতিক হারে বণ্টনের পর কোনো রাজনৈতিক দল বেজোড় সংখ্যাপ্রাপ্ত হলে অতিরিক্ত একজন কোন পেশার ব্যক্তি হবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের থাকবে। সংরক্ষিত অপর ১০ জনকে রাষ্ট্রপতি সরাসরি মনোনয়ন দেবেন। এ মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি যতদূর সম্ভব সমতাবিধান করে উপজাতি, অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্র্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের প্রতিনিধি নিশ্চিত করবেন। খসড়ায় বলা হয়েছে, জাতীয় পরিষদ হবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ও আইনপ্রণয়ন সভা, যা অর্থনৈতিক নীতি, জাতীয় নিরাপত্তা নীতি, বৈদেশিক সম্পর্কের নীতি এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বিকাশে পথরেখা প্রণয়ন করবে। জাতীয় বাজেট (অর্থবিল) ছাড়া জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া আইন চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে জাতীয় পরিষদ। জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপনের ছয় মাস আগে জাতীয় পরিষদে প্রাক-বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনার পর সরকার বাজেটের খসড়া প্রণয়ন করবে। জাতীয় পরিষদের মেয়াদ হবে চার বছর। জাতীয় সংসদ গঠনের ১৫ দিনের মধ্যে জাতীয় পরিষদ গঠন সম্পন্ন করতে হবে। জাতীয় সংসদ : প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘জাতীয় সংসদ’ নামে বাংলাদেশের একটি সংসদ থাকবে। এ সংবিধানের বিধানাবলি জাতীয় পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের ওপর ন্যস্ত হবে। একক আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকা থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত ৩০০ সদস্য নিয়ে সংসদ গঠিত হবে। সদস্যরা সংসদ-সদস্য বলে অভিহিত হবে। তারা রাজনৈতিক দলের বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হতে পারবেন। প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, আদালতের অনুমতি ব্যতিরেকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দণ্ড হতে পারে এমন অপরাধে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। গুরুতর অপরাধ সংঘটিত করবে-এমন সন্দেহজনক কোনো ব্যক্তি ছাড়া কাউকে আটক রাখা যাবে না। তবে সন্দেহের উপযুক্ত ভিত্তি থাকতে হবে। আদালতে হাজিরের সময় প্রতিবেদনে উপযুক্ত কারণগুলো উল্লেখ করতে হবে। অহেতুক হয়রানি করা যাবে না। প্রস্তাবনায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এর মধ্যে খসড়া প্রস্তাবনার ২ক অনুচ্ছেদে (১) বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ ধর্ম এবং আচার অনুষ্ঠান পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সম-অধিকার নিশ্চিত করবে। কোনো ধর্মের অবমাননা করা যাবে না। (২) লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, উপজাতি, নির্বিশেষে রাষ্ট্র কোনো ধরনের বৈষম্য করবে না। সম-অধিকার ও সমমর্যাদা নিশ্চিত করবে। এছাড়া খসড়ায় ৭ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রে কর্মরত কোনো ব্যক্তিপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করলে বা ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করলে তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে এবং এ অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হবে। খসড়ায় ৭খ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানে যাই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, মূলনীতি এবং সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলি গণভোট ছাড়া সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ বা সংশোধন করা যাবে না।