সরকারকে ব্যর্থ হতে স্বৈরাচারের দোসররা ওৎ পেতে আছে -তারেক রহমান

প্রকাশিতঃ নভেম্বর ১৭, ২০২৪ | ৮:১৬ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

জনগণ যা চায় তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এড্রেস করলে ওৎ পেতে থাকা স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরা বসে নেই। সরকারকে একেবারে ব্যর্থ করে দিতে তারা ওৎ পেতে আছে এবং কাজ করছে। সেটা দেশের ভেতরেই হোক বা দেশের বাইরে হোক, প্রশাসনের ভেতরে হোক বা দেশের বাইরে হোক। এরা কিন্তু ওৎ পেতে আছে যে, কিভাবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দেয়া যায়। তবে আমরা মনে করি, সরকারের সাথে জনগণের আস্থা নিবিড় থাকলে তারা (পলাতক স্বৈরাচার) ষড়যন্ত্রের ডাল-পালা বিস্তারের সুযোগ পাবে না। জনগণ যা চাইছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি সেগুলোকে এডড্রেস করে তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা কোনো সুযোগটা পাবে না, তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না। গতকাল শনিবার রমনায় জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (জেটেব) তৃতীয় জাতীয় কাউন্সিলে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করা যদি না যায় তাহলে গণতন্ত্র, উন্নয়ন কিংবা সমস্যা আমরা যাই বলছি না কেনো কেনোটাই টেকসই হবে না।একজন নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রথম হাতিয়ার হচ্ছে ভোট প্রয়োগের অধিকার। জনগণ ভোট প্রয়োগ সুযোগ যদি না পায় তাহলে রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকদের যে সম্পর্ক-অংশীদারিত্ব সেই সম্পর্ক-অংশীদারিত্ব কিন্তু সৃষ্টি হয় না। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। জনগণ আশা করছে যে, ইনশাল্লাহ তারা স্বচ্ছ পরিবেশে নির্ভয়ে ভোট দিতে সক্ষম হবে, জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পাবে। বিশ্বাসযোগ্য এবং সুনির্দিষ্ট আস্থা পেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে জনগণের আস্থার বন্ধন আরও দৃঢ় হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সরকারের অগ্রাধিকার তালিকা প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতরা হাসপাতাল থেকে রাজপথে বেরিয়ে এসেছে, এটি সমগ্র দেশের গণতন্ত্র প্রিয় মানুষের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত লজ্জাস্কর দৃশ্য। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও নিরাপত্তা কেনো সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার লিস্টে নেই বা কত নম্বারে ছিলো। এরপরও দেখেন, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার যে পদক্ষেপটি সেটি সরকারের প্রায়োরিটি লিস্টে কত নম্বরে আছে? দ্রব্যমূল্যের কারণে সমাজের প্রতিটা মানুষ, প্রত্যেকটি পরিবার যে কষ্টের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, যে দুর্বিসহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এই বিষয়টাও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রায়োরিটি লিস্টের মধ্যে কত নম্বারে আছে? আমি সব সময় বলেছি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল কাজ হয়ত সবার কাছে সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। তবে এই সরকারের ব্যর্থতা কিন্তু আমাদের সকলের ব্যর্থতা, গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের ব্যর্থতা। এদেরকে (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) যদি ব্যর্থ করে দেয়া যায় তাহলে গণতন্ত্রকে ব্যর্থ করে দেয়া যাবে, বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ যারা গণতন্ত্রকে ভালোবাসে, যারা গণতন্ত্র প্রাকটিস করতে চায় তাদেরকে ব্যর্থ করে দেয়া হবে। এটা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। বিএনপি প্রধান বলেন, এরকম একটা পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত তারা জনআকাক্সক্ষার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করতে বোধহয় চাইছে না। বরং তারা যেটা ভালো মনে করছে সেটাই হয়ত চাপিয়ে দিতে চাইছে। এই অপ্রাপ্তি থাকার পরেও জনগণ কিন্তু এখনো এই সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে চায়, তারা আস্থা হারাতে চাইছে না। তবে একটা প্রশ্ন উঠছে সরকার কি উল্টো জনগণের সাথে আস্থা রাখতে চায়? কারণ জনগণের সঙ্গে সরকারের আস্থার সম্পর্ক নিবিড় থাকলে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের ডাল-পালা বিস্তারের সুযোগ পাবে না। জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করা যদি না যায় তাহলে গণতন্ত্র, উন্নয়ন কিংবা সমস্যার আমরা যত যাই বলছি না কেনো কেনোটাই টেকসই হবে না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তার দলের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে বলেন, যে সমস্যাগুলো আছে সেই রকম কিছু মৌলিক বিষয় এবং সমস্যাগুলো তারা দূর করে সংস্কার সাধন করে একটি উপযুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে দেবেন। তারা কাজ করছেন, কাজ করে চলেছেন, আমরা তাদেরকে সমর্থন দিচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষের যে আকাক্সক্ষা সেই আকাক্সক্ষা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের, গণতান্ত্রিক সমাজের। সেই আকাক্সক্ষাটাকে বাস্তবায়িত করতে আমাদের যে সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো দূর করতে হবে। তার বেশি কিছু করতে গেলে সময় যত বেশি যাবে তত বেশি সমস্যা তৈরি হবে। আমি কথাটা স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচন কেন্দ্রিক যে সমস্যাগুলো আছে এগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। আমি আশা করবো আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা, নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার ব্যবস্থা এগুলো সংস্কার করেই অতিদ্রুত নির্বাচনে যাওয়াটাই হবে এদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে কল্যাণের। এর আগে সকালে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। এই কাউন্সিলে কাউন্সিলারদের ভোটে ফখরুল আলমকে সভাপতি ও রুহুল আমিন আকন্দকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। জেটেবের সভাপতি ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনারসহ টেক্সটাইল প্রকৌশলী নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।