নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি করে টেনেটুনে চলত আহাদ মোল্যার সংসার। আর্থিক অনটনের কারণে সাত বছরের ছেলে রোহানকে স্কুলেও পাঠাতে পারেননি। সংসারে স্ত্রীর সঙ্গে কলহ লেগেই ছিল। ছোট স্ত্রী রোজিনার দুই ছেলের সঙ্গেই থাকত আগের পক্ষের ১৫ বছরের ছেলে জয়। এ নিয়েও তৈরি হয় নানা সংকট। তবুও হাল ছাড়েননি আহাদ। তবে সংসারের অভাব মেটাতে বিভিন্ন সমিতি ও স্থানীয় ব্যক্তিদের থেকে চড়া সুদে নেওয়া তিন লাখ টাকা ঋণই কাল হয় আহাদের। পাওনাদারদের অব্যাহত চাপ ও স্ত্রীর সঙ্গে কলহের জেরে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। Advertisement শনিবার সকালে হত্যার পরিকল্পনা নিয়েই স্ত্রী রোজিনা ও শাশুড়িকে জোর করে কাজে পাঠিয়ে দুই ছেলে রোহান (৭) ও মুসাকে (৩) গলা গেটে হত্যা করে আহাদ। পরে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও এখন চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। রাজধানীর পল্লবী থানার ৩৮-বাইগারটেক এলাকার একটি বাসায় লোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে রোহান ও মুসার ময়নাতদন্ত শেষে রোববার বিকালে পল্লবীর একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়। আহত আহাদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের ৩০৩ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ৩৩ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আহাদ। তার গলায় ব্যান্ডেজ। পাশে কোনো স্বজনকে পাওয়া যায়নি। পুলিশের একজন সদস্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় আছেন। দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি এখন আশঙ্কামুক্ত। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সময় লাগবে। রোববার দুপুরে পল্লবীর ৩৮-বাইগারটেক এলাকার ব্যাপারি মার্কেটের পাশের ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাসা তালাবদ্ধ। রোজিনা বেগম ও তার স্বজনেরা কোথায় গেছেন কেউ বলতে পারেননি। যে বাড়িতে তারা ভাড়া থাকতেন সেটির মালিক মো. নাসির উদ্দিন জানান, আহাদ মোল্যাকে তিনি পাঁচ বছর ধরে চেনেন। একই এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়া থেকেছে আহাদের পরিবার। ১ অক্টোবর মাসিক ৬ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নেন। আহাদ ঋণগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি তিনিও জানতেন বলে জানান। এ ঘটনায় শনিবার পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেছে নিহত শিশুদের মা রোজিনা বেগম। ঢাকা মহানগর পুলিশের পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, মামলার আসামি চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমাদের হেফাজতে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ঋণ প্রদানকারী বিভিন্ন সমিতি থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া ও আর্থিক অভাব-অনটনে হতাশায় ভুগছিলেন আহাদ মোল্যা। হতাশা থেকেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। অবশ্য তদন্ত ও আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আসল সত্য বেরিয়ে আসবে। পল্লবী থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, মামলার বাদী রোজিনা একটি মেসে রান্নার কাজ করেন। আহাদ মোল্যা মানিকদী গ্রিন হ্যাভেন বিল্ডিংয়ের নিরাপত্তাকর্মী। ঘটনার দিন সকাল ৭টায় আহাদ ডিউটি শেষে বাসায় এসে রোজিনাকে মেসে রান্নার কাজে যেতে বলেন। রোজিনা আহাদকে বলেন, তার শরীর খারাপ, সে কাজে যাবে না। আহাদ রোজিনাকে ওই সময় জোর করে কাজে পাঠায়। যাওয়ার সময় রোজিনাকে বলে, তার মাকেও সঙ্গে নিয়ে যেতে। এ সময় রোজিনা তার দুই ছেলেকে সঙ্গে নিতে চাইলে আহাদ বলে সে বাসায় আছে, ছেলেরাও তার সঙ্গে থাকবে। সকাল সাড়ে ৯টায় রোজিনা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার দুই ছেলে রোহান ও মুসা এবং তার বৃদ্ধ বাবা জুবেদ আলীকে বাসায় রেখে যান। রোজিনা তার মাকে সঙ্গে নিয়ে কাজে বের হন। সকাল সাড়ে ১০টায় রোজিনা লোক মারফত জানতে পারেন তার স্বামী দুই সন্তানকে জবাই করে বিছানার ওপর ফেলে রেখেছেন। পরে রোজিনার বাবা তাকে জানায়, পাশের রুম থেকে তিনি দুই নাতি চিৎকার করছে শুনে রুমের দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে দেখেন তার দুই নাতিকে জবাই করে বিছানায় ফেলে রাখা হয়েছে। এ সময় জুবেদ আলী চিৎকার করলে আহাদ মোল্যা ধারালো ছুরি নিজের গলায় চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ছুরির আঘাতে আহাদের গলা রক্তাক্ত হয়।