মানসিক ও শারীরিক উভয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামী অনুশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আপনার উচিত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামী অনুশাসন পালনে যত্নবান হওয়া। বিশেষতঃ আপনি যদি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন, এর মাধ্যমে আপনার মন যেমন পবিত্রতার পরশ লাভ করবে তেমনি তা আপনার সুস্বাস্থ্যের সহায়কও হবে। দুই: এই দোয়াটি অধিকহারে পড়ুন; اللَّهُمَّ آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রেহাই দিন।’ দোয়াটি পড়লেও আপনার পুষ্টিহীনতা দূর হবে এবং আপনি হবেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। এর দলিল হচ্ছে, একবার রাসূলুল্লাহ সা. এক রোগী দেখতে গেলেন। তিনি দেখলেন, রোগী (পুষ্টিহীনতায়) একেবারে হাড্ডিসার হয়ে গেছে। নবী সা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি আল্লাহর কাছে কি কোনো প্রার্থনা করেছিলে? সে নিবেদন করল, হ্যাঁ। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, হে আল্লাহ! আমার পরকালের শাস্তি আপনি আমাকে দুনিয়াতেই দিয়ে দিন। নবী সা.আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা কি কারো আছে? তুমি এখন থেকে এ দোয়া করতে থাক।’ দেখা গেল, এ দোয়ার বরকতে আল্লাহতায়ালা তাকে আরোগ্য দান করলেন। (মুসলিম ২৬৬৮) তিন: অধিকহারে ইস্তেগফার পড়ুন। আল্লাহ শক্তি বাড়িয়ে দিবেন। দেখুন, হুদ আ. তার জাতিকে উপদেশ দিয়েছিলেন, আর হে আমার কওম! তোমাদের পালনকর্তার কাছে তোমরা ইস্তেগফার কর, অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর; তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টিধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মত বিমুখ হয়ো না। (সুরা হুদ ৫২) চার: সুস্বাস্থ্যের জন্য রাসূলুল্লাহ সা.উম্মতকে নিম্নোক্ত দোয়াটি শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি নিজেও সকাল-সন্ধ্যা দোয়াটি করতেন। اللَّهُمَّ عَافِنِى فِى بَدَنِى اللَّهُمَّ عَافِنِى فِى سَمْعِى اللَّهُمَّ عَافِنِى فِى بَصَرِى لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে শারীরিক সুস্থতা দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমার কানের সুস্থতা দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমার চোখের সুস্থতা দান করুন। আপনি ছাড়া আর কোন হক্ব মা‘বূদ নেই। হে আল্লাহ! কুফরী এবং দারিদ্র্য থেকে আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! কবরের আযাব থেকে আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি ব্যতীত আর কোন হক্ব মা‘বূদ নেই’। (আবূ দাঊদ ৫০৯০, আবূ বাকরাহ রা. হতে বর্ণিত) পাঁচ: আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.এই বলে দোয়া করতেন যে, اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الصِّحَّةَ ، وَالْعِفَّةَ ، وَالأَمَانَةَ ، وَحُسْنَ الْخُلُقِ ، وَالرِّضَا بِالْقَدَرِ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সুস্থতা, পবিত্রতা, আমানতদারিতা, চরিত্রমাধুর্য এবং তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্টি কামনা করি।’ (কানযুল উম্মাল ২/৩৬৫০) সুতরাং আপনিও পড়তে পারেন। ছয়: আনাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এই বলে দোয়া করতেন যে, اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئْ الْأَسْقَامِ ‘হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাইছি আপনার কাছে শ্বেতকুষ্ঠ, উম্মাদ রোগ, কুষ্ঠ রোগ ও তামাম খারাপ ব্যধি থেকে।’ (আবূ দাঊদ ১৫৫৪) সুতরাং আপনার অপুষ্টিতার চিকিৎসা হিসাবে এটিও পড়তে পারেন। সাত: আবু হুরাইরা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.এই বলে দোয়া করতেন যে, اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُوعِ فَإِنَّهُ بِئْسَ الضَّجِيعُ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخِيَانَةِ فَإِنَّهَا بِئْسَتِ الْبِطَانَةُ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষুধা থেকে পানাহ চাইছি; এই কারণে যে, ক্ষুধা অত্যান্ত নিকৃষ্ট সঙ্গী। আমি আপনার কাছে খিয়ানাত থেকে পানাহ চাইছি; এই কারণে যে, এটি অত্যন্ত নিকৃষ্ট ধরনের কাজ।’ (আবূ দাঊদ ১৫৫৪) দোয়াটি নিয়মিত পড়লে আপনার ক্ষুধামন্দা দূর হবে, রুচি বৃদ্ধি পাবে। আট: কালিজিরা খান। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.বলেছেন, إنّ هذه الحبة السوداء شفاء من كل داء إلا السام ‘কালিজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের উপশমক (উপকারী)। (সহিহ বুখারি ৫৯২) নয়: মাঝে মাঝে মধুর শরবত পান করুন। কেননা মধু মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সাধারণত পুষ্টি উপাদান হিসাবে ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ থাকে। শুধু তাই নয় আরো থাকে ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ, ২২ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড এবং ১১ ভাগ এনকাইম। এতে সাধারণত কোন চর্বি ও প্রোটিন নেই। প্রতি ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ গ্রাম ক্যালরি। (সূত্র-ehaspatal.com) আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এতে (মধু) মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার।’ (সুরা নাহল ৬৯) ইমাম যুহরী বলেন, ‘তুমি মধু খাবে; কারণ এটি স্মৃতিশক্তির জন্য ভাল।’ (খতীব আল-বাগদাদীর ‘আল-জামে’ ২/৩৯৪) দশ: প্রতিদিন সকালে ৪/৫টা খেজুর খান। কেননা, খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান, যা শারীরিক মানসিক শক্তি বৃদ্ধিসহ হজমশক্তি ও রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়। সা’দ ইবন আবী অয়াক্কাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন দিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর দিয়ে নাশতা করবে, সেদিন তার উপর বিষ এবং জাদু কোন কাজ করবে না’। (আবূ দাঊদ ৩৮৩৬) এ ছাড়াও বিভিন্ন হাদিসে যেমন ইবাদত, ঘর-সংসার ইত্যাদি করতে বলা হয়েছে তেমনি স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। কারণ শরীরিক সুস্থতা ও মানসিক স্বস্তির ওপরই কাজকর্ম, ঘর-সংসার এবং ইবাদত-বন্দেগি নির্ভরশীল। অতএব এ নেয়ামতের প্রতি যত্ন নেয়া আপনার দায়িত্ব।