ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। এই খবরে আশার আলো দেখছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দারা। এদেরই একজন আনাস আল-রামলাওয়ি। গাজা উপত্যকার নাসের পাড়ার এই বাসিন্দা ইতোমধ্যেই ইসরাইলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় নিজের বাড়ি হারিয়েছেন। সম্প্রতি রামলাওয়ি বলছিলেন, ‘আমার কানে যখন উত্তর গাজার বোমা বিস্ফোরণের শব্দ আসছিল, তখনই পরোয়ানার খবরটি পড়ছিলাম। মনে হলো, অবশেষে যারা এই অপরাধগুলো করছে, তাদের বিচারের আওতায় আনার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে’। আইসিসি-র পরোয়ানা: একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ আইসিসি প্রথমবারের মতো পশ্চিমা শক্তির মিত্র হিসেবে বিবেচিত দুই শীর্ষ ইসরাইলি নেতার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছে। আদালতের প্রাথমিক চেম্বারের মতে, তাদের বিরুদ্ধে গাজার বেসামরিক জনগণকে খাবার, পানি, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী থেকে বঞ্চিত করার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ রয়েছে। রোম চুক্তি অনুযায়ী, আইসিসির সদস্য ১২৪টি দেশ এখন তাদের গ্রেফতার করতে এবং আইসিসির কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য। আইসিসির পরোয়ানা ইসরাইলের বৈশ্বিক অবস্থানকে আরও নড়বড়ে করে তুলেছে। যদিও ইউরোপের দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন জানিয়েছে। তবে আইসিসির রায় তাদের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতাকে আরও কঠিন করে তুলেছে। গাজার বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়া এদিকে দেইর আল-বালাহর বাসিন্দা রওয়া শাওয়া আইসিসির এই পরোয়ানাকে প্রতীকী বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তবে বর্তমানে যখন আমরা প্রতিদিন বেঁচে থাকার লড়াই করছি, তখন এই ধরনের আইনি পদক্ষেপের মূল্য কতটুকু তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে’। শাওয়া আরও বলেন, বিশ্ব যদি ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ না করে এবং তাদের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে, তাহলে এই ধরনের আইনি পদক্ষেপগুলো শুধু কাগজেই থাকবে। তবে এটি অন্তত একটি ইঙ্গিত দেয় যে, আমরা পুরোপুরি একা নই। অন্যদিকে আইসিসির এই সিদ্ধান্তকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে বর্ণনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আইসিসি-র এই পদক্ষেপ অত্যন্ত অযৌক্তিক। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে, এ বিষয়ে আইসিসির কোনো এখতিয়ার নেই। স্মৃতির ভার গাজার খান ইউনিস শহরের বাসিন্দা ইয়াসির আবু ওয়াজনা তার ভাই ফাদির পরিবারের ওপর এক বছর আগে ঘটে যাওয়া বোমা হামলার কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আজ আইসিসি-র পরোয়ানার খবর পড়ে সেই স্মৃতি আবার ফিরে এলো। ফাদি বেঁচে গেলেও তার স্ত্রী এবং দুটি ছোট মেয়ে মারা গিয়েছিল। এই ক্ষতি শুধু আমাদের হৃদয়েই বয়ে বেড়াচ্ছি। ভবিষ্যতের প্রত্যাশা যদিও এই গ্রেফতারি পরোয়ানার বাস্তবায়ন এখনো অনেক দূরের বিষয়। তবে এটি গাজার মানুষের জন্য ন্যায়বিচারের এক ক্ষীণ আশা নিয়ে এসেছে। তারা আশা করে, একদিন অপরাধীরা তাদের কর্মের জন্য দায়ী হবে। সূত্র: সূত্র: মিডল ইস্ট আই