ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছে শাখা ছাত্রলীগের গঠিত তদন্ত কমিটি। রোববার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে আট পেজের একটি তদন্ত প্রতিবেদন পঠিয়েছে তারা। ছাত্রী নির্যাতনের তারা অন্তরার কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি বলে জানিয়েছে কমিটির একটি সূত্র। গত ১১ ফ্রেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের একটি গণরুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এতে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, ইসরাত জাহান মিমি ও হালিমা খাতুন উর্মীর নামে প্রশাসন বরাবর ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি লিখিত অভিযোগ দেয় ফুলপরী। বিষয়টি সামনে আসলে দেশব্যাপী তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ালে বাধ্য হয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে শাখা ছাত্রলীগ। এ ছাড়া হল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসনও তদন্ত কমিটি গঠন করে। ছাত্রলীগের গঠিত তদন্ত কমিটি রোববার বিকেলে ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুনের বক্তব্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শোনে। এর পর রাতে তারা প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্রে। কিন্তু এতে তারা কোনো সুপারিশ করেনি। আট পৃষ্ঠার এই তদন্তে তারা কেবল মাত্র ফুলপরীর সঙ্গে উগ্র আচরণের সত্যতা পেয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ সব ঘটনায় তারা সহ-সভাপতি অন্তরার কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি বলে জানিয়েছে। অন্তরা কেবল মাত্র হলটির ৩০৬ নম্বর রুম থেকে গণরুমে যাওয়ার নির্দেশ দেয় বলে তারা প্রতিবেদনে জানিয়েছে। কিন্তু মারধর বা অন্যান্য নির্যাতনে অন্তরার সংশ্লিষ্টতা তারা পাইনি। ফুলপরীর জবানবন্দিতে এমনটাই উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটির একটি সূত্র। এ দিকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণেরও সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি। তবে এ ঘটনায় অন্তরা বাদে প্রায় নয়জনের সংশ্লিষ্টতা তারা পেয়েছে বলে জানা গেছে। ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির বলে, ‘এই ঘটনায় অন্তরা ৩০৬ নম্বর রুম থেকে ফুলপরীকে গণরুমে দিয়ে আসতে বলেছে। ফুলপরীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, অন্তরা কি বকাঝকা বা খারাপ আচরণ করেছে? তখন ফুলপরী বলেছে- না সে কোনোটাই করেনি। অন্তরার নাম সে শুধু শুনেছে। তাই অন্তরার তেমন কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।’ এ বিষয়ে ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সহ-সভাপতি মুন্সি কামরুল হাসান অনিক বলেন, ‘সেদিন কিছু ঘটনা ঘটেছিল। আট পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দিয়েছি। এখন সেন্ট্রাল ছাত্রলীগ ব্যবস্থা নিবে।’ ফুলপরী খাতুন বলেন, ‘ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির ওরা বলেছিল- অন্তরাতো নিজে নিচে নামেনি। তখন বলেছিলাম, অন্তরা আপু নিজে ওদের হুকুম দিয়ে আমাকে মারাইছে। তখন তারা বলে- তুমি কীভাবে জানো সেটা? তখন বললাম- উর্মি আপু মারার সময় বলেছিল, আমার তো মারতে মারতে হাত ব্যাথা হয়েছে, অন্তরা আপুর হুকুম ছাড়া আমরা কেন তোকে মারব? আমরাকি তোকে চিনি জানি? অন্তরা আপুর হুকুম ছাড়া কারও ক্ষমতা নাই আমার গায়ে হাত দেওয়ার। এসব ঘটনা আমি তাদেরকে বলেছি।’ ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি নিয়ে আপনার মন্তব্য কি? এমন প্রশ্নের জবাবে ফুলপরী বলেন, ‘ওনারা যা রিপোর্ট দেয় দিক। আরও তো তিনটা তদন্ত কমিটি আছে। তাদের (ছাত্রলীগ) ওপর আমার কোনো আস্থা নেই। তারা কিছু করবে না, এটা আগেই বুঝতে পেরছিলাম। করলে শুরুতেই সাময়িক হলেও কোনো ব্যবস্থা নিত। ওরা দুই নাম্বারি করবে, অনুমান করে তাদের ডাকে ক্যাম্পাসে যাইনি।’