‘মেগা মানডে’ ঘোষণা দিয়ে পালটা হামলা, রণক্ষেত্র মোল্লা কলেজ

প্রকাশিতঃ নভেম্বর ২৬, ২০২৪ | ৮:৩৯ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে (ডিএমআরসি) ভয়াবহ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বেলা ১২টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছে প্রতিষ্ঠানাটি। কলেজের বিভিন্ন সামগ্রী ও সরঞ্জাম লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। সংঘর্ষে মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তবে মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর দাবি করলেও পুলিশ সত্যতা নিশ্চিত করেনি। হামলার সঙ্গে স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। ২৪ ঘণ্টায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে আশ্বাস দেন পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার। ভুল চিকিৎসায় মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের জেরে রোববার পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওই হামলার সুষ্ঠু সমাধানে নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়ে রোববার ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা করে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হওয়ায় সোমবার মোল্লা কলেজে পালটা হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এদিকে আগাম ঘোষণা দিয়ে মোল্লা কলেজে হামলা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ধরনের তৎপরতা দেখা যায়নি। হামলার ৩ ঘণ্টার মধ্যেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। দুপুর পৌনে ২টার দিকে সাঁজোয়াযানসহ পুলিশ হেঁটে রওয়ানা দেয়। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় জনতা। মোল্লা কলেজের অধ্যক্ষও অভিযোগ করেন, হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ভূমিকা নেয়নি। এতে তার প্রতিষ্ঠানের ৬০-৭০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সন্ধ্যার পর যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। অন্যদিকে রোববার কবি নজরুল কলেজসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে সংঘর্ষের ঘটনায় মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ভাঙচুর, গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগে সূত্রাপুর থানায় মামলা করেছে পুলিশ। সংঘর্ষের প্রাথমিক সূত্রপাত যেভাবে : সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থী-শিক্ষক, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হালদার ১৬ নভেম্বর সকালে ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি হয়। ১৮ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যুর অভিযোগ করে ২০ ও ২১ নভেম্বর ন্যাশনাল হাসপাতাল অবরোধ করেন মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, এ দুদিন ন্যাশনাল মেডিকেলের পক্ষ নিয়ে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের একদল শিক্ষার্থী তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফেসবুকে ‘ইউনাইটেড কলেজ অব বাংলাদেশ’ নামে একটি গ্রুপে মোল্লা কলেজসহ অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাতে থাকে। তারা অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবিতে আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে রোববার একত্রিত হন। এদিনই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রোববার ন্যাশনাল মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে ভয়াবহ হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। ওই ঘটনায় রোববার সন্ধ্যায় কলেজে ভাঙচুরের প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেফতারে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় তিন কলেজের শিক্ষাথীরা। তারা সোমবার সকালে বিক্ষোভ মিছিল করবেন জানিয়ে ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা দেন। মোল্লা কলেজে হামলা শুরু যেভাবে : পূর্বঘোষণা মতে, ‘মেগা মানডে’ বাস্তবায়নে সোমবার সকাল ১০টা থেকে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হতে থাকে। সেখান থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ডেমরার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের উদ্দেশে হেঁটে রওয়ানা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রায়সাহেব বাজারের দিকে অগ্রসর হয় বিভিন্ন কলেজের অন্য শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে জড়ো হতে থাকে। রাস্তা থেকেও অনেকে মিছিলে যোগ দেয়। সাড়ে ১২টার দিকে কিছু শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মোল্লা কলেজে হামলা চালায়। তারা ইট মেরে কলেজের কাচ ভাঙচুর করে। একই সঙ্গে তারা দ্রুত কলেজের ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তার বিপরীত পাশে অবস্থান নেয়। তাদের সংখ্যা কম থাকায় ধাওয়া দিলে তারা এলাকার ভেতরে ঢুকে পড়ে। মোল্লা কলেজে হামলায় অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীরা বলেন, রোববার ডিএমআরসির নেতৃত্বে ঢাকার বেশ কয়েকটি কলেজ একত্রিত হয়ে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এতে সোহরাওয়ার্দী কলেজের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রশাসনকে সুষ্ঠু সমাধান করার সময় দিয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ভেতর তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ কারণে সোমবার সোহরাওয়ার্দী, কবি নজরুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে মিছিল নিয়ে মোল্লা কলেজে আসে। সরেজমিন যা দেখা গেছে : সরেজমিন দেখা যায়, মোল্লা কলেজে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল ১০টা থেকে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। হামলাকারীরা লাঠি, লোহার রড, বাঁশসহ দেশীয় অস্ত্র ও সরঞ্জাম নিয়ে ভবনে ঢুকে পড়ে। তারা নিচতলা থেকে ১০ তলা পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষ, অফিসসহ সব আসবাব, চারপাশের গ্লাস ভাঙচুর করে। ভবনে ঢোকার কিছুক্ষণ পর কলেজের অফিসে থাকা ল্যাপটপ, টেলিভিশন, চেয়ার ও অন্যান্য সব মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে অনেকে নিচে নেমে আসে। এ সময় মোল্লা কলেজ ও পুরান ঢাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকে। ধাওয়া খেয়ে মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা আশপাশের বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়লে বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরান ঢাকার অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কে অবস্থান নিতে থাকে। একপর্যায়ে মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ওই দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে শতাধিক শিক্ষার্থী ভবনের ভেতরে আটকা পড়ে। পরে মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা আটকে পড়া ছাত্রদের একেকজনকে বের করে বেধড়ক মারধর করে। সরেজমিন দেখা গেছে, সংঘর্ষের খবর পেয়েও ৩ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি। পরে দুপুর পৌনে ২টার দিকে সাঁজোয়াযানসহ ৫ শতাধিক দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তাদের দেখে মোল্লা কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেয়। একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত শতাধিক : হামলার ঘটনায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তারা ঢাকা মেডিকেল, ন্যাশনাল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। মোল্লা কলেজের গুলিবিদ্ধ এক শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩৫ জন ঢামেকে চিকিৎসা নেন। গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীর নাম নাফি (১৮)। তিনি এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। চিকিৎসা নেওয়াদের মধ্যে- সোহরাওয়ার্দী কলেজের ৬ জন, নজরুল কলেজের ১৬ জন, ইম্পেরিয়াল কলেজের একজন, সলিমুল্লাহ কলেজের ৬ জন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে আহত অবস্থায় অন্তত ৩৫ জনকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগের মাথায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থীর পেটে গুলি লেগেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সংঘর্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আহত অন্তত ৪০ জন ন্যাশনাল মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন। বেশিরভাগই কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী। ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ড. মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, বিকাল পর্যন্ত আহত হয়ে ৩০ জন এসেছেন, যাদের ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়েছে। প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ দুই প্রতিষ্ঠানের : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ ড. কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলায় আমার কলেজের ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ছে। অনেক ডকুমেন্টস নষ্ট হয়েছে, তা টাকার মূল্যে নিরূপণ করা সম্ভব না। পুরো ঘটনায় প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পাইনি। তিনি বলেন, আমার আক্ষেপ করে বলতে হচ্ছে রোববার থেকে সোমবার পর্যন্ত আমার ক্যাম্পাসে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। মোল্লা কলেজে আমার শিক্ষার্থীরা আটকা পড়েছে। তাদের উদ্ধার করতে হবে। কিন্তু নিরাপত্তা ইস্যু দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে ভেতরে যেতে দেয়নি। কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, হ্যান্ড মাইকে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তারা যাতে কলেজের বাইরে না যায়। আমাদের কথা না শুনে কিছু শিক্ষার্থী চলে গেছে। আর ডেমরা এলাকার স্থানীয় কিছু শিক্ষার্থী গিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, সচিব, উপদেষ্টা ও ডিসিকে আমরা জানিয়েছি নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। না বললেও প্রশাসনের দায়িত্ব আমাদের কলেজের নিরাপত্তা দেওয়া। মোল্লা কলেজের ৩ জন মৃত্যুর দাবি : মোল্লা কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর এক বিবৃতিতে জানান, সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বহিরাগত একদল সন্ত্রাসী প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ হামলায় তিনজন শিক্ষার্থী নির্মমভাবে প্রাণ হারান এবং শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশ বা হাসাপাতাল সূত্রে মৃত্যুর সত্যতা পাওয়া যায়নি। এছাড়া ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে মৃত্যুর বিষয়টি গুজব বলে উল্লেখ করেন। ক্ষতি ৭০ কোটি, নিষ্ক্রিয় নিরাপত্তা বাহিনী -অধ্যক্ষ : মোল্লা কলেজের প্রায় ৭০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন। সোমবার বিকালে কলেজ ক্যাম্পাসে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তুলে ধরেন। অধ্যক্ষ বলেন, ‘রাজধানীর টপ টেন কলেজের একটি মোল্লা কলেজ। এই কলেজটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে ভাবতেও পারিনি। শিক্ষার্থীরা এমন করতে পারে আমরা ভাবিনি। আমাদের সব ধ্বংস করে দিয়েছে।’ এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘দ্বন্দ্ব-সংঘাত থেকে ফেরাতে শিক্ষার্থীদের কলেজমুখী করার বিকল্প নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা আমরা চাই না।’ হামলা ও সংঘর্ষে মোল্লা কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তিনি ঘটনার জন্য ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে বলেও দাবি করেন। হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যথাযথ ভূমিকা রাখেনি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। হামলার সময় তারা দূরে থেকে পরিস্থিতি দেখেছেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউসিবি নামের একটি গ্রুপ থেকে হামলার উসকানি ও ষড়যন্ত্র করেন বলে তিনি জানান। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ, বিজিবি মোতায়েন : বিকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সন্ধ্যায় পুরো কলেজের নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী। এছাড়া যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষও নিরাপত্তা জোরদার করেছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতার : আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মোল্লা কলেজে হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ছালেহ উদ্দিন। সোমবার বিকাল ৪টার দিকে কলেজের সামনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসীর উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে এই আশ্বাস দেন তিনি। ছালেহ উদ্দিন বলেন, পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসীরা ছাত্রবেশে হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করতে এই হামলা ও কোটি টাকার মালামাল লুটপাট হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে, মামলা হবে। রহস্যময় ফেসবুক গ্রুপ ইউসিবি : এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইউনাইটেড কলেজ অব বাংলাদেশ (ইউসিবি) নামে একটি রহস্যময় গ্রুপের মাধ্যমে সবকিছুর কলকাঠি নাড়া হচ্ছে বলে কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন। ফেসবুকে গ্রুপটিতে লিখা আছে, বাংলাদেশের সব উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীকে এক করার লক্ষ্যে তৈরি একটি অরাজনৈতিক সমাজ কল্যাণমূলক প্ল্যাটফর্ম। এই গ্রুপটির মাধ্যমে একটি পক্ষ সংগঠিত হয়ে এসব কাজ করছে বলে জানা যায়। এই গ্রুপটিকে বিভিন্ন বেনামি ও ছদ্মনামের আইডি থেকে পোস্ট দিয়ে উভয় পক্ষকে হামলায় উসকানি দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইউসিবি গ্রুপের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন কলেজে কমিটিও ঘোষণা করছে। মোল্লার ৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা : গত রোববার ভাঙচুর, গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। পুলিশের উপপরিদর্শক এ কে এম হাসান মাহমুদুল কবীর বাদী হয়ে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় রোববার মামলাটি করেন। সোমবার আদালতের জিআরও শাখা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এজাহারে লালবাগ ডিসি অফিসে কর্মরত কনস্টেবল মো. আশরাফুল ইসলামের নামে ইস্যুকৃত পিস্তল, ৮ রাউন্ড গুলিসহ ১টি ম্যাগাজিন ছিনিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ করা হয়।