ইসলামাবাদের বেশিরভাগ প্রধান সড়ক শিপিং কনটেইনার দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভ ঠেকাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পিটিআইয়ের পাঁচ পার্লামেন্ট সদস্যসহ প্রায় চার হাজার জনকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তি এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ডাকা বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান। বিভিন্ন হামলা ও সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত চার রেঞ্জার্স সদস্য এবং এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন একশোরও বেশি পুলিশ সদস্য। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগেরই অবস্থা গুরুতর। পাকিস্তানের সংবিধানের ২৪৫ ধারায় নাগরিক প্রশাসনের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সূত্র মোতাবেক জানা গেছে, সেনাবাহিনীকে পরিস্থিতি বুঝে \'দেখামাত্র গুলি\' বা \'শুট অ্যাট সাইট\'-এর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বুশরা বিবির নেতৃত্বে রোববার (২৪ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে ইমরান সমর্থকদের আন্দোলন। গোটা দেশ থেকে ইসলামাবাদের উদ্দেশে রওনা দেন দলীয় সমর্থকরা। ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে জড়ো হন হাজারো বিক্ষোভকারী। বিক্ষোভ ঠেকাতে একদিন আগে থেকেই ইসলামাবাদের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুইমাসের জন্য ইসলামাবাদে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে স্টান গ্রেনেড এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করছে। কিন্তু বিশাল এই বিক্ষোভকারীদের দমিয়ে রাখা কার্যত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংঘর্ষ এবং ব্লকেডের মধ্যেও পিটিআই সমর্থকেরা ইসলামাবাদে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন। বিক্ষোভ ঠেকাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পিটিআইয়ের পাঁচ পার্লামেন্ট সদস্যসহ প্রায় চার হাজার জনকে। ইসলামাবাদের বেশিরভাগ প্রধান সড়ক শিপিং কনটেইনার দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, পুলিশ আধাসামরিক আহিনীর সদস্যদের দাঙ্গা প্রতিরোধী সরঞ্জামসহ মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে মিছিল পার্লামেন্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে। সংঘাতপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা। বাতিল হয়েছে ইসলামাবাদের বেশ কয়েকটি ফ্লাইট। এদিকে, নিরাপত্তা–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রীনগর মহাসড়কে কিছু দুষ্কৃতকারী কিছু দুর্বৃত্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দিয়ে হামলা চালিয়েছে, যার ফলে চারজন রেঞ্জার্স সদস্য নিহত এবং আরও পাঁচজন রেঞ্জার্স সদস্য ও দুই পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছে শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা, তাদের বেশিরভাগের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) শ্রীনগর মহাসড়কে রেঞ্জার্স ও পুলিশ সদস্যদের ওপর গাড়ি চালিয়ে হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে, এই ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী আহত রেঞ্জার্স ও পুলিশ সদস্যদের জন্য সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা প্রদান করারও নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ছদ্মবেশে পুলিশ ও রেঞ্জার্সের ওপর হামলা নিন্দনীয়। পুলিশ এবং রেঞ্জার্সকে শহরে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শেহবাজ বলেন, \'অরাজকতাকারী গোষ্ঠী রক্তক্ষয় চায়, এটা কোনো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ নয়, বরং একধরনের চরমপন্থা।\' প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা রক্তপাত সহ্য করতে পারে না। রাজনৈতিক স্বার্থে রক্তপাত গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। পিটিআই নেতাদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা চললেও, পিটিআই জানিয়েছে যে তারা ইসলামাবাদে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবে যতক্ষণ না তাদের নেতা ইমরান খান মুক্তি পান। আলোচনা চলার মধ্যে, ফেডারেল সরকার পিটিআইকে প্যারেড গ্রাউন্ড অথবা পেশাওয়ার মোড়ে বসার অনুমতি দিয়েছে, তবে নেতৃবৃন্দ স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে তারা ইসলামাবাদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বদলাবেন না। ইসলামাবাদের রেড জোনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকভি বলেন, \'বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানো সরকারের জন্য খুব সহজ, কিন্তু আমরা ধৈর্য ধরব।\' এক সংক্ষিপ্ত মধ্যরাতের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, \'গতকাল যেমন বলেছি, আজও বলছি: ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী তারাই, যারা এই কর্মসূচি ডেকেছে।\' রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, নকভি দায় চাপান পিটিআই কর্মীদের ওপর। তিনি বলেন, \'এই প্রশ্ন তাদের করতে হবে, যারা এই স্থানে হামলা চালাচ্ছে, আর আমরা আমাদের মানুষদের সুরক্ষিত রাখছি।\' স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইমরান খানের দল যেন সরকারকে চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য না করে। তিনি বলেন, \'তারা যেন এমন সীমা অতিক্রম না করে, যা আমাদের চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে। প্রয়োজনে আমরা ২৪৫ ধারা প্রয়োগ করব, শহরে কারফিউ জারি করব, অথবা অন্য কোনো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করব।\'