সম্প্রতি ভারতে মুসলমানদের দানকৃত(ওয়াকফ) সম্পত্তি নিয়ে বহু পুরনো আইন সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে ভারতজুড়ে বিতর্ক ও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এই প্রস্তাবিত আইনের ফলে মুসলিম সম্প্রদায়ের দান করা সম্পত্তি – যা ওয়াকফ বলা হয়– তার ব্যবস্থাপনা ও মালিকানায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে। উল্লেখ্য, ওয়াকফ হল ইসলামিক ঐতিহ্যের অংশ, যেখানে মুসলমানরা জনহিতকর বা ধর্মীয় কাজে ব্যবহারের জন্য সম্পত্তি দান করেন। এই সম্পত্তিগুলি সাধারণত বিক্রি করা যায় না বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় না।ভারতে, এই ধরনের সম্পত্তি ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন (অ্যাক্ট) দ্বারা পরিচালিত হয়,যা রাজ্য-স্তরের বোর্ড গঠনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বর্তমান সরকারের মতে, এই বোর্ডগুলির মধ্যে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা এবং ওয়াকফ সম্পত্তিগুলির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আইন সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে।ভারত সরকার বলছে, মুসলিম সম্প্রদায়ও দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানিয়েছে। প্রস্তাবিত বিলটি ১৯৫৪ সালের ওয়াকফ আইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে বাদ দিচ্ছে।যেমন, \"ওয়াকফ বাই ইউজার\" বা প্রথাগত ব্যবহার দ্বারা স্বীকৃত সম্পত্তিগুলির মালিকানা নিশ্চিত করার ধারা।এর ফলে বহু পুরনো মসজিদ, দরগা ও কবরস্থানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হতে পারে। অন্যদিকে, নতুন আইনে বোর্ডের গঠনে অ-মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।যদিও এটি প্রক্রিয়াটিকে আরও ধর্মনিরপেক্ষ করার জন্য একটি পদক্ষেপ বলে দেখা যেতে পারে,অনেকেই একে মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার খর্ব করার চেষ্টার অংশ হিসাবে দেখছেন। এছাড়া, আইন অনুসারে ওয়াকফ সম্পত্তিগুলি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।তবে সমালোচকদের মতে, এটি ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা হ্রাস করবে এবং অনেক সম্পত্তির মালিকানা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই মনে করছেন যে এই আইনটি ওয়াকফ সম্পত্তিগুলির সুরক্ষার পরিবর্তে হস্তক্ষেপের পথ খুলে দেবে।অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (এআইএমআইএম) নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এই পরিবর্তনগুলিকে \"মুসলমানদের জমি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা\" বলে বর্ণনা করেছেন। বর্তমানে, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৫৮,৮৮৯টি ওয়াকফ সম্পত্তি দখলদারিত্বের শিকার, এবং ১৩,০০০টির বেশি সম্পত্তি মামলা-মোকদ্দমায় জড়িত।তাছাড়া ৪৩৫,০০০টির বেশি সম্পত্তির অবস্থাও অজানা।অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, “সমস্যার মূল্যায়ন সঠিক হতে পারে, কিন্তু এর সমাধান সঠিক পথ নয়।” ভারতের মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ সম্পত্তি শুধুমাত্র দান নয়, এটি তাদের ঐতিহ্য ও সম্প্রদায়ের সুরক্ষার প্রতীক।আইনের পরিবর্তন অবশ্যই দরকার,তবে এটি যেন মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকারকে সম্মান করে এবং তাদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। সংবেদনশীল এই ইস্যুতে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যসূত্র : বিবিসি