সিরিয়ায় নতুন করে শুরু হয়েছে সহিংসতা। এতে করে নতুন দিকে মোড় নিতে পারে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটির সহিংসতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো।১০ বছর ধরে চলা এই গৃহযুদ্ধে অনেকগুলো পক্ষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে জড়িত। তাই নতুন এই সংকটে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এতে করে মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসতে পারে শক্তিশালী দুই মিত্র দেশ তুরস্ক ও রাশিয়া। হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো। শহরটি দখল নিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। কথিত আছে এই বিদ্রোহীদের অস্ত্র সহায়তা দিয়ে থাকে পশ্চিমা দেশগুলো। আর তাদের প্রতিহত করতে প্রেসিডেন্ট আসাদ সরকারকে সহায়তা করে রাশিয়া। শনিবার শহরটি দখলে নেওয়ার পর নতুন করে এই অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা দেখা গেছে। বিদ্রোহীদের থামানোর জন্য আসাদ সরকার বাড়তি সৈন্য মোতায়েন এবং বিমান হামলা পরিচালনা করে। একই সময়, বিদ্রোহীদের অপ্রত্যাশিত অভিযান প্রতিহত করতে ইরান সিরিয়ার সরকারকে সমর্থন করার অঙ্গীকার করেছে। সিরিয়ার দীর্ঘ-স্থায়ী গৃহযুদ্ধে ইরান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং সামরিক সমর্থন দিয়ে আসছে। কিন্তু গত বুধবার শুরু হওয়া এই সর্বশেষ লড়াই-এ তেহরান দামেস্ককে কী ধরনের সমর্থন দিতে পারবে, তা পরিষ্কার নয়। এ ছাড়া রাশিয়া এবং তুরস্ক একে ওপরের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ সিরিয়াতে তাদের দুজনের নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে। বিদ্রোহীরা যখন বুধবার তাদের অভিযান ঘোষণা করে, ঠিক যখন ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহ’র মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয় এবং আঞ্চলিক শান্তির জন্য আশা সৃষ্টি হয়। কিন্তু সিরিয়া পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচের নতুন অস্থিরতার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বিষয়টি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের জন্য ভীষণ বিব্রতকর, এবং এটা এসেছে এমন সময় যখন তার মিত্র দেশগুলো – ইরান এবং তার সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো আর রাশিয়া – তাদের নিজস্ব সংঘাত নিয়ে ব্যস্ত। আসাদের দপ্তর থেকে আসা বিবৃতি অনুযায়ী, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগাহচি দামেস্ক সফরে এসে সিরিয়ার নেতাকে আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, তেহরান সিরিয়া সরকারের পাল্টা-অভিযানে সমর্থন দিতে প্রস্তুত। জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মেদ বিন যায়েদ আল নাহিয়ান সহ আরব নেতারা আসাদকে ফোন করে সংহতি প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে বিদ্রোহীরা ঘোষণা দেয় যে তারা তাদের অভিযান দামেস্ক পর্যন্ত চালিয়ে যাবে। আলেপ্পোর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে, মানুষ লড়াই থেকে পালানোর চেষ্টা করায় শহর থেকে বের হওয়ার প্রধান রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়, এবং পেট্রোল স্টেশনগুলোও তেলের সঙ্কট দেখা দেয়। সরকার সমর্থক আল মায়াদীন টেলিভিশন অনুযায়ী, বিদ্রোহীরা উত্তরের তেল রিফাত শহরেও প্রবেশ করে, যে শহরের নিয়ন্ত্রণ এখন পর্যন্ত সিরিয়া ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স বা এসডিএফ নামের যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি বাহিনীর হাতে ছিল। বিদ্রোহীরা এক বিবৃতিতে এসডিএফ-কে আলেপ্পোর কাছের এলাকা ছেড়ে যেতে নির্দেশ দেয়। কুর্দিরা সিরিয়ান সরকারের বিরোধী হলেও তারা তুরস্ক-সমর্থিত বিদ্রোহীদেরও বিরোধিতা করে। তারা অভিযোগ করে যে তুরস্ক কুর্দিদের সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে হটিয়ে দিতে চায়। তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছে, বিদ্রোহীদের সীমিত পরিসরে অভিযানের লক্ষ্য ছিল বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সরকারি বাহিনীর আক্রমণ থামানো। কিন্তু সরকারী বাহিনী দ্রুত পিছু হটার ফলে অভিযান সম্প্রসারিত হয়ে যায়। এখন রাশিয়া আসাদ বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে তুরস্ক সমর্থিত বিদ্রোহীরাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনাও তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইরান-তুরস্ক-রাশিয়াকে ‘অ্যাক্সিস অব এভিল’ বা শয়তানের অক্ষ বলে অভিহিত করে থাকেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন সেই অক্ষের দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়ে গেলে আদতে যুক্তরাষ্ট্রেরই লাভ হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।