সম্প্রতি বাংলাদেশে ঋণের সুদহার বাড়ানোর ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে গভীর সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিল্পঋণের ওপর সুদের হার বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগ থমকে গেছে, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংকট উত্তরণে প্রয়োজন সুদহার নীতির পুনর্বিবেচনা। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মধ্যে তিনবার নীতিসুদহার বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে নীতিসুদহার দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে, যা শিল্পঋণের সুদহারকে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাইয়ে ব্যাংক ঋণের গড় সুদহার ছিল ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের জুলাইয়ে এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সুদহার বৃদ্ধি উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সুদহার বাড়ানো হলেও, মূল্যস্ফীতি এখনও ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ রয়েছে। অন্যদিকে, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে এবং সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ছে। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বিভিন্ন স্থানে শিল্পকারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন বিধান অনুযায়ী, এখন তিনটি কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে ঋণখেলাপি ঘোষণা করা হয়। আগামী মার্চ থেকে একটি কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলেও ঋণখেলাপি হতে হবে। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এই বিধান ধীরে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সুদহার বৃদ্ধির ফলে নতুন বিনিয়োগ প্রায় থেমে গেছে। শিল্প খাতের সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, ঋণখেলাপির সময়সীমা এক বছরের জন্য শিথিল করা উচিত। অন্যথায় ঋণখেলাপির হার বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আমদানি এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি উভয়ই প্রায় ১৩ শতাংশ কমেছে। কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় শিল্পখাতে উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অটল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জানিয়েছেন, যতক্ষণ মূল্যস্ফীতি সিঙ্গেল ডিজিটে না নামবে, ততক্ষণ নীতিসুদহার বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুদহার বৃদ্ধির বর্তমান নীতি সাময়িকভাবে শিথিল করা জরুরি। সংকটকালীন সময়ে ব্যবসায়ীদের সহায়তা প্রদানের জন্য সুদহার পুনর্বিবেচনা করা উচিত। একই সঙ্গে, কারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, তাদের তালিকা প্রকাশ করার দাবিও উঠেছে। সুদহার বৃদ্ধি, শিল্পখাতে হামলা, এবং মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপে রয়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও নীতিতে নমনীয়তা আনতে হবে। সংকট মোকাবিলায় সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।