ভারতের বিতর্কিত হিন্দু পণ্ডিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ২৫ নভেম্বর গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তার গ্রেপ্তারির পর ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং রাজনৈতিক মহলে বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবং রাজনৈতিক নেতারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন, যা নিয়ে উত্তেজনা আরও বাড়ছে। চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার: ভারতের প্রতিক্রিয়া চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারির পর থেকে ভারতে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ভারতের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে এবং বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জসওয়াল ২৯ নভেম্বর এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, \"আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি এবং হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং হুমকির বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে শক্তিশালীভাবে উত্থাপন করছি।\" ভারতীয় সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, \"বাংলাদেশ সরকারকে আবারো মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের।\" তাদের মতে, চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারি একটি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ, যা অবশ্যই স্বচ্ছ এবং ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে হবে। ইসকন ও উগ্রবাদ: বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারির পর বাংলাদেশে একটি নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার ঘটনায় উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। এর পর বাংলাদেশে ইসকন (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর ক্রাইস্টিয়ান কনশাসনেস) সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। বাংলাদেশ সরকার ইসকনকে ‘উগ্রবাদী সংগঠন’ হিসেবে অভিহিত করেছে, যা ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য উদ্বেগের বিষয়। এ বিষয়ে রণধীর জসওয়াল বলেন, \"ইসকন বৈশ্বিকভাবে একটি খ্যাতিমান এবং সামাজিক কাজে অবদান রাখা সংগঠন। তাদের রেকর্ড ভাল, এবং বাংলাদেশের সরকারকে আবারো অনুরোধ জানাচ্ছি, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।\" ভারতের অভিযোগ এবং বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারির পর সেখানকার ধর্মীয় নেতা যারা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা আশা করছেন, আইনি প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে হবে। এদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর এক পাল্টা বিবৃতিতে জানায়, চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারির পর কিছু মহল ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে অপ্রমাণিত অভিযোগ তুলছে। তারা এটিকে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করে, \"এমন অপ্রমাণিত বিবৃতি শুধু সত্যের অপলাপই নয়, বরং এটি দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতি অবহেলা প্রকাশ করে।\" চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার এবং ইসকন সংগঠন নিয়ে বিতর্ক বাংলাদেশের এবং ভারতের মধ্যে একটি নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ভারতের উদ্বেগ এবং বাংলাদেশ সরকারের পাল্টা অবস্থান থেকে স্পষ্ট যে, দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা এবং তথ্যের ব্যাপারে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। তবে, এই পরিস্থিতি কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হবে, তা সময়ই বলে দেবে। এই সংকটের মধ্যে, উভয় দেশের সরকারই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এবং ন্যায় বিচারের প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে।