ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে নতুন একটি প্রতিরক্ষা নীতি প্রস্তাব করেছে ন্যাটোভুক্ত জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। এই তিন দেশের কর্মকর্তারা রাশিয়া-ইউক্রেনের শান্তি আলোচনাকে উৎসাহিত করতে সীমিত সুরক্ষা চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন। গত শুক্রবার এ পরিকল্পনা নিয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছে ন্যাটো। ইউক্রেনে সহায়তার ব্যাপারে মার্কিন প্রেডিসেন্ট জো বাইডেনের অঙ্গীকারের প্রতিধ্বনি রয়েছে নতুন ওই প্রস্তাবে। এটি মস্কোর আগ্রাসন প্রতিরোধে কিয়েভকে পর্যাপ্ত যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহের পাশাপাশি এ দুই দেশকে আলোচনার টেবিলে বসতে উৎসাহিত করবে বলে দাবি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কী হবে, তাও পর্যবেক্ষণ করবে। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হবে কিনা, এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ নিয়ম অনুসারে যে কোনো নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করতে ন্যাটোর সব সদস্য রাষ্ট্রের সর্বসম্মত ঐকমত্য প্রয়োজন। ফরেন রিলেশন্স কাউন্সিলের ইউরোপের ফেলো লিয়ানা ফিক্স বলেছেন, প্রতিরক্ষা চুক্তিটি শান্তিচুক্তির বিষয়ে আলোচনার উদ্যোগের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কিনা- সেই প্রশ্ন রয়েছে। দেশগুলোর কর্মকর্তাদের মত, ইউক্রেনের সুরক্ষা এবং অস্ত্র সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো, এ ধরনের নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেওয়া হলে দেশটি রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় উৎসাহিত হবে। এদিকে মস্কো দাবি করেছে, ইউক্রেন যুদ্ধে কয়েক হাজার ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছে রুশ সেনারা। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার দাবি করে, এক বছরের যুদ্ধে ইউক্রেনের ৩৯০টি বিমান, ২১১টি হেলিকপ্টার, ৩ হাজার ২৪৩টি ড্রোন, ৪০৫টি এয়ার মিসাইল সিস্টেম, ৮ হাজার ৪২টি ট্যাঙ্ক, অন্য সাঁজোয়া যুদ্ধযান এবং একাধিক রকেট সিস্টেমে সজ্জিত ১ হাজার ৪৫টি যুদ্ধযান, ৪ হাজার ২২২ ফিল্ড আর্টিলারি বন্দুক, মর্টারের পাশাপাশি ৮ হাজার ৫৫৬টি বিশেষ সামরিক যান ধ্বংস করেছে রুশ বাহিনী। অবশ্য যুদ্ধে কত জন ইউক্রেনীয় সেনা এবং সাধারণ নাগারিককে রুশ সেনারা হত্যা করেছে, সে তথ্য দেয়নি মস্কো। এমনকি এই যুদ্ধে নিজেদের কী কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাও উল্লেখ করেনি। যুদ্ধের এক বছরের মাথায় আকস্মিক কিয়েভ সফর করেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ ফয়সাল বিন ফারহান। রোববার সফরকালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে ৪০ কোটি ডলারের মানবিক সহায়তা চুক্তি সই করেন তিনি। এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ সপ্তাহে বেইজিং সফর করবেন পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। মুখপাত্র হুয়া চুনয়িং জানান, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে লুকাশেঙ্কোর এই সফর হবে। তবে সফরের এজেন্ডা বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি বেইজিং। রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার কথা প্রবলভাবে বিবেচনা করছে চীন- যুক্তরাষ্ট্রের এমন উদ্বেগের মধ্যেই এই সফর হচ্ছে। সব পক্ষের স্বার্থ রক্ষায় চীনের ১২ দফা শান্তি প্রস্তাবনা গভীরভাবে বিশ্নেষণ প্রয়োজন বলে মনে করে মস্কো। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গতকাল বলেছেন, শান্তির কাছাকাছি আনতে পারে এমন যে কোনো উদ্যোগ গ্রহণযোগ্য। চীনা বন্ধুদের পরিকল্পনার প্রতি মস্কো গভীর মনোযোগ দিচ্ছে। তবে আপাতত শান্তিপূর্ণ সমাধানের কোনো লক্ষণ দেখছেন না বলে দাবি করেন পেসকভ। এদিকে পূর্ব ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা দেশটির যৌথ বাহিনীর কমান্ডারকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রোববার এক সংক্ষিপ্ত ডিক্রিতে মেজর জেনারেল এডওয়ার্ড মাইখাইলোভিচ মোসকালভকে বরখাস্ত করা হয়। তবে কী কারণে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি। গত বছরের মার্চ থেকে১ অঞ্চলটিতে যুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। খবর ইউএসএ টুডে, এপি ও ভক্স ডটকমের।