আজ ১৬ ডিসেম্বর | মহান বিজয় দিবস

প্রকাশিতঃ ডিসেম্বর ১৬, ২০২৪ | ৬:৩৯ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বাঙালি জাতি। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করে। এই দিনটি শুধু একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত নয়, এটি বাঙালি জাতির চিরন্তন সাহস, ত্যাগ এবং বিজয়ের প্রতীক। বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এই দিনটি জাতির গৌরবময় অর্জনের স্মারক। লাখো শহীদ, সম্ভ্রমহারা মা-বোন এবং জাতির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি আজ জাতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপিত হয়েছিল ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর থেকেই। পাকিস্তানের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন, \"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।\" এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে গঠিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত শক্তিতে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। ৯ মাসের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আসে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত—ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয় ৩০ লাখ শহীদ, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম এবং কোটি মানুষের ত্যাগের ফসল। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। সড়ক, রেললাইন, ব্রিজসহ ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো পুনঃনির্মাণ এবং অর্থনীতিতে গতি আনতে মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন। তাঁর নেতৃত্বে প্রণীত হয় সংবিধান, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে রচিত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতি হারায় তার মহান নেতা। এরপর স্বাধীনতার পরবর্তী অগ্রযাত্রা থেমে যায়, শুরু হয় ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। মহান বিজয় দিবস আমাদের শুধু উদযাপনের দিন নয়; এটি শিক্ষা গ্রহণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলারও দিন। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের। আজকের দিনে আমাদের শপথ নিতে হবে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে হবে। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জন্য চিরন্তন প্রেরণা হয়ে থাকবে।