আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুমের সঙ্গে ভারতীয় সম্পৃক্ততা পেয়েছে গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। শনিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে যে প্রতিবেদন দিয়েছে কমিশন সেখানে একাংশে বলা হয়েছে, ‘নিখোঁজ ব্যক্তিদের মাথায় গুলি করে লাশ সিমেন্টের ব্যাগ দিয়ে বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হতো। মরদেহ ট্রেনের নিচে ফেলা, তুলে নেওয়া ব্যক্তিকে গাড়িতে চাপা দেওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে।’ কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গুম শুধু বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ। সুখরঞ্জন বালি ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে গুমের পর ভারতে স্থানান্তরের ঘটনা উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে। সুখরঞ্জন বালিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে অপহরণের পর ভারতীয় কারগারে পাওয়া যায়। যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের কমিশনকে জানিয়েছেন, তাঁকে যে গোপন বন্দিশালায় রাখা হয়েছিল, সেই সেলের বাইরে কাউকে হিন্দিতে বলতে শুনেছেন, ‘তাঁকে কখন ধরা হয়েছে? তিনি কোনো তথ্য দিয়েছেন? এখন পর্যন্ত কী জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে?’ কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, র্যাবের গোয়েন্দা শাখার যারা অভিযানে সক্রিয় ছিল তারা জানিয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বন্দিবিনিময় করত। বাংলাদেশের গুমের ঘটনা যে আন্তর্জাতিক ও সুসংগঠিত চক্রের অংশ এসব ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে ২০১৫ সালে রাজধানীর উত্তরা থেকে তুলে নেওয়ার পর ভারতে পাওয়া এর উদাহরণ। তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে জানা গেছে, তাঁকে যে নির্জন স্থানে রাখা হয়েছিল সেখানে টিএফআই (টাস্ক ফোর্স অব ইন্টারোগেশন) লেখা কম্বল ছিল, সেই সময়ে র্যাব সদর দপ্তরের তত্ত্বাবধানে টিএফআই পরিচালিত হতো। প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্ত কমিশন পরিদর্শনে নিশ্চিত হয়েছে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা এখন টিএফআইয়ে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে বন্দিশালার ভেতরের অবকাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে কিছুদিন আগে। সালাহউদ্দিন আহমেদ কমিশনকে জানিয়েছেন, তাঁকে ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছিল। যে সন্দেহভাজন বাংলাদেশি কর্মকর্তা সেখানে ছিলেন, তিনি পরিচয় লুকাতে ‘যম টুপি’ পরা ছিলেন, যা দুই দেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এবং নিরাপত্তা বাহিনীর যোগাযোগকে নির্দেশ করে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একজন সৈনিক তদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন, তিনি ‘বন্দি বিনিময়ের’ সময়ে ২০১১ সালে দুই দফা তামাবিল সীমান্তে ছিলেন। দুই দফায় তিনজন ‘বন্দিকে’ আনা হয়। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সাদা পোশাকধারী সদস্যরা ছিলেন। দু’জন ‘বন্দিকে’ রাস্তার পাশে হত্যা করা হয়। জীবিত আরেক বন্দিকে র্যাবের আরেকটি দলের কাছে তুলে দেওয়া হয়। র্যাবও দু’জন ‘বন্দিকে’ একই প্রক্রিয়ায় ভারতীয়দের কাছে তুলে দিয়েছিল। প্রতিবেদনে তদন্ত কমিশন সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশি কেউ ভারতে গুম রয়েছে কিনা তা পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ জোর দিয়ে দেখতে পারে।