বিজয় দিবসে ক্রিকেটারদের কাছ থেকে দুটি উপহার পেয়েছে দেশ। সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে ছেলেদের উপহার টি২০ জয়। আর মালয়েশিয়ায় অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি২০ এশিয়া কাপে বিজয়ের আনন্দ ছড়ান মেয়েরা। শ্রীলঙ্কাকে ২৮ রানে হারিয়ে টুর্নামেন্টে শুভসূচনা করে বাংলাদেশ। ক্রিকেটের এ দুই বিজয় দ্বিগুণ করেছে জাতির বিজয় দিবস উদযাপনের আনন্দ। ওয়েস্ট ইন্ডিজে টাইগারদের সাফল্য একদিক থেকে ঐতিহাসিক। কারণ, এটি ক্যারিবীয় দ্বীপদেশে প্রথম টি২০ জয় বাংলাদেশের। টানটান উত্তেজনা আর নাটকীয় শেষ ওভারে হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে এক বল হাতে রেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অলআউট করে সাত রানে ম্যাচ জেতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর রেকর্ড ঠাঁই পেয়েছে ক্রিকেট ইতিহাসে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজ জিতলেও হেরেছে ২০ ওভারের ক্রিকেটে। এবার টেস্ট সিরিজ ড্র করা সম্ভব হলেও ওয়ানডেতে হয়েছে ভরাডুবি। সে হতাশা কাটিয়ে লিটন কুমার দাসের নেতৃত্বে জয় দিয়ে টি২০ সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। ব্যাটার লিটন হতাশ করলেও অধিনায়ক হিসেবে ছিলেন আলোকিত। শেখ মেহেদী হাসান প্রশংসায় ভাসান অধিনায়ককে, ‘লিটন যেভাবে অধিনায়কত্ব করেছেন, তা অসাধারণ। অনেক সাহস দেখিয়েছেন। যে সময়ে যেটা করা দরকার, সেটা করেছেন।’ গোল্ডেন ডাক করা উইকেটরক্ষক এ ব্যাটার স্টাম্পের পেছনে ছিলেন চটপটে। পাঁচটি ডিসমিসাল করে রেকর্ড গড়েছেন। কিংসটাউনের অ্যারন ভেলের উইকেট ছিল অননুমেয়। অনুশীলনের সঙ্গে ম্যাচের উইকেটের কোনো মিল ছিল না বলে জানান লিটন। যে কারণে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে হোঁচট খেতে হয় ৩০ রানে তিন উইকেট হারিয়ে। ১৫ রানে ওপেনিং জুটির বিচ্ছেদ ঘটে তানজিদ হাসানের আউটে। লিটন আলতো করে আকিল হোসেনকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে শূন্য হাতে সাজঘরে ফেরেন। আফিফ হোসেনকে থিতু হওয়ার সুযোগ দেননি রসটন চেজ। এই তিন ব্যাটারের আউটের পর জাকের আলীকে নিয়ে সৌম্য সরকারের লড়াই শুরু। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে ৪২ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন তারা। জাকেরের ছয় হওয়া বল বাউন্ডারি লাইন থেকে ক্যাচ বানান শেফার্ড। ২৭ বলে ২৭ রান করে জাকেরের আউটে মনোযোগ হারান সৌম্যও। ম্যাককয়ের স্লোয়ার ডেলিভারিতে তাঁর অফ স্টাম্প উড়ে যায়। তিন ছয় ও দুই চারে ৩২ বলে ৪৬ রান করেন তিনি। গ্লোবাল টি২০ লিগে ভালো করার সুফল পেলেন সৌম্য-মেহেদী। ৯৬ রানে পঞ্চম উইকেটের পতন হলেও শামীম হোসেন পাটোয়ারির ক্যামিও ইনিংস দলকে নিয়ে যায় ১৪৭ রানে। তিন ছয় ও এক চারে ১৩ বলে ২৭ রান করেন শামীম। ২০৭.৬৯ স্ট্রাইক রেটে ইমপ্যাক্ট ইনিংস খেলে প্রশংসিত তিনি। একেই বলে ইমপ্যাক্ট ইনিংস। শেখ মেহেদী করেছেন হার না মানা ২৬ রান। ১৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা উইন্ডিজ দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে উইকেট হারায়। স্যামুয়েল বাদ্রিকে আউট করে ব্রেকথ্রু দেন তাসকিন আহমেদ। তৃতীয় ওভার থেকে শুরু শেখ মেহেদী শো। টানা চার উইকেট নিয়ে ম্যাচ হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছিলেন এ অফ স্পিনার। কিন্তু ক্যারিবীয় অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েল ‘ব্যাটিং পাওয়ার’ দেখিয়ে ছন্দটা নিজেদের করে নেন। শেষ তিন ওভারে ২০ রান করতে হতো স্বাগতিকদের। সেখান থেকেই ম্যাচ নিজেদের করে নেন তাসকিন, সাকিব ও হাসান। ১৮তম ওভারে তাসকিন ২ রান আর ১৯তম ওভারে সাকিব ৮ রান দিলে শেষ ওভারে নাটকীয়তায় রূপ নেয় ম্যাচ। হাসান মাহমুদের মারাত্মক বোলিংয়ে বিজয় কেতন ওড়ে ক্যারিবীয় দ্বীপদেশে। হৃদয়ছোঁয়া এ জয়ে বোলারদের প্রশংসা করেন লিটন, ‘আমরা ধরেই নিয়েছি, এখানে ১৫০-১৬০ রান করাই হবে যথেষ্ট। সে সঙ্গে জানতাম, এই রান ডিফেন্ড করার জন্য আমাদের বোলাররাই যথেষ্ট। আমরা এই স্কোর (১৪৭) নিয়েই লড়াই করতে পারব। আমি শুধু চেয়েছি, পুরো দলটা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলবে। আমি যেমন চেয়েছিলাম, ক্রিকেটাররা তাদের সেরা প্রতিভা ও মান দেখিয়েছে। অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে।’ কুয়ালালামপুরে নির্ধারিত ১৭ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২২ রান করে বাংলাদেশ। শূন্য রানে ওপেনিং জুটি ভাঙলেও দ্বিতীয় উইকেট যোগ করে ৪৪ রান। মোসাম্মত ইভা ১৮, সুমাইয়া আক্তার ২৪, আফিয়া আশিমা ২৫ ও সাদিয়া আক্তার ৩১ রান করেন। রাশমিকা শেওয়ানদী চার আর প্রামেদু মাতসারা ও আসেনি থালাগুনি দুটি করে উইকেট নেন। জবাবে নির্ধারিত ১৭ ওভারে ৮ উইকেটে ৯৪ রান করতে পারে শ্রীলঙ্কা। সানজানা কাভেনদি ১৩ বলে ২১, রাশমিকা ২০ রান করেন। নিশিতা আক্তার নিশি, ফারজানা ইয়াসমিন দুটি করে ও সুমাইয়া আক্তার তিনটি উইকেট নেন। ম্যাচসেরা হন নিশিতা। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ স্বাগতিক মালয়েশিয়ার সঙ্গে আজ সকালে।