যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্বস্তি আরও বেড়ে গেল। পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়া ও নথিপত্র জালিয়াতির মামলায় আদালতের দ্বারস্থ হয়ে অব্যাহতির আবেদন করেছিলেন ট্রাম্প। তবে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের একটি আদালত তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে। আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন ট্রাম্প। তার ঠিক এক মাস আগেই আদালতের এই আদেশ তাঁর জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে। মামলার পটভূমি পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে একটি বড় কালো দাগ হয়ে আছে। অভিযোগ, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে মুখ না খুলতে ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়া হয়েছিল। ওই অর্থ পরিশোধ করেন ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন। তবে পরবর্তী সময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে বিষয়টি ব্যবসায়িক নথিতে গোপন রাখা হয়। এ বিষয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৩৪টি অভিযোগ আনা হয়। চলতি বছরের মে মাসে নিউ ইয়র্কের একটি আদালত তাঁকে সব অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। ১১ জুলাই এই মামলার সাজা ঘোষণার তারিখও নির্ধারণ করেছিলেন বিচারপতি। তবে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়লাভের পর মামলার বিচার কার্যক্রমে নতুন মোড় নেয়। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ এবং ট্রাম্পের আবেদন মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক একটি আদেশে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাজের জন্য প্রেসিডেন্ট বিচার থেকে রেহাই পাবেন। এ আদেশকে ভিত্তি করে ট্রাম্পের আইনজীবীরা দাবি করেন, ট্রাম্প বিচারের আওতামুক্ত এবং এই মামলাটি বাতিল করা উচিত। তাঁদের যুক্তি ছিল, মামলা চলতে থাকলে তা নতুন সরকারের কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে। আদালতের রায় তবে ম্যানহাটনের বিচারপতি হুয়ান মার্চান গতকাল ৪১ পৃষ্ঠার আদেশে এই আবেদন খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, “ট্রাম্প সন্দেহাতীতভাবে ব্যক্তিগত কারণে ব্যবসায়িক নথি জালিয়াতির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ কারণে এই মামলার বিচারকাজ তাঁর কার্যনির্বাহী কর্তৃত্ব এবং সেটির বাস্তবায়নের ওপর কোনো হুমকি তৈরি করবে না।” বিচারপতি আরও উল্লেখ করেন, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ প্রেসিডেন্টের প্রাতিষ্ঠানিক দায়মুক্তির কথা বললেও, ব্যক্তিগত অপরাধ ও জালিয়াতি এ থেকে আলাদা। ফলে এই মামলার বিচারকাজ অব্যাহত থাকবে। ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া রায়ের পর ট্রাম্পের আইনজীবী ও তাঁর দলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এটি যে ট্রাম্পের জন্য নতুন অস্বস্তি তৈরি করেছে, তা স্পষ্ট। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে এই মামলার রায় তাঁর ভাবমূর্তিকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। রাজনৈতিক প্রভাব নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা নানা বিতর্ক, বিশেষত স্টর্মি ড্যানিয়েলস মামলার মতো ব্যক্তিগত বিষয়ে আইন ভঙ্গের অভিযোগ তাঁর সমর্থকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্পের বিরোধীরা এই রায়কে স্বাগত জানালেও তাঁর সমর্থকরা এটিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছেন। বিচারপতির এই আদেশের পর মামলার বিচার কার্যক্রম কীভাবে এগোয় এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর এর কী প্রভাব পড়ে, তা এখন দেখার বিষয়।