সমাপ্ত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে তিন হাজার ৪৬ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ছিল তিন হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। ব্যাংকারদের মতে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কৃষি ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) কৃষি ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এ সময়ে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৫২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। কৃষকদের ঋণ পরিশোধের প্রবণতা বৃদ্ধি বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কৃষকরা ঋণ বিতরণের চেয়ে বেশি পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করেছেন। জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে কৃষি খাত থেকে ১৭ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কৃষি ঋণ বিতরণ বাড়াতে সরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতি মাসে এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দুই মাস পরপর সভা করা হয়। এর ফলে ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণ বিতরণে আগের চেয়ে বেশি উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, “যেসব ব্যাংক কৃষি ঋণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না, তারা অন্য সক্ষম ব্যাংকগুলোতে তাদের ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারবে। এর ফলে কৃষি ঋণ বিতরণ গতিশীল হচ্ছে এবং চলতি অর্থবছরে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।” ঋণ বিতরণ ও বকেয়া ঋণের চিত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ছয় হাজার ৫৬৮ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছে, যা তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। অপরদিকে, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো ১১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যা তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৫২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এদিকে, গত বছরের ডিসেম্বরে কৃষি খাতে বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫০ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। কিছু ব্যাংকের ঋণ বিতরণে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১১টি ব্যাংক তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৩০ শতাংশ কম ঋণ বিতরণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তারল্য সংকট ও নির্বাচনী পরিস্থিতির কারণে কিছু ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। ভবিষ্যতের আশাবাদ সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, জানুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী সময়ে কৃষি ঋণ বিতরণ বাড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃষি খাতে চলতি অর্থবছরের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা পূরণে ব্যাংকগুলো নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।