খুলনা নগরীর মুজগুন্নি এলাকার বাস্তুহারা কলোনির ১৭২টি পরিবারের মধ্যে বিরাজ করছে উচ্ছেদ আতঙ্ক। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে তাদের উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে। পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ না করার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন কলোনির বাসিন্দারা। এ অবস্থায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান আপাতত স্থগিত করলেও জানুয়ারিতে তাদের উচ্ছেদ করার ঘোষণা দিয়েছে। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ৪২টি প্লটের প্রায় ২ একর জমিতে বেশ কিছু পরিবার বরাদ্দ ছাড়াই বসবাস করছে। সেখানকার বাসিন্দাদের গত ২৭ নভেম্বরের মধ্যে জায়গা খালি করে দিতে বলা হয়। তা কার্যকর হয়নি। এরপর ৭ ডিসেম্বর এলাকায় মাইকিং করে উচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়া হয়। ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজ উদ্যোগে বসতবাড়ি ও মালপত্র সরিয়ে নিতে বলা হয়। এর প্রতিবাদে ১০ ডিসেম্বর সেখানকার বাসিন্দারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। ১২ ডিসেম্বর উচ্ছেদ অভিযান চালানোর কথা থাকলেও কিছুটা পিছু হটে সংস্থাটি। বাস্তুহারা কলোনির বাসিন্দারা জানান, এ ৪২টি প্লটে দীর্ঘদিন ধরে ১৭২টি পরিবারের সহস্রাধিক মানুষ বসবাস করেন। এ জায়গাটি অনেক নিচু ছিল। লোকজন নিজেরা মাটি ভরাট করে জায়গাটি বসবাসযোগ্য করে তোলে। জায়গাটি তাদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য তারা বহুবার গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেছেন। কিন্তু তাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এখানে যারা বসবাস করেন সবাই খুবই নিম্ন আয়ের মানুষ, কারও নিজস্ব কোনো জমি নেই। ঘরগুলো কাঁচা। কোথাও গিয়ে ভাড়া বাসায় থাকার মতো সামর্থ্য নেই। বাস্তুহারা কলোনির বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদারা এখানে বসবাস করেছেন। এখন আমরা বসবাস করছি। উচ্ছেদ করা হলে আমরা কোথায় যাব, কী করব?’ তিনি বলেন, ‘এ দেশে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে জায়গা দেওয়া হয়েছে, আর আমরা দেশের নাগরিক হয়েও কি থাকার জায়গা পাব না?’ কলোনির বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘এখানকার বাসিন্দারা সবাই উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন। কী হবে তা নিয়ে আমরা সবাই দুশ্চিন্তায় আছি। অন্য কোথাও পুনর্বাসন ছাড়া যেন উচ্ছেদ করা না হয় সেটিই আমাদের দাবি।’ কলোনির আরেক বাসিন্দা দুলিয়া বেগম বলেন, ‘আমরা এখানে প্রায় ৫০ বছর ধরে আছি। মাটি দিয়ে জায়গা ভরাট করার পর অনেক কষ্ট করে ঘর তুলে থাকি। উচ্ছেদ করা হলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমরা কোথায় যাব?’ গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জানায়, এলাকাটি বাস্তুহারা কলোনি নামে পরিচিত হলেও খাতাপত্রে নাম ‘বয়রা আবাসিক এলাকা’। এ এলাকার সি-ব্লকের ৫৫টি প্লট ১৯৮৭ সালে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যে ৪২টি প্লট বেদখল থাকায় সেগুলো বরাদ্দ দেওয়া লোকজনকে বুঝিয়ে দেওয়া যায়নি। সে কারণে উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে মোট ৪ দফায় উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। সংস্থাটির খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের মধ্যে সেখানকার বাসিন্দারা তাদের স্থাপনা সরিয়ে না নিলে তখন উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, ‘শুধু খুলনাতেই নয়, সারাদেশেই সংস্থাটির অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধার কার্যক্রম চলছে।’