রাজধানীর অদূরে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন নিয়ে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম পর্ব এবং ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ৩ ডিসেম্বর শূরায়ে নেজামের (জুবায়েরপন্থি) আয়োজনে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রস্তুতি হিসেবে পাঁচ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা শেষ হয়েছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর সাদপন্থিরা জোড় ইজতেমা করবেন। তবে জুবায়েরপন্থিরা করতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেওয়ায় বিরোধ এখন তুঙ্গে। এই পরিস্থিতিতে আজ বুধবার দুই পক্ষের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বিদের নিয়ে পৃথক বৈঠক করবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্র জানায়, দুই পক্ষ সমঝোতায় না এলে প্রয়োজনে ইজতেমার অনুমতি বাতিল করা হতে পারে। তাবলিগ জামাতের উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। মাওলানা জুবায়ের আহমেদের অনুসারীরা বলছেন, ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের জোড় ইজতেমা করার সরকারি অনুমোদন নেই। তারা জোরপূর্বক তা করতে চায়। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে মামলায়ও জড়িয়েছে দুই পক্ষ। জোড় ইজতেমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে সাদপন্থিদের শীর্ষ মুরব্বি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে গত রোববার টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলা করেছেন মোহাম্মদ হোসেন নামে জুবায়েরপন্থি এক সাথী। এমন উত্তেজনার মধ্যেই আজ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসবে দুই পক্ষ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরী এবং জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের চলতি দায়িত্বে থাকা ড. নাসিম আহমেদও অংশ নেবেন। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গতকাল বলেন, এ নিয়ে এখনই বলার মতো কিছু নেই। বৈঠক শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব। জননিরাপত্তা বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে দুই পক্ষকে সমঝোতায় আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হবে। জানা গেছে, আজ বেলা ১১টায় দুই পক্ষকে একসঙ্গে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা একসঙ্গে বসতে রাজি হয়নি। এ অবস্থায় ঝামেলা এড়াতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাদপন্থিদের বেলা ১১টায়, জুবায়েরপন্থিদের বেলা ১২টায় বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জননিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আজ যদি তারা সমঝোতায় না আসেন, তাহলে প্রয়োজনে ইজতেমার অনুমতি বাতিল করা হতে পারে। কোনো অবস্থায়ই সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে দিতে পারে না। কারণ তৃতীয় পক্ষ এর সুযোগ নিতে চেষ্টা করবে। গত রোববার রাত থেকেই পুরো ইজতেমা মাঠ দখলে নিয়েছেন তাবলিগ জামাতের ‘শূরায়ে নেজাম’ বা মাওলানা জুবায়ের আহমেদের অনুসারীরা। তারা পুরো মাঠে পাহারা বসিয়েছেন। কেউ মাঠে প্রবেশ করতে চাইলে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তারা। এই মাঠেই পাঁচ দিনের ‘জোড়’ পালনের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা। গতকাল সাদ অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ২০ তারিখে ইজতেমা মাঠেই জোড় পালন করব। আশা করছি, সরকার শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কাছে মাঠ হস্তান্তর করবে।’ সাদ অনুসারীদের জোড় ইজতেমা ঠেকাতে গত রোববার বিকেলে ইজতেমা মাঠে অবস্থানের ঘোষণা দেন মাওলানা মামুনুল হক। এর পর রাত থেকেই ইজতেমা মাঠে দলে দলে প্রবেশ করতে থাকেন জুবায়ের অনুসারীরা। জুবায়ের অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মো. হাবীবুল্লাহ বলেন, ‘বুধবার (আজ) আমরা প্রশাসনের সঙ্গে বসব। দেখি তারা কী সিদ্ধান্ত দেয়। এর পর অবস্থা বুঝে আমাদের ব্যবস্থা।’ শান্তির আহ্বান জানিয়ে আবারও খোলা চিঠি শান্তির আহ্বান জানিয়ে আবারও জুবায়েরপন্থিদের প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছেন সাদ অনুসারীরা। গতকাল সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের লেখা চিঠিতে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে মাওলানা জুবায়েরের উদ্দেশে বলা হয়– আগামী ২০ ডিসেম্বর জোড় শুরু হতে যাচ্ছে। সেখানে কোনো পক্ষের একজন সাথিও যদি আপনার অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার দায়ভার সম্পূর্ণভাবে আপনাকে ও আপনার পরামর্শদাতাদের বহন করতে হবে। এ বিষয়ে জুবায়ের অনুসারী মো. হাবীবুল্লাহ বলেন, ‘তারা এরকম চিঠি দিতেই থাকেন। আমরা এসব দেখি না। যাদের আকিদাই ঠিক নেই, তাদের চিঠির মূল্য কী?’ অপরদিকে তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘আগামী ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর আমাদের পুরোনো সাথিদের জোড় টঙ্গীর ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। এতে কয়েক লাখ সাথি উপস্থিত হবেন।’