ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ডাকাতি চেষ্টার ঘটনায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে রুপালি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার তারেক মাহমুদ বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানায় মামলা করেছেন। আত্মসমর্পণকারী তিনজনের নাম আরাফাত (১৬), নিলয় মোল্লা নীরব (২২) ও সিফাত (১৬)। তারা কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকার বাসিন্দা। নীরব পেশায় গাড়িচালক। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর কুমুরিয়া গ্রামে। অন্য দু’জন শিক্ষার্থী। বিষয়টি নিশ্চিত করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকে ডাকাতি চেষ্টার ঘটনায় দস্যুতার মামলা হয়েছে। রুপালি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার তারেক মাহমুদ বাদী হয়ে এই মামলা করেন। বিষয়টি আমরা আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি ওসি মাজহারুল ইসলাম আরও বলেন, আত্মসমর্পণ করা তিনজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে নিলয় মোল্লা নীরবের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আর বাকি দুইজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে পারেন। প্রসঙ্গত, ক্রেতা-বিক্রেতায় জমজমাট রাজধানীর উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ার মধ্যপাড়া। দুপুর ২টার দিকে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ডাকাত হানা দিয়েছে। মসজিদের মাইক থেকেও জানানো হয়। এর পর শত শত মানুষ এসে ব্যাংক ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান নেয়। দিনদুপুরে এমন জিম্মি ঘটনার খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত ঘিরে ফেলে ব্যাংক ভবনটি। উৎকণ্ঠা, উত্তেজনার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা যৌথ বাহিনীর কাছে তিন ডাকাত আত্মসমর্পণ করলে জিম্মিদশার অবসান হয়। এর পর আত্মসমর্পণ করা এক তরুণ ও দুই কিশোরকে নেওয়া হয় পুলিশ হেফাজতে। পরে বৃহস্পতিবার রাতে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বলেন, ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় যে তিনজন ডাকাতি করতে আসে, তাদের দু’জন কিশোর, একজন তরুণ। একজনের বয়স ২২; অন্য দু’জনের ১৬ বছর। তারা কোনো চলচ্চিত্র বা ভিডিও গেমস দেখে একটি ফ্যান্টাসিতে ভুগে এ কাজ ঘটিয়েছে। তারা ১৮ লাখ টাকা ব্যাগে নিয়েছিল। এ টাকা দিয়ে একজন কিডনি রোগীকে সাহায্য করার কথা জানিয়েছে। পাশাপাশি আইফোন কেনার পরিকল্পনা ছিল বলে জানিয়েছে। তারা যে রোগীর ঠিকানা দিয়েছে, সেটি যাচাই-বাছাই চলছে। আদৌ সত্য কিনা, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। তিনি আরও বলেন, তাদের অপরাধী বলা যায় না। তারা হয়তো মিস গাইডেড। তারা অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে হয়তো এ ডাকাতি করতে আসে। মুভি দেখে এমন একটি অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে ডাকাতি করতে এসেছিল বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। অভিযান বিষয়ে এসপি আহম্মদ মুঈদ বলেন, ঘটনার শুরু থেকেই আইজিপি লাইভে এসে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন– কোনো হতাহতের ঘটনা ছাড়াই যেন অভিযান শেষ হয়। এ জন্য ডাকাতদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ধরে কথা বলেছি। আইজিপি স্যারের সঙ্গেও ডাকাতদের কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। বাইরে ডাকাত দলের কেউ ছিল কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনজন ছাড়া বাইরে কেউ ছিল না। তবে তারা প্রাথমিকভাবে আমাদের বলেছিল, বাইরেও তাদের লোক আছে। পুলিশকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছিল মনে হয়।’ ব্যাংকে ঢোকার পরের পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মুঈদ বলেন, ‘ব্যাংকের যে সিকিউরিটি গার্ড সিটে ছিল না; ওই সময় আরেকজন পিয়নকে তার চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়। ওরা যেহেতু আর্মস নিয়ে ঢুকেছে, টিনেজ; সবাই ভয় পেয়েছে। সবাইকে হেডডাউন করতে বলেছিল। পরে ওরা ভেতরে আটকা পড়ে যায়। কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে এদের সম্পৃক্ততা আছে কিনা; এদের কোনো ‘বড়ভাই’ গাইড করেছে কিনা– এসব খতিয়ে দেখবে পুলিশ। রাত সাড়ে ৭টার দিকে ব্যাংক পরিদর্শন শেষে রূপালী ব্যাংকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের জিএম ইসমাইল হোসেন শেখ বলেন, ব্যাংক থেকে জনগণের কোনো আমানত খোয়া যায়নি। রোববার থেকে ব্যাংকের এ শাখায় আবার আগের মতো লেনদেন হবে। ডাকাতরা হানা দেওয়ার সময় ব্যাংকে মোট ছয় গ্রাহক ছিলেন। তারা নিরাপদে আছেন। সে সময় ব্যাংকে ছিলেন সাত কর্মকর্তা, এক অফিস সহকারী ও দু’জন ফায়ার গার্ড। গ্রাহক সেজে তারা ব্যাংকে ঢুকেছিল।