বাড়ি ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে কুমিল্লার সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা

প্রকাশিতঃ ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ | ৬:৪৯ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গলায় জুতার মালা দিয়ে আবদুল হাই ভূঁইয়া কানু নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা করা হয়েছে। এ ঘটনার পর তিনি প্রাণ ভয়ে এলাকা ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। পুলিশ জানায়, নিরাপত্তার স্বার্থে ওই মুক্তিযোদ্ধার অবস্থান গোপন রাখা হচ্ছে। তিনি ভালো আছেন। এদিকে ঘটনার পর ওই মুক্তিযোদ্ধা কোথায় আছেন তাও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে তার পরিবার জানিয়েছে তিনি অসুস্থ হওয়ায় অজ্ঞাত একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পুলিশ আরও জানায়, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ আসায় পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে বিষয়টি তদন্ত ও মাঠে অভিযান চালাচ্ছে একাধিক টিম। স্থানীয় সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধা কানু ছিলেন উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। মুক্তিযোদ্ধা কানুর সঙ্গে স্থানীয় সাবেক এমপি ও রেলপথ মন্ত্রী এমপি মুজিবুল হকের সঙ্গে দলীয় বিরোধ ছিল। এলাকায় ২০১৬ সালে যুবলীগ নেতা রানা হত্যা মামলায় তিনি (কানু) ও তার ছেলে বিপ্লব ছিলেন চার্জশিটভুক্ত আসামি। এ মামলায় কানু গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এলাকার লোকজনের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ জানায়, এরই মধ্যে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে ৭ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে গ্রেপ্তার এড়াতে আগেই জড়িতরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরাফাতুল ইসলাম বলেন, ঘটনায় যারা জড়িত আছেন তাদের সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মু. বেলাল হোসেন গণমাধ্যমে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় বলেন, মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টির সঙ্গে জামায়াতকে জড়িত করা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কানুর সঙ্গে ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে তার এলাকার কিছু লোক এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। যারা জড়িত জামায়াত তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছে। এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা কানুর ছেলে স্থানীয় বাতিসা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বিপ্লব বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে বাবাকে জেলার বাহিরে নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছি। তিনি এ হেনস্তার পর আরও অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, যারা ঘটনায় জড়িত তারা বিষয়টি মীমাংসার জন্য চাপ দিচ্ছেন। জামায়াতের অভিযোগ অস্বীকার করে বিপ্লব বলেন, আমার বাবা স্থানীয় সাবেক এমপি মুজিবুল হকের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে হত্যাসহ ৯টি মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছেন। আমিসহ আমার পরিবারের অনেকেই মামলা হামলার শিকার হয়ে দল ক্ষমতায় থাকলেও গত ১০ বছর এলাকায় আসতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় জামায়াত সমর্থক প্রবাসী আবুল হাসেমের নেতৃত্বে অহিদ, পেয়ার, বেলাল, ইসমাইল, রাসেল, ফারহান, ফরহাদ, নয়নসহ ১৫ থাকে ২০ জন আমার অসুস্থ বাবাকে স্থানীয় পাতড্ডা বাজার থেকে ধরে নিয়ে স্কুলের সামনে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে। ভিডিওতে তাদের ছবিও আছে। তিনি জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন। এর আগে গত রোববার দুপুরের দিকে চৌদ্দগ্রামের নিজ এলাকা কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করা হয়। জুতার মালা ও এলাকা থেকে ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়ার ১ মিনিট ৪৬ সেকেণ্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধার কানুর গলায় জুতার মালা দিয়ে তাকে এলাকা এমনকি কুমিল্লায় থাকতে পারবেন না বলে হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় ক্ষমা চেয়ে ও এলাকায় আসবেন বলে নিশ্চয়তা দিয়ে তিনি এলাকা ত্যাগ করেন। পরবর্তী তিনি অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। তার গ্রামের বাড়ি ঘটনাস্থলের অদূরে লুদিয়ারা গ্রামে। চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ দেখে এরই মধ্যে ৭/৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশের একাধিক টিম। তবে ঘটনার পর থেকে জড়িতদের কেউই এলাকায় নেই।