নির্বাচন কমিশনের বিদ্যমান তালিকাভুক্ত ভোটারদের তথ্য যাচাইয়ে কোনো উদ্যোগ নেই ইসির (নির্বাচন কমিশন)। অন্য বছরগুলোর মতো গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য তথ্য সংগ্রহ আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম তাদের ভোটার তালিকাভুক্ত করতে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি মৃত ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ এবং আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে ভোটার স্থানান্তরের কার্যক্রম পরিচালনা করতে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বিগত বছরগুলোতে যারা ভোটার হয়েছেন, তাদের সঠিকতা যাচাইয়ে কোনো নির্দেশনা নেই মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি। নারী ভোটার নিবন্ধন কম হওয়ার আট কারণ চিহ্নিত করেছেন ইসির কর্মকর্তারা। তালিকায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা নিতে বলা হয়েছ। রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারেন, সেজন্য পাঁচ জেলার ৫৬ উপজেলাকে ‘বিশেষ এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ২ জানুয়ারি প্রকাশিত খসড়া তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জন। দুই বছর পর সারা দেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে যাচ্ছে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চার নির্বাচন কমিশনার আজ সোমবার সাভারে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। সর্বশেষ ২০২২ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ইসি। এবার তথ্য সংগ্রহ করবেন ৫৫ হাজার ১৬ জন তথ্য সংগ্রহকারী। ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত উপজেলাভিত্তিক নির্দিষ্ট কেন্দ্রে নতুন ভোটারদের ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ নেওয়ার মাধ্যমে নিবন্ধন করা হবে। আগামী জুনের মধ্যে এ সংক্রান্ত কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে ইসির। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম আজ শুরুর কথা জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। রোববার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ভোটার তালিকা নিয়ে সন্দেহ দূর করতে আমরা কাজ করছি। আশা করছি সন্দেহ দূর হবে? আমরা ছয় মাসের মধ্যে হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ করার চেষ্টা করব? ভোটার তালিকায় থাকা সবার তথ্য যাচাইয়ের বিষয়ে গত ২ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অবশ্যই চেক করব। আমরা পুরো ভোটার তালিকা চেক করে দেখব। পুরো তালিকা চেক না করলে কীভাবে বুঝব কোনটা সঠিক, কোনটি বেঠিক। তিনি বলেন, আমরা মাঠপর্যায়ে তালিকা প্রকাশ করে দিচ্ছি যাতে সবাই এর ওপর দাবি-আপত্তি উপস্থাপন করতে পারেন। ব্যক্তি ভোটার থেকে শুরু করে এলাকার সচেতন মানুষ এ তালিকার নাম ঠিক আছে, না ঠিক নেই তা যাচাই করতে পারবেন। দ্বিতীয় ধাপে আমরা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর সেটি নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চেক করে দেখব সঠিক আছে কিনা? তিনি বলেন, বাই ডিফল্ট সবার তথ্য যাচাই করা হবে। আমরা যখন বাড়ি বাড়ি যাব, তখন প্রত্যেকটা ভোটার যাচাই করব। আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা এ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে যেসব চিঠি ও পরিপত্র পেয়েছেন, সেখানে কোথাও বিদ্যমান ভোটারদের তথ্য যাচাইয়ের নির্দেশনা নেই। নতুন ভোটার নিবন্ধন, মৃত ভোটার কর্তন এবং ভোটার স্থানান্তরে পৃথক ধরনের ফরম ব্যবহার করা হয়। বিদ্যমান ভোটার যাচাইয়ের জন্য তারা কোনো ধরনের ফরমও পাননি। আগের মতোই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। বিদ্যমান ভোটার যাচাইয়ে তাদের কোনো ধরনের প্রস্তুতিও নেই। নারী ভোটার কম হওয়ার আট কারণ চিহ্নিত : জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার কম যুক্ত হয়েছে। ওইসব বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এর আটটি কারণ চিহ্নিত করেছেন ইসির কর্মকর্তারা। কারণগুলো হচ্ছে-ফি পরিশোধ করে জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহে অনীহা; হিন্দু অবিবাহিত মেয়েদের পিত্রালয়ে নিবন্ধন করতে অনীহা; অবিবাহিত, অনগ্রসর ও নিরক্ষর মেয়েদের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ কম; বাবা বা মা’র জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিতে ব্যর্থ হওয়া; রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র দূরবর্তী হওয়া; আবহাওয়া অনুকূল না থাকা; সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় অজুহাতে ছবি তুলতে অনাগ্রহ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে মহিলাদের সচেতনতার অভাব। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন এক চিঠিতে নারীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে মহিলা জনপ্রতিনিধিদের বেশি বেশি সম্পৃক্ত করতে বলা হয়েছে। একনজরে এবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদ : সূত্র জানায়, এবার হালনাগাদে ৫ শতাংশ নতুন ভোটার যুক্ত হবেন-এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। এই হিসাবে ৫০ থেকে ৬০ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদে রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা ৫২২ জন ও তথ্য সংগ্রহকারী ৫৫ হাজার ১৬ জন। সুপারভাইজার রয়েছেন ১১ হাজার ৮০১ জন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারেন, সেজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার ৫৬ উপজেলাকে ‘বিশেষ এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে ভোটার নিবন্ধনে পৃথক ফরম ব্যবহার করা হবে। গঠন করা হয়েছে বিশেষ কমিটিও। এবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯০ কোটি টাকা। নতুন ভোটার হওয়ার জন্য যা প্রয়োজন : নতুন ভোটার হওয়ার জন্য যেসব কাগজপত্র লাগবে, সেগুলো হচ্ছে-১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মসনদের কপি, জাতীয়তা/নাগরিকত্ব কপি, পিতা-মাতা, ভাই-বোনের এনআইডির ফটোকপি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ এবং ইউটিলিটি বিলের কপি।