হেফাজতে যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যু, ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিতঃ ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫ | ৬:১৩ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

কুমিল্লায় যৌথবাহিনীর হেফাজতে তৌহিদুল ইসলাম নামে যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় ৩১ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে নিহতের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন। বুধবার দুপুরে মামলাটি এফআইআরভুক্ত করা হয়। মামলায় আলোচিত সেই ৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহার নামীয় আসামিরা হলেন- জেলার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর (পান্ডানগর) গ্রামের সাইফুল ইসলাম, নিহত তৌহিদুলের প্রতিবেশী তানজিল উদ্দিন, নাজমুল হাসান টিটু, খাইরুল হাসান মাহফুজ, সাইদুল হাসান সবুজ ও একই উপজেলার বামইল গ্রামের সোহেল। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে- অভিযুক্তদের সঙ্গে তৌহিদুলের পরিবারের জমিসংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশ হয়; কিন্তু বিরোধ শেষ হয়নি। এ নিয়ে তৌহিদুলকে হত্যার হুমকি দেয় আসামিরা। বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে মামলায় অভিযুক্তরা পূর্ববিরোধের জের ধরে ২০-২৫ জন সিভিল পোশাকধারী এবং সেনাবাহিনীর মতো পোশাক পরিহিত লোক বাড়িতে গিয়ে যুবদল নেতা তৌহিদ ও প্রতিবেশী লুৎফুর রহমানকে আটক করে নিয়ে যায়। পরদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একই ব্যক্তিরা আবারও আহত তৌহিদ ও লুৎফুরকে নিয়ে বাড়িতে এসে ঘরে তল্লাশি করে। এ সময় আটক লুৎফুর রহমানকে ছেড়ে দিলেও তৌহিদকে নিয়ে তারা চলে যায়। পরে তারা সংকটাপন্ন অবস্থায় তৌহিদকে গোমতী বাঁধের ঝাঁকুনিপাড়ায় ফেলে যায়। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মামলার বাদী ও তৌহিদুলের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার বলেন, ৪টি শিশুসন্তান নিয়ে আমি বিধবা হলাম। আমার স্বামী পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার। আমরা সরকারের কাছে ন্যায়বিচার চাচ্ছি। মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত দেশের সব মিডিয়াকে কাছে পাব বলে আশা করছি। তৌহিদুলের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ বলেন, যাদের মামলায় আসামি করা হয়েছে এর বাইরেও কেউ কেউ থাকতে পারেন। এখানে রাজনৈতিক কোনো বিষয় আছে কিনা তাও তদন্ত করে পুলিশ বের করবে বলে আশা করি। এদিকে তৌহিদুলের মৃত্যুর ঘটনায় দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। তৌহিদুলের মরদেহের সুরতহালে পুলিশ তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল বলে উল্লেখ করেছে। তৌহিদুল জেলার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি শিপিং কোম্পানিতে চাকরি করত। গত ২৬ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে তার বাবা মারা যাওয়ার খবরে তৌহিদুল বাড়ি এসেছিলেন। মারা যাওয়ার দিন ছিল বাবার কুলখানির আয়োজন। দুই দফায় জানাজা শেষে তাকে বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাকিবুল ইসলাম বলেন, এজাহার পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। যেহেতু এটি একটি সেনসেটিভ ইস্যু, তাই সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, মামলাটি এফআইআরভুক্ত হওয়ার পর থেকেই আমরা তৎপরতা চালাচ্ছি। ঘটনায় সম্পৃক্তদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান চলছে।