ইরানকে নতজানু করার ষড়যন্ত্র করছে ট্রাম্প- এমন অভিযোগ তুললেন তেহরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।
এমনকি তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ইস্যুতে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। সোমবার ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৪৬তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পেজেশকিয়ান বলেন, ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা ইরানের সঙ্গে কথা বলতে চাই’ এবং...তারপর তিনি এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে আমাদের বিপ্লবকে নতজানু করার সব ষড়যন্ত্র অন্তর্ভুক্ত আছে।
মূলত চলতি মাসের শুরুতে ইরানের তেল খাতকে লক্ষ্য করে দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে ইঙ্গিত করে এই কথা বলেন। ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৪৬তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে বিশাল জনসমাগম হয়। বিপুলসংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন এবং অনেকে আমেরিকা ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এ সময় তারা বলতে থাকেন ‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘ইসরাইল নিপাত যাক’। একই স্লোগান শোনা যায় দেশটির বিভিন্ন শহরের র্যালিতে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ইরানের বিরুদ্ধে তার ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি পুনর্বহাল করেন। এই নীতির আওতায় ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তির জন্য প্রস্তুত এবং পেজেশকিয়ানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী। তবে তেহরানের আজাদি (স্বাধীনতা) স্কয়ারে এক বিশাল জনসমাগমে দেওয়া টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে পেজেশকিয়ান প্রশ্ন তোলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় আন্তরিক হতো, তাহলে তারা আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করত না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তেহরান যুদ্ধ চায় না...কিন্তু বিদেশি চাপের কাছে নত হবে না।’ এদিকে, ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দেশব্যাপী সমাবেশের চিত্র প্রচার করে, যেখানে লাখো মানুষকে র্যালিতে অংশ নিতে দেখা যায়। ইরানের ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব এই বিক্ষোভকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসাবে চিত্রিত করেছে। স্লোগানগুলো ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের সময় থেকেই নিয়মিত শোনা যায়। সেই বিপ্লবে মার্কিন সমর্থিত শাহ পরিবার ইরানের শাসনক্ষমতা হারায় শিয়া মুসলিম ধর্মীয় নেতারা ক্ষমতায় আসেন।
এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ইরানে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, যা দেশটির রাজনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। এই প্রেক্ষাপটে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই উত্তেজনাপূর্ণ থেকেছে। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন এই বৈরিতা আরও তীব্র করেছে।
এদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যদি দেশে বর্তমান শাসন কাঠামোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চান, তবে তাকে অবশ্যই পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের ওপর জারি করা ফতোয়া প্রত্যাহার করতে হবে। এমনটাই দাবি করেছেন দেশটির শীর্ষ সামরিক কমান্ডাররা। তবে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান প্রকাশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এক বৈঠকে পেজেশকিয়ান বলেন, ‘যুদ্ধ আমাদের স্বার্থ নয় এবং আমরা পারমাণবিক অস্ত্র চাই না।’ গণমাধ্যমে কট্টরপন্থিদের ইঙ্গিত করে ইরানের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘যারা দাবি করেন, তারা এটি (পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি) করতে চান, তারাও আমাদের সেই পথে ঠেলে দিতে পারবে না।’ একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন খামেনির উপদেষ্টা আলী শামখানি। তিনি বলেন, ‘ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র চায়নি এবং চাইবেও না। তবে ইরান তার আইনি অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে লড়াই করবে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্সিতে প্রত্যাবর্তন তেহরানের জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা। আইআরজিসি কমান্ডাররা মনে করেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।