বন্যা, খরা, ঝড় ও তাপপ্রবাহে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৩ বিলিয়ন বা তিন হাজার কোটি ডলার মূল্যের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। পাশাপাশি এসব দুর্যোগে প্রতিবছর ৬৩ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। বুধবার প্রকাশিত পরিবেশবিষয়ক সংস্থা জার্মানওয়াচের ‘ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স-২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, গত তিন দশকে বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশগুলো চরম আবহাওয়া-সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ভোগ করেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৯৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৯ হাজার ৪০০টির বেশি চরম আবহাওয়া-সংক্রান্ত দুর্যোগে প্রায় ৮ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে; অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৪ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ১৯৯৩ সাল থেকে ডোমিনিকা, চীন ও হন্ডুরাস বন্যা, ঝড় ও তাপপ্রবাহে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ৩১তম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত একটি তীব্র তাপপ্রবাহ পাকিস্তানের নবাবশাহ শহরে ৪৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পৌঁছেছিল, যা ভয়াবহ বন্যার আগে ঘটেছিল। চরম তাপপ্রবাহ ভারত ও বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তিন দেশে ৯০ জনের বেশি মানুষ মারা যান।
জার্মানওয়াচের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কার্যকর অভিযোজন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুর্যোগজনিত মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এটি বৈশ্বিকভাবে একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে। কার্যকর ঝুঁকি প্রতিরোধ ও অভিযোজনের ফলে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়জনিত মৃত্যুহার গত ৪০ বছরে ১০০ গুণের বেশি কমেছে। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে যেখানে ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, ২০০৭ সালে সে সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৩৪-তে।
জার্মানওয়াচের আন্তর্জাতিক জলবায়ু নীতির প্রধান লরা শেফার সতর্ক করে বলেন, জলবায়ু সংকট একটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পরিণত হচ্ছে, যা বহুপাক্ষিক পদক্ষেপের মাধ্যমে মোকাবিলা করা প্রয়োজন। সংস্থাটির জলবায়ু অর্থায়ন ও বিনিয়োগ বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ডেভিড একস্টাইন বলেন, গত ৩০ বছরে ৪ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি জার্মানির মোট জিডিপির সমান। জলবায়ু কর্মসূচিতে দেরি করলে আরও বড় অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।
ব্রাজিলে আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য অতিরিক্ত অর্থায়নের অভাব নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত বলে মনে করেন জার্মানওয়াচের অভিযোজন ও ক্ষয়ক্ষতিবিষয়ক নীতি উপদেষ্টা লিনা আদিল। সংস্থাটির অভিযোজন ও মানবাধিকারবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ভেরা কুনজেল বলেন, চরম আবহাওয়ার কারণে কিছু দেশে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ তাদের মোট জিডিপির চেয়েও বেশি। তিনি জলবায়ু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা ও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি কমানো যায়।