ঈদ ঘিরে চাঙ্গা ইসলামপুর ক্রেতার ভিড়

প্রকাশিতঃ মার্চ ৬, ২০২৫ | ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

পবিত্র রমজান শুরু হতেই দেশের সর্বত্র বইতে শুরু করেছে ঈদের আমেজ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পাইকারি কাপড়ের বাজার ইসলামপুরে এখন ব্যস্ততার শেষ নেই। নতুন পোশাকের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা, ক্রেতাদের আনাগোনায় জমে উঠেছে বাজার। দোকানগুলোতে সারি সারি সাজানো রঙিন কাপড়, নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক আর পাইকারি ক্রেতার ভিড়ে মুখর পুরো এলাকা। ইসলামপুর দেশের বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের বাজার হিসেবে পরিচিত। এখানকার ব্যবসায়ীরা মূলত সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, শাড়ি, লুঙ্গি ও বোরকার কেনাবেচা করেন। তবে দেশি-বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের থান কাপড়, গজ কাপড়, শার্ট-প্যান্টের কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক সামগ্রীও পাওয়া যায় এখানে। মোগল আমলে বাংলার সুবাদার ইসলাম খাঁ চিশতির নামানুসারে ইসলামপুরের নামকরণ হয়। তবে এখানে পাইকারি কাপড়ের ব্যবসা শুরু হয় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়, ১৭৭৩ সালে। তার আগে এই এলাকা ফলের জন্য বিখ্যাত ছিল, বিশেষ করে আমের জন্য। যার কারণে এক সময় এলাকাটির নাম ছিল ‘আমপট্টি’। সে আমপট্টিই পরবর্তী সময়ে রূপ নেয় বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বস্ত্র ব্যবসায়িক কেন্দ্রে। ইসলামপুরের কাপড়ের ব্যবসা একসময় সদরঘাটসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বিক্রমপুর গার্ডেন সিটি, গুলশান আরা সিটি, সাউথ প্লাজা, জাহাঙ্গীর টাওয়ার, চায়না মার্কেটসহ দেড় শতাধিক মার্কেটে পোশাক ও কাপড় বেচাকেনা হয়। এসব মার্কেটে ১০ হাজারের বেশি দোকান রয়েছে। এখানে দেশি-বিদেশি থান কাপড় থেকে শুরু করে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, বাচ্চাদের পোশাক, বিছানার চাদর, পর্দার কাপড় ইত্যাদির বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। এ ছাড়া বোতাম, জিপার, ইলাস্টিকসহ পোশাক তৈরির প্রয়োজনীয় সব উপকরণও পাওয়া যায়। ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন বস্ত্রকল থেকে কাপড় তৈরি করে আনেন। এখানকার অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি বস্ত্রকল মালিকদের নিজস্ব দোকানও রয়েছে। পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তান থেকে কাপড় আমদানি করেন অনেক আমদানিকারক। এ ছাড়া রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার পোশাকও ইসলামপুরে বিক্রি হয়। এখানকার ব্যবসায়ীরা শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিসসহ বিভিন্ন পোশাক দেশীয় বস্ত্রকল থেকে তৈরি করিয়ে আনেন। ঈদ সামনে রেখে ইসলামপুরের আশপাশে ছোট ছোট কারখানাতেও এখন ব্যস্ততা বেড়েছে। ইসলামপুরের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ঈদকেন্দ্রিক তৈরি পোশাকের বেচাকেনা বেশ ভালো হচ্ছে। শবেবরাতের পরের ১৫ দিন বিক্রি জমে ওঠে, আর রোজার শেষের দিকে বেচাকেনা আরও বাড়বে বলে তারা আশা করছেন। রুকু ফেব্রিকসের বিক্রেতা ওয়াহিদ মুরাদ জানান, পাইকারি বিক্রি মূলত রোজার আগেই শুরু হয়, তবে শবেবরাতের পরের ১৫ দিনই ব্যবসার সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। তিনি বলেন, এই সময়টাতেই আমাদের মূল বেচাকেনা হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিক্রি কমতে থাকে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বেচাকেনা আশানুরূপ ভালো হওয়ায় তিনি সন্তুষ্ট বলে জানান। ওয়ান ফ্যাশন প্লাসের বিক্রেতা মো. আকাশ জানান, গত বছর তাদের বিক্রি তুলনামূলক কম ছিল। তবে এবার শবেবরাতের আগ থেকেই পাইকারি বিক্রি শুরু করেছেন। পুরো রমজানজুড়ে বেচাকেনা আরও ভালো হবে বলে আশাবাদী তিনি। ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সদস্য মো. ফরহাদ রানা বলেন, ইসলামপুর দেশের বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের বাজার এবং ব্যবসায়ীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। তবে গত কয়েক বছরে ব্যবসার একটি বড় অংশ মাধবদী ও বাবুরহাটের দিকে সরে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ পুরান ঢাকার যানজট ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তাহীনতা। যানজট সমস্যা সমাধানে এরই মধ্যে ডিসির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, রমজান মাসে ইসলামপুরে যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এবার গত বছরের তুলনায় বিক্রি ভালো হচ্ছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য স্বস্তির বিষয়। প্রতিবছরের মতো এবারও ব্যবসায়ীরা ঈদ কেন্দ্র করে ব্যাপক বিক্রির আশা করছেন। ইসলামপুরের ব্যস্ততা আগামী দিনগুলোতে আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাইকারি ক্রেতাদের পাশাপাশি খুচরা ক্রেতার ভিড়ও বাড়বে ঈদ যত এগিয়ে আসবে। তাই ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, এবারের ঈদ মৌসুমে বিক্রির নতুন রেকর্ড গড়বে ইসলামপুর।