ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে আফ্রিকায় পাঠানোর পরিকল্পনা ফাঁস

প্রকাশিতঃ মার্চ ১৫, ২০২৫ | ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

গাজার ফিলিস্তিনিদের বলপ্রয়োগে উচ্ছেদ করে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে স্থানান্তরের হীন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। সেই সঙ্গে সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে সুদান, সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডের নাম উঠে এসেছে। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা এপি’র এক প্রতিবেদনে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, সুদানের কর্মকর্তারা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে দাবি করেছেন। তবে সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডের কর্মকর্তারা জানান, তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। গোপন কূটনৈতিক যোগাযোগ গোপন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার বিষয়ে কথা বলার শর্তে মার্কিন ও ইসরাইলি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি মার্কিন কর্মকর্তারা সুদানের সঙ্গেও যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ প্রচেষ্টায় কতটা অগ্রগতি হয়েছে বা আলোচনা কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। এই তথ্য এমন এক সময় সামনে এলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখল ও ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদের প্রস্তাব নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ট্রাম্প এক মাস আগে এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তার এই পরিকল্পনাকে ‘জাতিগত নির্মূল’ বলে আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছিল। ইসরাইলের ভূমিকা ও ‘বিকল্প আশ্রয়’ খোঁজার প্রচেষ্টা মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরাইল মূলত এই আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ট্রাম্প ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মধ্যে আলোচনার কয়েকদিন পরই পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়। ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ সম্প্রতি বলেছেন, তারা ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘বিকল্প আশ্রয়’ খুঁজছেন এবং ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘একটি বিশাল অভিবাসন বিভাগ’ খোলার পরিকল্পনা করছে। আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা এদিকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদকে ‘রেড লাইন’ বলে অভিহিত করেছেন দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক তামের কারমৌত। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘বিশ্বের সব সরকারের উচিত এই অমানবিক পরিকল্পনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং ইসরায়েলের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো ধরনের সহযোগিতায় না যাওয়া। বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলো, যেগুলো এখনো ঔপনিবেশিক শাসনের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেরিয়ে আসতে লড়াই করছে’। তিনি বলেন, ‘সুদান ও সোমালিয়া এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত। এখন আবার ইসরাইল এই অঞ্চলকে নতুন সংকটে ফেলতে চায়’। কূটনৈতিক প্রস্তাব ও প্রত্যাখ্যান এদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, ‘সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের বিনিময়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে’। তবে সোমালিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দিরাহমান দাহির আদান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা এ ধরনের কোনো প্রস্তাব পাইনি এবং ফিলিস্তিনিদের নিয়ে কারো সঙ্গে কোনো আলোচনাও হয়নি’। অন্যদিকে সুদানের দুই সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন তাদের সামরিক সহায়তা এবং যুদ্ধ পরবর্তী পুনর্গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে সুদান সরকার এটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে’। ‘গোপন এজেন্ডা’র আশঙ্কা এদিকে নাইরোবিভিত্তিক আইনজীবী ও সংঘাত গবেষক সাম্বু চেপকোরির এপি-কে বলেছেন, ‘সোমালিয়ার দীর্ঘদিনের নীতি হলো ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে থাকা। তাহলে কেন তারা হঠাৎ করে এই প্রস্তাব গ্রহণ করবে? এখানে নিশ্চয়ই একটি গোপন এজেন্ডা কাজ করছে’। তবে যেটাই হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের এই পরিকল্পনা বিশ্বব্যাপী নিন্দার মুখে পড়তে পারে। বিশেষত আফ্রিকার দেশগুলো, যেগুলো নিজেরাই যুদ্ধ ও সংকটের শিকার, তাদের ওপর নতুন করে চাপ প্রয়োগ করা একটি অমানবিক ও কূটনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে।