স্বজনের মনমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক আয়োজনে মন ছুঁয়ে যায় দর্শকদের

প্রকাশিতঃ এপ্রিল ১৬, ২০২৫ | ৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ঈদের কিছুদিন পরের সন্ধ্যা। আকাশে তখনো ঈদের চাঁদের রেশ। এরই সঙ্গে যোগ হয়েছে বর্ষ বিদায় ও বরণের আমেজ। শহুরে কোলাহল থেকে খানিক দূরে, নদী ও পাহাড়ঘেরা রাঙ্গুনিয়ার সৈয়দবাড়ি বিসিসিউএল সমবায় মার্কেট চত্বর যেন পরিণত হয়েছিল এক টুকরো সংস্কৃতির আলোকোজ্জ্বল মঞ্চে। নাচ—গান, আবৃত্তি আর হাসিমুখে মিশে যাওয়া শত মানুষের পদচারণায় শনিবার রাতটা হয়ে উঠেছিল ভিন্নরকম। ‘স্বজন সমাবেশ’ এর আয়োজনে ও রাঙ্গুনিয়া প্রেস ক্লাব এর সহযোগিতায় বর্ষ বিদায় ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান যেন ছিল রাঙ্গুনিয়ার সংস্কৃতিমনা মানুষের প্রাণের উৎসব। এই মিলনমেলা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নয়, এটি ছিল এক মানবিক—সাংস্কৃতিক বার্তার বহিঃপ্রকাশ যেখানে শিল্প, সাহিত্য ও সাংবাদিকতা এক মোহনায় এসে মিলেছে। ঈদের পরপরই এমন আয়োজন—যেখানে স্থানীয় প্রতিভার সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীরাও। কণ্ঠে ছিল আবেগ, ছন্দে ছিল উচ্ছ্বাস, চোখে ছিল ভালোবাসা। বেতার শিল্পী ফুলকি বড়ুয়ার কণ্ঠে গাওয়া গান, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অপ্সরী বড়ুয়া ফ্লোরার পরিবেশনা এবং উদীয়মান কণ্ঠশিল্পী সমৃদ্ধি হালদার স্নেহা, দীপ্তাক্ষী শর্মা কৌশিকী, মো. খুদরাত নীল—এর মন ছুঁয়ে যাওয়া গানে দর্শকেরা হারিয়ে যান আনন্দের জগতে। নৃত্য পরিবেশন করেন জাতীয় মানের শিল্পী সৃজনা বড়ুয়া, আবৃত্তি করেন জান্নাতুল তামান্না, আফতাবী হোসাইন মুসকান, নাজাত হোসাইন মেহরিন—যাদের অনবদ্য পরিবেশনায় প্রাণ পায় বাংলা ভাষা ও সংষ্কৃতি। অনুষ্ঠানের যন্ত্রসংগীতায়োজনে ছিলেন ঝুলন দত্ত, দুর্জয় দাশ, মান্না বড়ুয়া, শিবলু, শিবু, কিশানসহ একদল মেধাবী যন্ত্রশিল্পী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. নুরুল আমিন। উদ্বোধক ছিলেন রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (শিশুরোগ) ডা. এম এ মোরশেদ। সভাপতিত্ব করেন রাঙ্গুনিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. ইলিয়াছ তালুকদার। প্রধান বক্তা ছিলেন স্বজন সমাবেশ রাঙ্গুনিয়ার সভাপতি সনজীব সুশীল, বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন হালদার, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসান, ফায়ার সার্ভিসের রাঙ্গুনিয়া স্টেশন ইনচার্জ জাহেদুর রহমান, দ্যা ড্রিম সিটি স্পোর্টস জোন এর চেয়ারম্যান মো. ইফতিখার রাজ, প্রবাসী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক মো. মোকারম হোসেন, সমাজসেবক ও সংগঠক আবু বক্কর। সঞ্চালনায় ছিলেন রাঙ্গুনিয়া প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল আবছার চৌধুরী, শিক্ষক সুবর্ণা বড়ুয়া ও প্রতিনিধি আব্বাস হোসাইন আফতাব। উপস্থিত ছিলেন সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, সমাজসেবক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ নানা পেশার প্রতিনিধি। তারা সবাই এই আয়োজনকে ‘রাঙ্গুনিয়ার সংস্কৃতিচর্চার জীবন্ত প্রমাণ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই ঈদ পুনর্মিলনী ও বর্ষবিদায় অনুষ্ঠান ছিল কেবল একটি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা নয়, বরং এটি ছিল এক আন্তরিক বার্তা—‘ঈদের আনন্দ সবার জন্য’। আয়োজনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, রাঙ্গুনিয়ায় সংস্কৃতির শিকড় এখনো গভীরে, এবং তরুণ প্রজন্মও সেই ঐতিহ্য ধারণে আগ্রহী। শিক্ষক, সাংবাদিক, সমাজসেবা ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বে ছিলেন মো. ইউনুফ, মো. আবু সায়েম, রহিম উদ্দিন সিকদার, মুক্তি সাধন বড়ুয়া,কবির হোসেন, আজগর আলী খাঁন, কাজী মোশাররফ, আকাশ আহমেদ, শান্তি রঞ্জন চাকমা, জগলুল হুদা, আইয়ুব চৌধুরী, হাবীবুল্লাহ মিসবাহ্, আরিফুল হাসনাত, জাহেদ হাছান তালুকদার, ফাহিম শাহরিয়ার, দেলোয়ার হোসেন, সানজিদা লিজা, নেজামুল হক সায়েম, অর্পণ বড়ুয়া, সৌরভ সাহা, সৌমিত্র প্রসাদ পিন্টুসহ আরও অনেকে। আয়োজনে প্রাণ দিয়েছে স্বজন সমাবেশের শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক, সংগঠক, সদস্য ও সংবাদকর্মী। অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ছিলেন স্বজন সমাবেশ রাঙ্গুনিয়ার সাংষ্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক তবলা বাদক রানা বড়ুয়া, সদস্য সচিব সেতুল মির্জা। উপস্থিত ছিলেন স্বজন সমাবেশ রাঙ্গুনিয়ার সহ—সভাপতি শিক্ষক মো. শাহ আলম, যুগ্ম সম্পাদক মো. ইদ্রিস, প্রচার সম্পাদক তাহসান খান ইমন, অর্থ সম্পাদক মোরশেদুর রহমান, সহ অর্থ সম্পাদক মুবিন উদ্দিনসহ আরো অনেক স্বজন। আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার ছিল পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া পত্রিকা। তাদের উপস্থিতি ও প্রচারে অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য্য ও গুরুত্ব আরও বিস্তৃত হয়ে পৌঁছায় বৃহত্তর দর্শক ও পাঠকের কাছে। ঈদ মানে শুধু খুশি বা আত্মীয়ের সঙ্গে মিলন নয়, ঈদ হতে পারে সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ, ভালোবাসার বিনিময় আর মনের মিলনের এক পরিপূর্ণ উপলক্ষ। রাঙ্গুনিয়ার ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান সেই সত্যকেই আবার প্রমাণ করে দিল। এই আয়োজন শুধু একটি রাতের স্মৃতি হয়ে থাকছে না, বরং হয়ে থাকছে রাঙ্গুনিয়ার সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রার অন্যতম মাইলফলক।